Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

জন্মভিটায় নজরুল উৎসব ও প্রমীলামঞ্চে প্রামাণ্য কাব্যপাঠ

জন্মভিটায় নজরুল উৎসব ও প্রমীলামঞ্চে প্রামাণ্য কাব্যপাঠ
কবি নজরুলের পৈতৃকভিটা- ভারতবাংলার আসানসোলের চুরুলিয়ায়। জন্মতিথিতে সেখানে প্রতি বছর ‘প্রমীলামঞ্চ ও নজরুল মেলা’ হয়। ১৯৭৮ থেকে চলছে এই বার্ষিক আয়োজন। ৭ দিনব্যাপী চলে কবিতা-গান-কারুপণ্য প্রদর্শনী। আমরা তাতে প্রথম আমন্ত্রিত ছিলাম ২০০৪ সালে। আমরা মানে বাংলাদেশের পাঁচ প্রবীণ-তরুণ কবি।
সর্বকবি আসাদ চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। সালেম সুলেরী, কবি-সম্পাদক, তিনবাংলার গ্লোবাল সভাপতি। আসলাম সানী, বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত পদ্যকার। আনজির লিটন, শিশু একাডেমির মহাপরিচালক, সাংবাদিক-শিশুসাহিত্যিক। বাদল চৌধুরী, কবি, সাত দিনÑ পদক্ষেপ-এর কর্ণধার।
বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ বা গ্রেগরিয়ান মে মাসের শেষ সপ্তাহ। প্রচণ্ড গরম আর দাবদাহে মাতাল পরিস্থিতি। কিন্তু তাপদাহ আমাদের কাঁবু করতে পারেনি। উদ্বোধনীর পর সূচনাপর্বে কবিতা পড়েছিলাম। নজরুলের কাব্যকর্মের নাম-বিবরণ দিয়ে লেখা পদাবলি। ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল সচেতন মহলে। পাঁচজন উপাচার্য প্রধান অতিথি ছিলেন পাঁচ দিন। তিনজন রাজ্যমন্ত্রীও পারিষদসহ যোগ দেন। তবে ওনারা ছিলেন অনুষ্ঠানগুলোর বিশেষ অতিথি।
রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত ড. সুশীল ভট্টাচার্য ছিলেন নজরুল একাডেমির সভাপতি। নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্রদ্বয়ও ছিলেন অন্যতম সংগঠক। লেখক-গায়ক সুবর্ণ কাজী আমাদের আমন্ত্রণ-সমন্বয়ক। ভীষণ সমাদর করেছিল চুরুলিয়ার নজরুল পরিবার। প্রধান একটি বিষয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নজরুল সেখানে জন্ম নিলেও সমাধি বাংলাদেশের ঢাকায়। স্ত্রী প্রমীলা কুমিল্লার কিন্তু চিরনিদ্রায় ভারতবাংলার সেখানে। এই ‘ওলট-পালট’ সমাধিকরণ বিষয়ে আমার তথ্যবহুল নিবন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য, নজরুলের প্রখ্যাত দুই নাতনীই আমার পুরনো বন্ধু। কাজী সব্যসাচী-কন্যা ঢাকাবাসী খিলখিল কাজী। কাজী অনিরুদ্ধ-কন্যা মার্কিন-প্রবাসী অনিন্দিতা কাজী। দু’জনই সৌম্যদর্শনা, গায়িকা, গবেষকও।
‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ বাঙালি মুসলমানের চিরজীবী গানটি নজরুলের কথায়-সুরে। এর প্রধান গায়ক ছিলেন নজরুলবন্ধু কণ্ঠরাজ আব্বাসউদ্দীন। মূলত ওনার জোর চাপে-আহ্বানেই নজরুল গানটি বেঁধেছিলেন। পারিবারিকভাবে আব্বাসউদ্দীনের জীবনসঙ্গী আমার বড় ফুপু। আব্বার বড় বোন, কবি লুৎফুন্নেসা আব্বাস (১৯১৪-২০০৩)। এই যোগসূত্রের কারণেও আমার নজরুলপাঠ বহুদাবিস্তৃত।
চুরুলিয়া-আসানসোলকে সেবার একপ্রকার মুখস্তই করেছিলাম। এ বিষয়ে স্মৃতিনিবন্ধে বিস্তারিত রয়েছে। তবে গেলাম- কবির স্মৃতিবাড়ি গিয়ে কবিতা লিখব না! তাকি এই ‘কলমবাজ’ কবিজনমে হতে পারে! প্রথমত, অগ্নিগর্ভ মাটি, পরিবার, নিকটজনদের সাথে আলাপন। অনুভবে, স্মৃতিপলে বিদ্রোহী কবির ছায়ারাজি। এবং চুরুলিয়াতেই চলল আমার কলমবাজি। শিরোনাম : ‘মাটির চেয়ে মহা-নজরুল’।
উল্লেখ্য, কবি নজরুলের জন্ম ২৪/২৫ মে, ১৮৯৯ (বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ অনুসারে)। দেহাবসান ঢাকায়, ১৯৭৬-এর ২৯ আগস্ট।
 
মাটির চেয়েও মহা-নজরুল
 
চুরুলিয়ায় গিয়েছিলাম আসানসোলের পথে,
কবির ভিটায় মা-মাটিকে পরখ করার ব্রতে।
কবি মানেই বাংলা ভাষার কাব্য-গানের রাজন,
নূরু মিয়া, দুখু মিয়া, বাহারি চুল, সাজন...
 
গিয়েছিলাম জ্যৈষ্ঠ মাসেই, জন্ম জয়ন্তীতে,
কবির নামে বিশাল মেলা, আরশিতে-পড়শিতে,
প্রমীলা তার স্ত্রী ছিলেন, কবরখানার পাশে
ভক্তি-গীতি, কাব্য-বয়ান উচ্ছ্বাসে উল্লাসে।
 
গরম মানে সেকি গরম, আম পাকারও অধিক!
আমরা ক’জন অনুজ কবি এদিক থেকে ওদিক-
খুঁজেছিলাম কবির নাড়ী, আদি বাড়ির ঘ্রাণ,
গাঁ-মাটিতে কবি গড়ার কিই সে উপাদান!
 
সেই মক্তব, যাত্রা-লেটো, রুটির দোকান শৈশব-
সবকিছু তো খুব সাধারণ, ইতিহাসের  ঐ সব...।
আসাধারণ বিষয় হলোÑ ঢের প্রতিভার ফুল,
মাটির চেয়েও মহান তিনিÑ বিদ্রোহী নজরুল।
 
নজরুল ও আদি-অনাদি
 
জন্ম আর মৃত্যুর বাঁধনে এক অদ্ভুত অভূত সেতুবন্ধ-
বর্ধমান চুরুলিয়া থেকে ঢাকার বৈভবী  বিদ্যাতীর্থে,
                         সদ্যমুক্ত বিশুদ্ধ বাংলাদেশে
সীমানার দুই পাশে, প্রত্যন্ত প্রবাসে অসীম সাহসে
এখনও শাসন করো অগ্নিবীণা-ছোঁয়া রাজ্যপাট।
 
সাম্যবাদ-সর্বহারার ভাঙার গান;
রুদ্রবীণার ঝংকারময় কবিতা-প্রলয় শিখা!        
তাতে ফের পাখার বাতাস,
এই যে বিপ্লব বাতায়ন
কোমলে-মধুরে-শিল্পে
বরফ গলার  জাদুমন্ত্রে, স্নিগ্ধ  স্বরলিপি হয়ে
দোলালে দোলন চাঁপা, ছায়ানট, পুবের হাওয়া।
 
ঝিঙে ফুলের শৈশবে,
রুটি-ডলা  লিচুতলা লেটো-ভোলা মাভৈ মাভৈ সব হৃদয়বৃত্তির চিত্তনামা,
শিউলিমালা বা মধুমালা-গীতা শতদল-সঞ্চয়িতা, সুসংহিতা
জীবনে না মেলা অংকে অংকিত মরু-ভাস্কর,
                        রাজবন্দীর  জবানবন্দী-
এবার তোমাকে বলি কবি নজরুল-
দারিদ্র্য ও মৃত্যুক্ষিদে  চিনতে বলেছো,
                      আমরা চিনেছি,
        স্বাধীনতার লাগাম ধরে রাখা
          ভগবানকে তাড়াতে বলেছো,
আমরাতো হারাতে পেরেছি সেইসব দানব অন্ধকারকে
 
আমাদের করতলে মুক্তিযুদ্ধের বিষেরবাঁশি,        
বিজয় পতাকা
আমাদের মুক্ত চোখে রুদ্র মঙ্গলের স্বপ্ন,
গুলবাগিচার শতদল- ছুঁতে চাই কিন্তু
রিক্তের বেদন, কুহেলিকা, চক্রবাক, দুর্দিনের যাত্রী,
তারাও  মননে বাঁধনহারা, বারবার  ফিরে ফিরে আসে।
 
সন্ধ্যার জিঞ্জির, চোরের চাতক দেখো নতুন সংস্করণে
            ধূমকেতু  হয়ে আসে আর পাঠ করে
দারিদ্র্রের শাশ্বত কবিতা। সৈনিকত্বে বিবমিষা,
মান্ধাতার বিষ-তৃষা।
          আমরা জিতেও হেরে যাচ্ছি নজরুল, 
কি অক্ষয় সেতুবন্ধ  সুরক্ষায়
কি সমৃদ্ধি নদী-গ্রাম ভূ-রক্ষায়...
পুড়িব  একাকী বলে কাঁদলে অথচ দেখো-
                            একযোগে পুড়ছি সবাই।
 
মুক্ত বাংলায় এসে-তো দেখলে-                     
অবমুক্ত  হলো না কণ্ঠের ব্যামো-ব্যাধি,
আজ শুধু, তুমি আর তোমার অর্জন পর্যন্তই আছি-
      দারিদ্র্য-মহান স্বর্গে আদি এবং অনাদি... 
আছি এ জাতির ইতিহাস কাঁদা বীর, হে উন্নত মমশির।

কমেন্ট বক্স