চা পানের সাথে কয়েকটা পন্থা অবলম্বন করলে ওজন কমানোতে সহায়ক হয়।
ওজন কমানোর যাত্রায় অনেকেই চা পান এড়িয়ে যান তবে সঠিকভাবে চা পানে ওজন কমানো সম্ভব।
প্রচলিত ভারতীয় সুগন্ধি মসলা চা যেমন- আদা ও এলাচ দিয়ে তৈরি চায়ে খুব বেশি চিনি ও ননীযুক্ত দুধ যোগ না করলে ক্যালরির মাত্রা কম থাকে।
ওজন কমাতে চাইলে অনেকেই খাবার তালিকা থেকে চা পান বাদ দেন। তবে পুষ্টিবিদরা চা পান বাদ না দিয়ে বরং কিছু পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন।
ভারতীয় পুষ্টিবিদ লিমা মহাজন এই বিষয়ে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তারিত জানান।
সাধারণ চা তৈরি পদ্ধতি কি মোটা বানায়?
হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লিমা মহাজনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, চা কম ক্যালরি বহুল পানীয়। তাই সরাসরি এটা ওজন বাড়ায় না।
তবে ক্যাফেইন সম্পর্কিত নানান বিষয় ও চা তৈরিতে যোগ করা উপাদান অনেক সময় ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
ওজন বাড়ায় চায়ের ব্যবহৃত এমন তিনটি উপাদান হল-
পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ
প্রথমত, পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ ব্যবহার ক্যালরির মাত্রা বাড়ায়। দুধে আছে চর্বি যা অতিরিক্ত গ্রহণে ওজন বাড়ে।
লিমা বলেন, “এক কাপ চায়ে ৩৩ থেকে ৬৬ ক্যালরি থাকে। যা নির্ভর করে মূলত দুধের চর্বির মাত্রার ওপর। দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে পূর্ণ ননী যুক্ত দুধের পরিবর্তে পাস্তুরিত দুধ ব্যবহার করা যায়।”
বাড়তি চিনি
এই পুষ্টিবিদের কথায় “এক চা-চামচ চিনিতে মাত্র ১৯ ক্যালরি থাকে। কিন্তু দিনে কয়েক কাপ চা পান অনেক বড় পার্থক্য আনে। তাই দিনে একাধিক কাপ চা পানের অভ্যাস থাকলে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়বেই।”
অস্বাস্থ্যকর নাস্তা
চায়ের সাথে অস্বাস্থ্যকর নাস্তা যেমন- উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, বিস্কুট, নিমকি ইত্যাদি খাওয়া ওজন বাড়ায়। এসবের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর নাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ওজন কমাতে যেভাবে চা পান করতে হবে
দিনে দুই কাপ চা পান
ওজন কমাতে সংযম মূল চাবিকাঠি। অতিরিক্ত চা পান বাড়তি ক্যাফেইন ও অন্যান্য উপাদান গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
লিমা মহাজনের মতে, “দিনে দুই কাপ চা ভারসাম্য রক্ষা করে। এতে ওজন বৃদ্ধি ছাড়াই চায়ের স্বাদ উপভোগ করা যায়।”
চা ও প্রতি বেলার খাবারের মাঝে বিরতি রাখা
খাবার খাওয়ার পরপরই চা পান হজমে জটিলতা সৃষ্টি করে ও পুষ্টি শোষণে ব্যঘাত ঘটায়। ওজন কমাতে চাইলে খাবার খাওয়া ও চা পানের মাঝে কমপক্ষে ৩০ মিনিট বিরতি রাখা জরুরি। এতে শরীর পুষ্টি শোষণ করতে পারে।
ঘুমানের আগে চা নয়
চা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আর হজমে গোলযোগ সৃষ্টি করে। তাই ঘুমের কাছাকাছি সময়ে চা পান করা উচিত না।
পর্যাপ্ত ঘুম ওজন কমাতে অত্যাবশ্যক। এতে হরমোন নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখে। রাতে বিশ্রাম নিশ্চিত করতে ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই চা পান বাদ দিতে হবে।
খালি পেটে চা নয়
খালি পেটে চা পান অ্যাসিডি বাড়ায় ও হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই হালকা বা স্বাস্থ্যকর নাস্তার সাথে চা পান পাকস্থলীর জটিলতা এড়াতে সহায়তা করে।
চা পানের ৩০ মিনিট আগে ও পরে পানি পান
আর্দ্র থাকা- সার্বিক স্বাস্থ্য আর ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক।
লিমা মহাজন বলেন, “চায়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে চা পানের ৩০ মিনিট আগে ও পরে পানি পান করতে হবে।”
এতে দেহের আর্দ্রতা বজায় থাকে ও হজমক্রিয়া উন্নত হয়।
পাস্তুরিত দুধ ব্যবহার
দুধ চায়ের জন্য পাস্তুরিত দুধ যোগ করতে হবে। এতে ক্যালরি ও চর্বি তুলনামূলক কম থাকে। পাস্তুরিত দুধ ব্যবহারে বাড়তি চর্বিযুক্ত দুধ ছাড়াই ঘন স্বাদের ও কম ক্যালরির দুধ চা উপভোগ করা যায়।
কম চিনি যোগ করা
চায়ে চিনি যোগ করাই যায় তবে তা ওজন বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব রাখে।
ওজন কমাতে চাইলে চায়ে চিনির পরিমাণ কমাতে হবে। প্রয়োজনে প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন- মধু বা দেশি খাঁটি অপ্রক্রিয়াজাত লাল চিনি পরিমিত পরিমাণে যোগ করা যেতে পারে।
ঠিকানা/এসআর