Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
৮ জনের মৃত্যু : হিট অ্যালার্ট

২৭ স্টেটে বইছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ

২৭ স্টেটে বইছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ
যুক্তরাষ্ট্রের ২৭টি স্টেটে বইছে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ। অন্তত ১০ কোটি মানুষ রোববার তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতায় ছিল। দেশটিতে তীব্র তাপপ্রবাহ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গার তাপমাত্রা এরই মধ্যে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। 
এতে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, অনেক জায়গায় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) অতিক্রম করেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অনেক অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। চলমান তাপপ্রবাহে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
এই অবস্থায় একটু স্বস্তির আশায় মানুষ ভিড় করছে শহরের বিভিন্ন পুল ও স্পø্যাশ প্যাডগুলোতে। 
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, আই-নাইনটি ফাইভ করিডরে বেশির ভাগ অঞ্চলই অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাল্টিমোর শহরে গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন ছিল শনিবার। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় সেদিন শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত ওঠে। ফিলাডেলফিয়ার তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। ওয়াশিংটনের বাতাস এতই গরম যে মানুষের নিশ^াস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহ থেকে লাসভেগাস ও ফিনিক্সে তাপমাত্রা ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস। ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েক জায়গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠতে পারে।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফায়ার ফাইটারদের। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের গ্রীষ্ম আরও বেশি শুষ্ক হবে, এতে দাবানলের ঝুঁকি অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে মধ্য-আটলান্টিক থেকে মিসিসিপি উপত্যকায় চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দৈনিক গড় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে ওকলাহোমা, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও বালল্টিমোরসহ বিভিন্ন এলাকায়। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেক আগে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। স্থায়িত্বও হবে বেশিদিন।
এ পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ফিলাডেলফিয়ায় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। আইডাহো, মন্টানা এবং ওয়াইমিং অঙ্গরাজ্যের তাপমাত্রাও একই রকম থাকার সম্ভাবনা প্রবল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ১৫ ডিগ্রি বেশি। 
ফিলাডেলফিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদ মার্ক চেনার্ড বলেন, আগামী মাসে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে ওহিও উপত্যকা, গ্রেট লেক ও নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে এলেও ভার্জিনিয়া থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত তাপমাত্রা আবার বেড়ে যাচ্ছে।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর গোলার্ধজুড়ে বিপজ্জনক তাপপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। আগামী কয়েক দশক ধরে আবহাওয়া এমন চরম ভাবাপন্ন থাকতে পারে।
এদিকে এশিয়া ও ইউরোপজুড়েও তীব্র তাপপ্রবাহে শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া পবিত্র হজের সময় সৌদি আরবে তীব্র গরমে ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে দাবানলে রবিবার দুই জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১ হাজার ৪০০টির বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। এ ছাড়া রুইডোসো গ্রামের আশপাশে ২৫ হাজার একর জমি পুড়ে গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। কিছু জায়গায় ৮৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 
দেশটির ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাউথ মিনেসোটা, সাউথ ডাকোটা ও আইওয়া। ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক বাড়িঘর। সাউথ ডাকোটায় ১ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। অন্তত ২১ কাউন্টিতে জারি হয়েছে জরুরি দুর্যোগকালীন অবস্থা। আইওয়া অঙ্গরাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা দেখা দেওয়ায় দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থা জারি করেছেন রাজ্যের গভর্নর কিম রেনল্ডস।
বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন, এবারের গ্রীষ্মটি ২০২৩ সালের তুলনায় কিছুটা শীতল হতে পারে। ২০০০ বছরের মধ্যে উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে উষ্ণ ছিল ২০২৩ সালের গ্রীষ্ম।
কিন্তু ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার সাথে সাথে মারাত্মক অশুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সিনিয়র বিজ্ঞানী মাইকেল ম্যাকফ্যাডেন বলেন, ‘গত ৩ মিলিয়ন বছরে আমরা সর্বোচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব পেয়েছি। কার্বন ডাই অক্সাইড তাপ আটকে রাখে, তাই গ্রহের তাপমাত্রা বাড়ছে। এটি সত্যিকারের সহজ পদার্থবিদ্যা।’
সপ্তাহজুড়ে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ অংশজুড়ে ‘অসাধারণ’ অবস্থা পাওয়া যেতে পারে। ক্রমবর্ধমান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চাহিদা আলবেনিয়া ও কুয়েতে পাওয়ার গ্রিড বিকল করে দিয়েছে। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, গত সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে ১,৪০০ টিরও বেশি উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে।
 

কমেন্ট বক্স