হাসি। বসে বসে ভাবি আর অকারণে হাসি। এ হাসি যে অনেক যন্ত্রণার! ফিরে তাকাই পেছনে। ফেলে এসেছি সমুদ্র, নদী-পাহাড়, মনোরম পরিবেশ। সামনে তাকাই, গভীর অন্ধকার। এই অন্ধকার থেকে বেরোনোর পথ নাইরে আর!
দিনের প্রথম চাঁদ দেবতার অশ্রুকণা ঘাসের মাঝ দিয়ে করতাম খেলা! মা বলতেন, শিশিরে পা যে তোর ঠান্ডা। মাকে বলতাম, বকুনি দিয়ো না, স্নিগ্ধ সকালে ধরণির বুকে সূর্যমামার রক্তিম আলো মুছে দেবে ঘাসের শিশির। রোদের তাপে ঘাসগুলো শুকিয়ে যাবে আমার মতন।
মা, তুমিও তো আমারই মতো বড় হয়েছ আদরে। তুমি ছোটবেলার কথা ভাবো, কোথায় হারিয়ে গেল সোনাঝরা দিনগুলো। হারিয়ে গেল শৈশব! ছোট্ট তুমি কবে যে বড় হয়ে কৈশোর পার হয়ে যৌবন এল তোমার দুয়ারে। তুমি বুঝেছিলে পুতুল খেলার দিন শেষ। তুমি হলে বধূ। বাবা কেবল ভাবেন, মেয়ে বিয়ে দিতে হবে, ও যে বড় হয়ে গেল। মা তাকিয়ে থাকলেন।
মা-বাবা ভাবতে থাকেন, স্বামীর ঘরে সুখে-দুঃখে কেটে যাবে ওর জীবন। বাবা-মা কখনো জানতে চেয়েছেন, না, তুমি জানতে দাওনি? কীভাবে জীবন শুরু হলো! আমরা নারীরা অসম্ভব প্রবল মমতাময় আর বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে জন্মাই। নিজের সংসারের সমস্ত কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিই। স্বেচ্ছায় হাসিমুখে স্বামী কিংবা পরিবারের সদস্যদের আরাম-আয়েশে রাখতে ভালোবাসি। দিনগুলো ভালোই কাটছিল।
তুমি বুঝতে পারলে সন্তানসম্ভবা, মাতৃত্বের স্বাদ পেলে। মনে মনে ভাবোÑছেলে হোক বা মেয়ে-সে যে আমার বুকের মানিক! তুমি মনের সুখে চিন্তায় ঘুম পাড়াতে : ‘আয় ঘুম আয়, সোনামণির চোখে।’
রাজপুত্র জামাই আনব, চাঁদের দেশের পরি আনব বউ করে! এভাবে মনের আনন্দে সন্তানদের বড় করতে থাকো। সুখ খুঁজে পাও মা ডাক শুনে। অনেক বছর কেটে গেল, তাই না?
তোমার খুকি তোমার স্নেহে তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমায়। তুমি মাথায় বিলি কাটো আর ভাবো, একদিন তুলে দিতে হবে ভিন দেশের কোনো এক রাজপুত্রের হাতে!
কলেজ থেকে বাসায় এসেছি। মায়ের মুখটা বেশ খুশি খুশি লাগছে! বারান্দায় বসে আছি, মা এলেন। মাকে বলি, কিছু বলবে?
মা বাঁকা হাসি দিয়ে বলেন, তোর সঙ্গে কথা বলতে চাই। তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে।
কী বলো, মা? মাত্র আমি কলেজে পা দিলাম। এখনই তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিতে চাও? একই বৃন্তে ছয়টি ফুল হয়ে ফুটে আছি, আমি থাকব না!
মা রে, মেয়ে হয়ে জন্মালে তাকে তো পরের ঘরে যেতেই হয়।
আমার যে হারিয়ে যাবে সোনালি বিকেল, মা! আমার আনন্দময় শৈশব! তুমি কি আমাকে পর করে দিতে চাও! এখনো আমার অনেক কিছু শেখার আছে। আমাকে পর করে দিয়ো না।
এমন কথা কেন ভাবো? সন্তান কখনো পর হয় না। তুতুল, আমরা নারী, আমাদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে।
মা, নারী কি সত্যিই রহস্যের উৎস? নাকি নারীরা ছদ্মবেশী খোদ প্রকৃতির রহস্যময়ী, না যৌন আনন্দের, না ভোগবিলাসী?
নারী-মা হওয়াই প্রধান পরিচয়। বিশ্ব পৃথিবীতে সব নারীই এক সুতোয় বাঁধা।
মা, তুমি আমাকে যার হাতে তুলে দেবে, সে কেমন হবে?
তুতুল, সে তোমার ভাগ্য। বাইরে থেকে কাউকে চেনা যায়? তোমাকে তোমার ভাগ্য গড়ে নিতে হবে। স্বামী-স্ত্রী জনম-জনম সাথি। স্বামীকে ভালোবাসতে হবে। মেয়েরা যেমন চায় স্বামী একটু ভালোবাসুক, আদর-যত্ন, দু’বাহু দিয়ে পৃথিবীর সব দুঃখ-কষ্ট, ধুলো-বালি থেকে ঢেকে রাখুক। স্বামীরাও চায় কর্মব্যস্ততার পর বাড়ি ফিরে স্ত্রী তার ক্লান্তি মমতাময় হাসি দিয়ে ভরিয়ে দেবে।
মাগো, সম্পর্কের উষ্ণতাই ভালোবাসার প্রদীপ জ্বেলে পেতে হয়। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট। আমরা জন্মভীতু বলেই সুখ নয়, সুখকে কল্পনায় বেঁচে থাকতে ভালোবেসে এসেছি। কোনো বুদ্ধিমতী মেয়ে ঘর ভাঙতে চায় না। আমার বিয়ে হলেই আমি ঝরে যাব তোমাদের কাছে। তুমি বুকের মাঝে নিয়ে বলেছ-সন্তান বাবা-মায়ের কাছে ঝরে পড়ে না। বুকের মাঝেই থাকে, থাকবে।
অনেক দিন হয়ে গেল পরের ঘরের ঘরনি হয়ে এলাম। যার হাত ধরে পা বাড়াই, মানুষটা খারাপ নয়। কখনো অবহেলা বা অসম্মান করেনি। আমার দুবার গর্ভপাত হয়েছিল। ডা. ফাতিমা বলেছিল, পরবর্তী গর্ভধারণের জন্য অনুকূল নয়। সেদিন রাতুল বলেছিল, মঞ্জরি না-ইবা হলো, তুমি আমার আম্রপলি! শুনে আমার গায়ে কাঁটা দিয়েছিল।
সন্তানের বাবা ডাক শুনবে না, জেনেও ওর মনে উত্তাপ নেই। সে শুধু আমাকে অবলম্বন করে শাখা-প্রশাখা ছেড়ে দেয়। নিজেকে নির্ভর করে আমাকে। অনেক পরে আমি সন্তানের মা হয়েছি। আমার সন্তান বায়না করে বড় হয়েছে। ওরা অনেক বায়না করে।
মা, আজ বেশি বেশি মনে পড়ে তোমাকে, ছেলেমেয়েদের বায়না মেটাতে গিয়ে। তোমার কাছে বায়না করলে বলতে অসম্ভব। মুখ ভার করে আসতাম। মনে মনে বলতাম, কেমন মা, না আর না। এখন বুঝি, সন্তান কিছু চাইলে দিতে না পারলে কতটা কষ্ট হয়। তুমি কষ্টটাকে বুকে চেপে রাখতে। সীমিত আয়ের সংসার ছিল, তুমি আমাদের দিতে পারোনি। আমি দিতে পারি, আমার অভাব নেই। ভাবি তোমার মনের ব্যথা।
রাতুল বলত, ওদের বারণ করো কেন? আমি বলতাম, চাইলেই দিতে হয় না। না পাওয়ার কষ্ট বুঝুক।
সন্তানেরা সবাই বড় হয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে, ছেলেরাও বউ এনেছে। জমজমাট সংসার। সুখেই দিন কাটছিল। আমার সুখ যে হারিয়ে যাবে, কল্পনায়ও ভাবিনি। আচমকা ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল আমার জীবন। রাতুল অসুস্থ হয়। কত চিকিৎসা করাই। তবু রাতুলকে হারিয়ে ফেলি। অমানিশার অন্ধকার আমার!
রাতুল মারা গেল। ছেলেমেয়েরা এল বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে। তখন সবার মনে প্রশ্নÑবাবার সঞ্চয় কি কিছু আছে? মুখে প্রশ্ন করেনি, মনের মধ্যে ছিল।
৪০ দিন পার করে বড় মেয়ে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে এল ওর কাছে। মেয়ের কাছে থাকি আর ভাবিÑকীভাবে কাটবে?
রাতুল আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনি, এখন কীভাবে আছে! আমাকে বলত, তুমি কিছুই জানতে চাওনি। এখন সব বুঝে নাও। আমি বলতাম, তুমি আছ। তবু বুঝে নাও। যদি কিছু থাকে, থাকবে। ও মনে কষ্ট পাবে বলে বলিনি। শুধু বলেছিলাম, আমিও নাও থাকতে পারি। ও বলেছিল, তাহলে আমি সুইসাইড করব। তুমি ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই আল্লাহ আমার কাছ থেকে ওকে নিয়ে গেল। আমি তো বেঁচে আছি! ভাগ্যের কী পরিহাস, এক এক করে অনেক বছর কেটে গেল।
আমার সম্বল দুটি ব্যাগ। সবার কাছে ঘুরে বেড়াই। রাতুলের কথা মনে পড়ে। আমায় নিয়ে বেড়াতে ভালোবাসত। এখন আমি নিজেই পথে পা বাড়াই। কী অদ্ভুত জীবন! বড় মেয়ের বাসা থেকে ছোট মেয়ের বাসায় যাব, এয়ারপোর্টে বসে আছি। কী কারণে যেন প্লেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে। এর মধ্যে এক মহিলা এলেন। উনি এক মেয়ের কাছ থেকে আরেক মেয়ের কাছে যাচ্ছেন। আমার পাশে বসে ছিলেন।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথায় যাবেন?
ছোট মেয়ের বাসায়।
এখানেই থাকেন?
আমি বড় মেয়ের কাছ থেকে ছোট মেয়ের কাছে যাচ্ছি।
আপনার স্বামী আসেনি?
তিনি নেই।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি বুঝি আমার মতো ভাগ্যের!
উত্তরে বলি, যেমন আমি তিন নম্বর মেয়ের কাছ থেকে চার নম্বর মেয়ের কাছে। এখন কোন সন্তান বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখতে চায়?
আমি বলি, আপনার ক’জন সন্তান?
উনি বলেন, ছয় সন্তানের মা। স্বামীর মৃত্যুর অনেক দিন হয়ে গেল। ভাইবোন একসঙ্গে এল। সকালে নাশতা খেয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আমাকে ডাকে। বসতে বললে বসি।
বড় মেয়ে আমাকে প্রশ্ন করে, বাবা আমাদের জন্য কি সঞ্চয় রেখে গেছেন?
বলি, তোমাদের কাছে রেখে গেছেন আমাকে। তোমার বাবা চাকরিজীবী ছিলেন। সেই বেতনের টাকা দিয়ে তোমাদের লেখাপড়া, বিয়েশাদি দিয়েছি।
সন্তানেরা বলে, সেটা তোমাদের দায়িত্ব ছিল।
আমি বলি, তোমাদের জন্য সঞ্চয় রাখতে পারতাম, যদি লেখাপড়া না শিখিয়ে কোনো ড্রাইভারের কাছে তুলে দিতাম কিংবা কোনো দোকানদারের কাছে! তোমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা নিজেদের জীবনের সব আনন্দ বিসর্জন দিয়েছি। উপযুক্ত করে ছেলেদের হাতে তুলে দিয়েছি। বিদেশে পাড়ি দিয়েছ। ছেলেদের বলি, তুমি ডাক্তার, তুমি ইঞ্জিনিয়ার কী করে হলে? প্রফিডেন্টের টাকা ছাড়াও ধার করতে হয়েছে। তোমাদের বুঝতে দিইনি।
আমি যখন বলতাম, তুমি নিজেও নিঃস্ব, আমাকেও নিঃস্ব করে রেখে যাবে। তিনি হেসে বলতেন, ছয়টা সঞ্চয়ের সন্তান-ভান্ডার আছে। তোমরা সঞ্চয়ের কথা জানতে চাও?
ছোট জামাই বলে, মা তো সত্যি কথা বলেছেন। এখন মায়ের ভার আমার। আরেক জামাই বলে, আমরা বাদ যাব কেন।
আমি বিধবা হলাম। পরে বড় মেয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিল। এখনো ওর কাছেই থাকি। সবাই বোনের বাসায় এসেছে, তখন আমাকে নিয়ে কথা ওঠে। বড় জামাই বলে, মা তো এখন সবার। মাকে নিয়ে কথা হবে না। কোনো সময় আমাকে না দেখলে বলত, আম্মা কোথায়? ওদের কাছে থাকি। আমার ডাক্তার, দেখাশোনা মেয়েজামাই, নাতনি করে। আমার জামাই কখনো কোনো কটু কথা বলেনি। এখানেই মনের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে আমার নাতনি আমাকে অনেক ভালোবাসে। সেটা মেয়ের কারণেই, সবই বুঝি, বলতে পারি না।
আপনি আপনার জামাই-মেয়ে-নাতনির কথা বললেন। তবে আমার জামাইরাও খারাপ না। তা না হলে আমাকে পরগাছা না ভেবে কাছে টেনে নিত! জামাইরা ভালো জানে, মান্য করে। মেয়েরা হাতে মারে না, মুখে মারে। এরই নাম জীবন।
আরেক মহিলা বলে ওঠেন, মাদের ভাগ্য অনেক খারাপ। পৃথিবীতে সব মা-ই অবহেলিত। আমার মেয়ে নেই, চার ছেলে। আমি একেক ছেলের কাছে থাকি, আর তাদের দিকে তাকিয়ে বলি, এই হাতে ছেলেদের মানুষ করেছি, একই হাত দিয়ে চারজনকে খাইয়েছি। আজ আমার থালা চার বাড়ি। বিধাতার কী পরিহাস!
ছেলেদের কিছু বলেননি?
বলেছিলাম। বলে, তোমাদের আনন্দের ফসল আমরা। কেন তোমাদের ভার বইতে যাব?
তোদের বড় করেছি, লেখাপড়া শিখিয়েছি। হ্যাঁ, তবে আমরা কি খুব সুখ-সুবিধার মধ্যে বড় হয়েছি। তোদের বাবা স্বল্প আয়ের কাজ করতেন। তার মধ্যেই তোদের ভালো রাখতে চেয়েছি।
এক পয়সা তো আমাদের জন্য সঞ্চয় রাখোনি।
তা অবশ্য রাখতে পারিনি। নিজেরাও কোনো সুখ-আনন্দ করিনি তোদের কথা ভেবে। আজ আমার জীবনের আশা-ভরসা সব বিফলে যাবে।
তা কেন, বাবার বোঝা উচিত ছিল সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা।
আমাদের জীবনের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে তোদের মানুষ করেছি।
এটা সব বাবা-মায়ের দায়িত্ব।
দায়িত্ব কি পালন করিনি? তোদের ভালোভাবে খাওয়াতে পারিনি, পরাতে পারিনি সত্যি, তবে বুকের দুধ খাওয়াতে বঞ্চিত করিনি। সেই দুধের ঋণ শোধ কর না, তাও বলবি ভুল করেছি।
ছেলেরা চুপ করে একে একে চলে গেল। ছেলেদের মনে কিছুটা মমতাবোধ থাকে। কিন্তু ওরা বউয়ের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। যেভাবে চাইবে, সেভাবেই চলে।
সব মা অবহেলিত হয় না, কত স্বর্ণ গর্ভধারিণী মা আছেন। তাদের সন্তানেরা মা দিবস পালন করে। আমার পাশে বসা ছিলেন যিনি, তিনি বলেন, আমি একজন সেই মা। আমি ঢাকায় থাকি, ছেলেমেয়ে সবাই দেশের বাইরে থাকে। তাদের ডাকেই এসেছি। বছরের একটা দিনেই মায়ের মূল্যায়ন পাই। সন্তানেরা মায়ের জন্য কেক কাটে, সন্তান উপহার আনে, নাতি-নাতনি ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানায়।
স্বর্ণ গর্ভধারিণী মা সবাই হতে পারে না। মাদের সঞ্চয় থাকলেই মূল্যায়ন হয়। বাবা-মায়ের সঞ্চয় বেশি থাকলে সে-ই হয় ‘স্বর্ণময়ী মা’। মায়ের জন্য সেমিনার, কত সভা, মাকে প্রশংসাপত্র, কত কথা! প্রদীপের যেমন আলো থাকে, ঠিক প্রদীপের নিচে তেমনি অন্ধকার, আলো পৌঁছায় না। মায়েদের মনেও তেমন আলো পৌঁছায় না। এমন কোনো মা নেই, যার বুকে এক মুঠোও কষ্ট নেই। কেউ প্রকাশ করে চোখের জলে, আর কেউবা হাসির ছলে। সংসারের ভিত মা। সন্তানকে মানুষ করা, সততার সঙ্গে গড়ে তোলা, শিক্ষা দেওয়াÑসবকিছুই মায়ের পরিশ্রমে। সন্তানের সাফল্যে বাবা গর্ববোধ করেন।
সন্তানদের যদি প্রপার গাইড করতে না পারে, সব মায়ের দোষ, তবু অবহেলিত! মায়েদের কোনো মূল্য নেই কোনো দিন। ‘মা’ একজন নারী। নারীরা আন্দোলন করে স্বাধীনতার জন্য, তার বাইরের জগতে মূল্য পেলেও চার দেয়ালের সংসারে অবহেলিত।
কিছু বিত্তবান সন্তান মা-বাবাকে ঠেলে দেয় বৃদ্ধনিবাস, শান্তি কুটির, বৃদ্ধ কুঞ্জ নামের বৃদ্ধাশ্রমে। যখন বৃদ্ধাশ্রম ছিল না, তাদের সন্তান বাবা-মায়ের রক্ত দিয়ে হোলি খেলত না, রাস্তায় বসিয়ে দিত ভিক্ষার থালা দিয়ে। সংসারে বাবা-মায়ের স্থান নেই। এ সমাজ যত উন্নত হবে, বৃদ্ধদের সম্মান ততই গভীরে তলিয়ে যাবে। বৃদ্ধরা সমাজের বর্জ্য পদার্থ। তাদের একটাই পরিচয়Ñঅকর্মণ্য, বেকার। বৃদ্ধদের ছেলেমেয়েরা বুড়ো বাবা-মাকে অকর্মণ্য, অপ্রয়োজনীয় ভাবতে থাকে।
সমাজ আমাদের বেকার ভাবতে পারে। কিন্তু আমরাও তো কারও না কারও বাবা-মা। একদিন আমার ছেলে বলে, তার বন্ধু বাবাকে বলে, তোমাদের ভোগের সঞ্চয় আমরা। আর আমাদের জন্য সঞ্চয়ও রাখোনি, তোমাদের বোঝা উচিত ছিল। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলি, সৃষ্টিকর্তা কেন এই সন্তানদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। একদিন ঠিকই শাস্তি দেবেন।
আপা, আপনার সব কথাই ঠিক, একটিও ভুল বলেননি। আমরা মায়েরা আল্লাহর দরবারে হাত তুলি আর বলি-আমার সন্তান ভালো থাকুক। কাছে থাকলেও আমার, দূরে থাকলেও আমার। কোনো দিন যদি দেখা নাও হয়, তবু এই পৃথিবীর এক কোনায় বেঁচে আছে, এটাই মায়ের সান্ত্বনা।
মা, তুমি আজ না ফেরার দেশে চলে গেলে। কত কথা বুকের মাঝে, কাউকে বলতে পারি না, মা। মনে হয় ছোটবেলার মতো তোমার বুকে একটু শান্তি পেতাম, মা! যার মা নেই, তার কেউ নেই।
মা, তুমি শ্রেষ্ঠ, তুমি উদ্যমী, তুমি সাহসী, তুমি বিজয়ী এক নারী। নারী আর এই নারীত্ব কোনো তুচ্ছ জিনিস নয়। জীবনের প্রতিপদে নারীত্ব বাদ দিয়ে চলা যায়? না, যায় না।