Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
মর্নিং কনসাল্ট প্রোর জরিপ

৬০ শতাংশ ভোটার বাইডেনের বিকল্প প্রার্থী চান

৬০ শতাংশ ভোটার বাইডেনের বিকল্প প্রার্থী চান ছবি সংগৃহীত
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিকল্প প্রার্থী চান। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাইডেন ও রিপাকলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের বিতর্কের পর মর্নিং কনসাল্ট প্রো পরিচালিত এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গত শুক্রবার জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সিএনএন টেলিভিশনে বিতর্ক অনুষ্ঠানে বাজে পারফরম্যান্সের পর জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পর্ষদ। এক বিবৃতিতে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পর্ষদ বলেছে, জনগণের সেবক হিসেবে বৃহস্পতিবার (বিতর্ক) প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, তিনি তার ছায়ায় ছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে কী কী কাজ করবেন, সেসবের ব্যাখ্যা দিতে তাকে লড়াই করতে হয়েছে। ট্রাম্পের উসকানিমূলক বক্তব্যের জবাব দিতেও হিমশিম খেয়েছেন। মিথ্যা তথ্য, ব্যর্থতা এবং ব্যর্থ পরিকল্পনাগুলো নিয়ে ট্রাম্পের জবাবদিহি আদায় করতেও হিমশিম খেয়েছেন। একাধিকবার তিনি বাক্যও শেষ করতে পারেননি। জনগণের সর্বোচ্চ সেবক বাইডেন এখন ঘোষণা দিতে পারেন, তিনি আর নির্বাচন করবেন না।

বাইডেনের এক শীর্ষ তহবিল জোগানদাতা তো বলেই ফেলেছেন, প্রেসিডেন্ট অযোগ্য প্রমাণিত হয়েছেন। আগস্টে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে বাইডেনের ভোটের লড়াই থেকে সরে যেতে নতুন করে আহ্বান জানানো হবে বলে তিনি আশা করছেন।

এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সম্ভাবনাময় তিন ডেমোক্রেটিক প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ তিন উপদেষ্টা বলেছেন, বিতর্ক চলার পুরো সময়টাতেই তাদের কাছে টেক্সট মেসেজের বন্যা বয়ে গেছে। এক উপদেষ্টা বলেন, তারা তাদের প্রার্থীকে বাইডেনের বিকল্প হিসেবে সামনে আনার অসংখ্য অনুরোধ পেয়েছেন। বাইডেনের বিকল্প হিসেবে আলোচনায় এসেছে সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার নামও।

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে শেষ হয়েছে সিএনএন আয়োজিত বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রথম টেলিভিশন বিতর্ক। এতে অংশ নিয়ে বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন ইস্যুতে একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলার সময় তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড ও ব্যাপকসংখ্যক অভিবাসীর বিষয়ে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন। অন্যদিকে আদালতে সম্প্রতি ট্রাম্পের সাজার প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্পকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।

তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের যারা মনোযোগ দিয়ে বিতর্ক দেখেছেন, তারা অনেকেই বলেছেন, বিতর্কে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। এ কারণেই বাইডেনের ভোটের ভবিষ্যৎ পড়েছে হুমকিতে।

এর মধ্যে মর্নিং কনসাল্ট প্রো পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, যে ৬০ শতাংশ ভোটার বাইডেনের বিকল্প প্রেসিডেন্ট প্রার্থী চান, তারা দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশ ‘নিশ্চিতভাবে’ বাইডেনের বিকল্প চায়। আরেকটা অংশ ‘সম্ভবত’ তার বিকল্প হলে ভালো হবে এমন মত দিয়েছে। তবে এই দুই ভাগের মধ্যে কোনটি কত শতাংশ, তা জরিপের ফলে উল্লেখ করা হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে এই জরিপ চালিয়েছে। এতে ২ হাজার ৬৮ নিবন্ধিত ভোটার অংশ নিয়েছেন। অবশ্য জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।

মর্নিং কনসাল্ট প্রোর জরিপে দেখা যায়, বৃহস্পতিবারের বিতর্কটি যারা দেখেছেন, তাদের ৫৭ শতাংশ মনে করেন, বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প বিতর্কে ভালো করেছেন। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থক, ৬০ শতাংশ নিরপেক্ষ এবং বাকিরা রিপাবলিকান।

জরিপে অংশগ্রহণকরী ২১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পদ থেকে সরানো ‘অবশ্যই উচিত নয়’ বলে মত দিয়েছেন। আর ২০ শতাংশ বলেছেন, তাকে সরানো ‘সম্ভবত উচিত নয়’।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে আরেকটি প্রশ্ন ছিল, তারা কাকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান? এ প্রশ্নের জবাবে ৪৫ শতাংশ বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেয়েছেন। আর ৪৪ শতাংশ চেয়েছেন ট্রাম্পকে।

বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারের মুখপাত্র সেথ শুস্টার মর্নিং কনসাল্টের জরিপ ফল উপস্থাপনার (ফ্রেমিং) সমালোচনা করেছেন। বাইডেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার পদ থেকে সরবেন না বলেও মন্তব্য করেছেন।

সাধারণ ভোটারদের একটা অংশের মতো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলল দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক বোর্ড। সংবাদপত্রটির সম্পাদকীয় পর্ষদ বলছে, ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব এখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শক্ত এবং উদ্যমী কাউকে খুঁজতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও বাইডেনের যেসব ঘাটতি রয়েছে, তার মধ্য থেকে একটিকে বেছে নিতে ভোটারদের বাধ্য করে দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলার কোনো কারণ নেই। আমেরিকানরা বাইডেনের বয়স এবং দুর্বলতাকে উপেক্ষা করবে বা ছাড় দেবে, এমন আশা করাটাও বড় ধরনের জুয়া হয়ে যাবে।

অবশ্য দুই প্রার্থীর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বাইডেনকেই দ্ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন দেওয়ার কথাও বলেছে পর্ষদ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প ও বাইডেন দুজনেরই দুর্বলতার জায়গা থাকলেও ভোটারদের যেকোনো একদিকে আপস করতে হবে। ডেমোক্রেটিক পার্টির উচিত হবে না ভোটারদের এভাবে দোটানায় ফেলে দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলা। আমেরিকানরা বাইডেনের বয়স এবং স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো উপেক্ষা করবে বা অবজ্ঞা করবে এমন আশা করাও হবে খুব ঝুঁকিপূর্ণ ও বোকামি।

বিতর্কের আগে অনেক মার্কিনি জো বাইডেনের বয়স ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। বিতর্ক শেষে সেই উদ্বেগ আরও জোরালো হয়েছে। কথা বলার সময় বাইডেনকে অপ্রস্তুত মনে হচ্ছিল, তিনি অস্পষ্টভাবে কথা বলছিলেন এবং মাঝে মাঝে বিড়বিড় করছিলেন।

চলতি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবশ্য খারাপ ছিলেন না বাইডেন। ট্রাম্প প্রশাসনের করে যাওয়া ক্ষতিগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু বাইডেন এখন সবথেকে বড় যে জনসেবা করতে পারেন তা হলো, ঘোষণা দেওয়া যে তিনি পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই নির্বাচন অনেকখানি ঝুঁকি নিয়েই খেলছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। অন্যান্য ডেমোক্রেটিক নেতা ট্রাম্পের বিপরীতে প্রেসিডেন্সির জন্য স্পষ্ট, শক্তিশালী এবং শক্তিশালী বিকল্প প্রস্তাব করতে এক পায়ে খাড়া। সত্যি কথা হলো, ট্রাম্পকে মোকাবিলা করার জন্য বাইডেনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও শক্তিশালী প্রার্থী দরকার।

তবে বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে খুব সহজে সরে দাঁড়াবেন না, কারণ তিনি সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এসেছেন। সিএনএনের জ্যেষ্ঠ হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা কায়লা তাউসে শুক্রবার এক উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, জো বাইডেন আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের মঞ্চে ফিরবেন।

গত শুক্রবার নর্থ ক্যারোলাইনায় নির্বাচনী প্রচারে জো বাইডেন স্বীকার করেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে তিনি ভালো করতে পারেননি। তিনি যে বয়সেও তরুণ নন, সেটিও স্বীকার করেছেন। তবে পরিষ্কার করে বাইডেন এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনী দৌড় থেকে তার সরে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স