সস্ত্রীক অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে ধ্যানগুরু শ্রী চিন্ময়
জাতিসংঘে পিস মেডিটেশনের প্রবক্তা, বাঙালি ধ্যানসাধক শ্রীচিন্ময়ের বিশ্ব শান্তিতে ষাট দশকের অনবদ্য ভূমিকা নিয়ে ইংরেজি ভাষায় নতুন তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দিমা নেফারতিতি। বিশ্বের দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে শান্তি, মৈত্রী ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে জীবনব্যাপী কাজ করেছেন ধ্যানসাধক শ্রীচিন্ময়। তিনি মনে করতেন, শারিরিক সুস্থতার মতো মানসিক শান্তি ও সুস্থতার জন্য মেডিটেশন, ক্রীড়া, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার অধিকার রয়েছে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের।
সম্প্রতি ঠিকানা অফিসে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ‘ধ্যানসাধক শ্রীচিন্ময়ের বিশ্ব শান্তি কার্যক্রমের সৃজনশীল ষাট দশক’ শিরোনামে তথ্যচিত্রটির মোড়ক উন্মোচন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক নাজমুন্নেসা পিয়ারী এবং ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এমএম শাহীন।
দিমা নেফারতিতি জানান, এ তথ্যচিত্রটি নিউইয়র্কের ইন্ডিয়ান টিভি চ্যানেল আইটিভি গোল্ডে প্রচারের অপেক্ষায়।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক নাজমুন্নেসা পিয়ারী তার অনুভূতি ব্যক্ত করে জানান, ‘ধ্যানসাধক শ্রীচিন্ময় ছিলেন একজন কৃতি বাঙালি। তাঁর জীবন ছিলো সীমাহীন সৃজনশীলতার এক মূর্ত প্রতীক। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার শাকপুরা গ্রামে তিনি জন্মেছেন এবং ১২ বছর অব্দি বাংলাদেশে ছিলেন। তিনি তার সমগ্র জীবন বিশ্বশান্তির জন্য উৎসর্গ করেছেন। ধ্যানসাধক শ্রীচিন্ময়কে নিয়ে দিমা নেফারতিতির নির্মিত তথ্যচিত্রে খুব প্রাঞ্জলভাবে উঠে এসেছে বিশ্বশান্তি প্রচেষ্টায় অভূতপূর্ব ভূমিকার কথা। নিয়ত অস্থির, সাংঘর্ষিক বিশ্বে ধ্যানসাধক শ্রীচিন্ময়ের বৈশ্বিক একতা-দর্শন, ধ্যানসাধনার দিকনির্দেশনা, জীবনব্যাপী সৃষ্টিশীল কাজগুলো দারুণ সার্বজনীন এবং অমূল্য আলোকবর্তিকার মতো।’
ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এমএম শাহীন তার অনুভূতি ব্যক্ত করে জানান, নিউইয়র্কে শ্রীচিন্ময় সেন্টার সদর দপ্তরের সাথে ঠিকানা পত্রিকার ৩০ বছরের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। শ্রীচিন্ময়কে ঠিকানা পরিবার খুব কাছে থেকে অবলোকন করার সুযোগ পেয়েছে। শ্রীচিন্ময়ের জীবন ছিলো সীমাহীন সৃজনশীলতার এক মূর্ত প্রতীক। সংগীত, কাব্য, চিত্রকলা, সাহিত্য এবং ক্রীড়ার মতো জ্ঞান ও কর্মের বিস্তৃত সর্বক্ষেত্রে তিনি বিপুল সৃষ্টির স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
ধ্যানসাধক শ্রীচিন্ময়কে নিয়ে দিমা নেফারতিতির নতুন তথ্যচিত্র, সাম্প্রতিক বিশ্বে শ্রীচিন্ময়ের একতা দর্শনকে স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য একটি সময়োচিত প্রয়াস।
দিমা নেফারতিতি জানান, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ধ্যানসাধক শ্রীচিন্ময় মানুষের অসীম সৃজনী শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। সৃজনশীলতার তিনি ছিলেন এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি ১৬ হাজার বাংলা ও ৮ হাজার ইংরেজি গান রচনা করেছেন। প্রায় এক হাজার ছয়শ পুস্তক রচনা করেছেন। হাজার হাজার ছবি এঁকেছেন। ঝর্ণাকলা নামে খ্যাত তাঁর চিত্রশিল্পে রয়েছে বহু বর্ণিল ও নানা চিন্তার সমাহার। শ্রীচিন্ময় ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ সমকালীন জীবনের গতিশীলতার মধ্যে থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ জীবন পরিচলনায় প্রেরণা দিয়েছেন জীবনব্যাপী।
শ্রীচিন্ময় ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৭-এ পরলোক গমনের আগ পর্যন্ত জাতিসংঘের সদর দফতরে পিস মেডিটেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর আদর্শ স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে ভালোবাসা। তিনি কখনোই তাঁর আধ্যাত্মিক বক্তব্য, সংগীত কনসার্ট বা ধ্যানসভার জন্য অর্থগ্রহণ করেননি। বর্তমানে তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছাত্র/ছাত্রীরা বিশ্বব্যাপী বিনামূল্যে মেডিটেশন শিক্ষা দিয়ে আসছে।