Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

কবিতার জন্যে মরক্কো

কবিতার জন্যে মরক্কো
আকস্মিকভাবেই আমন্ত্রণটি এল। বিশেষত, একজন ছাড়া আমি আর কোনো মরক্কোর কবিকে চিনি না। সেই কবির সঙ্গেও যোগাযোগ নেই বেশ কিছু বছর ধরে। কিন্তু জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিস্থানের কবি হুসেন হাবেশ আমাকে ইনবক্সে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, আমি মরক্কো আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে যেতে আগ্রহী কি না। আমি তখন ফেব্রুয়ারির বইমেলায় ঢাকায় অবস্থান করছি। সংক্ষিপ্ত উত্তরে জানালাম, ‘নিউইয়র্কে ফিরে স্কুল ক্যালেন্ডার চেক করে বলতে পারব। যদি একই সময়ে বসন্তের ছুটি থাকে, যাব।’ নিউইয়র্ক পৌঁছানোর আগেই তিনি আরেকবার তাগাদা দিলেন, ‘আপনার উত্তরের অপেক্ষায় আছি।’
ক্যালেন্ডার দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত হলাম। কারণ যথারীতি এ বছর ছুটি পড়েছে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে। অতএব, মরক্কো যেতে পারব। তবে বিপদ হলো, আমি অনুষ্ঠান শুরুর পরের দিন মরক্কো পৌঁছাব। তাতেই তিনি রাজি হয়ে বললেন, ‘আমি আয়োজকদের জানিয়ে দিচ্ছি আপনাকে অফিশিয়াল আমন্ত্রণ পাঠানোর জন্যে।’ পরে জেনেছি, কবি হুসেন হাবেশ ওই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা এবং আমন্ত্রিত কবিরা প্রায় সবাই তাঁর পরিচিত। হুসেনের কথামতো সেদিনই ড. ফাতিমা লিলির স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্র এসে গেল আমার ইমেইলে। অনুষ্ঠান হবে মরক্কোর পাঁচটি শহরে। এপ্রিলের ১৯ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত। সব সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যে আমাকে কত সম্মানী দেওয়া হবে, সেটাও জানানো হলো। উপরন্তু আমার তিনটি কবিতা আরবি ভাষায় অনুবাদ করে অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রকাশিত সংকলনে ছাপানো হবে। আমন্ত্রণপত্রের তথ্য অনুসারে আমরা যাব লেউন, সাফি, তানজিয়ার, রাবাত ও মারাকাশ শহরে। আমি সরাসরি ফ্লাইট নিলাম, ফলে আমাকে নামতে হবে কাসাবলাংকা বিমানবন্দরে। এবং যেখান থেকে লাউন শহরে যাবার টিকিটও পাঠিয়ে দেওয়া হলো। অর্থাৎ আমি ২০ এপ্রিল বিকালে লাউন পৌঁছে সাহারা মরুভূমিতে অনুষ্ঠিত উৎসবের এই অংশে যোগ দেব বলে নির্ধারিত হলো। ইতিমধ্যে কবি ও অনুবাদক ড. ইসা ফার্তেমিস জানিয়ে দিলেন, তিনি আমার পাঠানো তিনটি কবিতাই আরবি ভাষায় অনুবাদ করে ফেলেছেন। খুশিতে আমি আটখানা, কারণ এ নিয়ে ১৫টি ভাষায় অনূদিত হলো আমার কবিতা। এর মধ্যে ইংরেজি, পোলিশ, চায়নিজ ভাষায় আলাদা বইও প্রকাশ পেয়েছে।
সমস্যা হলো ১৯ এপ্রিল শুক্রবার সকালেই রয়েল ইয়ার মরক্কো আমাকে ইমেইলে জানিয়ে দিল, ফ্লাইট পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে। এই পাঁচ ঘণ্টা বেড়ে দাঁড়াল আট ঘণ্টায় এবং শেষ পর্যন্ত শনিবার সকাল পাঁচটায় ছাড়ার কথা থাকলেও আরেক ঘণ্টা দেরি করে সকাল ছয়টায় বিমান আকাশে উড়ল। তার মানে, আমি নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারলাম, লাউন শহরের ফ্লাইটটি মিস করব। এ অবস্থায় করণীয় কী, তা জানারও কোনো সুযোগ রইল না। কিন্তু একটা কিছু ব্যবস্থা যে হবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত থাকলাম। কারণ শুরু থেকেই আয়োজকদের বেশ সিনসিয়ার বলে মনে হয়েছিল। কাসাবলাংকা পৌঁছে নির্দিষ্ট কাউন্টারে সব খুলে বলার পর কর্তব্যরত ভদ্রমহিলা আমাকে জানালেন, লাউনের বিমান ইতিমধ্যে ছেড়ে গেছে। তিনি আমাকে পরবর্তী ফ্লাইটে যাবার ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু পরবর্তী ফ্লাইট সকাল সাড়ে আটটায়। ‘তাহলে এই রাতে আমি কোথায় থাকব?’ আমার এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘ইমিগ্রেশন হয়ে গেলে দোতলায় আমাদের আরেকটা কাউন্টার আছে, সেখান থেকে আপনাকে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট বাস হোটেলে নিয়ে যাবে।’
ইমিগ্রেশন পার হয়ে কিছু ডলার ভাঙিয়ে নিলাম এবং ২০০ দিরহাম দিয়ে মরক্কোর একটি সিমকার্ড আমার ফোনে ঢুকিয়ে নিলাম। আয়োজকেরা যাতায়াত, খাওয়া, থাকা ইত্যাদি সব খরচ দিলেও নিজস্ব কিছু চাহিদা থাকে, যেমন যখন-তখন খাওয়ার জন্যে পানি কিনে রাখা, রাতদুপুরে হঠাৎ ক্ষুধা পেলে হাতের কাছে কিছু একটা খাবার রেখে দেওয়া, বাসার ও বন্ধুদের জন্যে গিফ্ট কেনা এবং সিমকার্ড ব্যবহার ইত্যাদির জন্যে আমি যে দেশেই যাই না কেন, সে দেশের কিছু কারেন্সি সচরাচর সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করি। এ ক্ষেত্রেও অজানা পরিবেশে সবকিছু ঠিকঠাকমতো এগোল।
আমি রাতে ডালাস হোটেলে কাটিয়ে সকাল ছয়টায় বাসে করে আবার এয়ারপোর্টে হাজির হলাম লাউনের উদ্দেশে প্লেন ধরতে। এ ক্ষেত্রে বাসের ব্যবস্থা এয়ারলাইন্স থেকেই করা হলো। আমার মতো ফ্লাইট মিস করার দল বেশ ভারীই ছিল। কারণ বাসে একেবারে শেষের সিটটি পেলাম।
লাউন বিমানবন্দরে মিস ইসা ফার্তেমিস এলেন আমাকে রিসিভ করতে। পথে যেতে যেতে তাঁর সঙ্গে কবিতা নিয়ে কথা হলো। আমি আমার সম্পাদিত ‘শব্দগুচ্ছ’ পত্রিকার একটি কপি তাঁকে দিলাম আর ‘ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি অ্যান্থোলজি’ বইটি দেখতে দিলে তিনি সেটা তাঁর ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলেন। আমি তাতে সন্তুষ্টই হলাম, কারণ বইয়ের বোঝায় আমার হাতব্যাগ বেশ ভারী হয়ে গিয়েছিল। তিনি বললেন, ‘আপনার অপেক্ষায় আছেন সবাই। আপনাকে সরাসরি উৎসব হলে নিয়ে যাব। সে ক্ষেত্রে আপনার লাগেজ এই গাড়িতেই থাকবে।’ লাগেজ আর তেমন কিছু নয়, আমার হাতব্যাগ ছাড়া একটি ক্যারি-ওন, যাতে ১০ দিনের প্রয়োজনীয় কাপড় আর কিছু বই।
বিশাল হলরুমে ঢুকেই তিনি আমাকে মূল আয়োজক, মারাকাশ কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মিরফানি আব্দুলহকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ওদিকে কবি ও অনুবাদক মোহাম্মদ মুখারিক এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আপনি এলেন। হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের কত কথা হয়েছে!’ মোহাম্মাদ মুখারিকই আমাকে কাসাবলাংকা থেকে লাউনের টিকিট পাঠিয়েছেন। আমার নামের শেষ অংশের বানান ভুল হওয়ার কথা বললে তিনি তখন জানিয়েছিলেন, সম্ভবত কোনো সমস্যা হবে না। আর সমস্যা হলে ওদেরকে আমার ফোন নাম্বার দেবেন, আমি কথা বলে ঠিক করে দেব। কবি মিরফানি আব্দুলহক আমাকে সামনের সারিতে বসার জায়গা করে দিলেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আসুন, আমি আমন্ত্রিত কবিদের সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিই।’ তখনো অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। তা ছাড়া এই অনুষ্ঠান যে আমার বক্তৃতা দিয়ে শুরু হবে, সেটাও আমার জানা ছিল না। যাহোক, সামনের সারিতে বসা কবিদের সঙ্গে একে একে তিনি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। স্পেনের কবি হুলিও ও তাঁর স্ত্রী এনাবিলা আমার পূর্বপরিচিত। দুজনই আমাকে জড়িয়ে ধরে গভীর আলিঙ্গনে বেঁধে ফেললেন। ওদিকে হুসেন হাবেশও আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন। বললেন, ‘এই প্রথম আপনার সঙ্গে দেখা হলো।’ হুসেনের সঙ্গে আমার পরিচয় ফেসবুকে। একবার তিনি বন্ধুত্ব অনুরোধ করে লিখেছিলেন, ‘আমি কি আপনার পত্রিকার জন্যে লেখা পাঠাতে পারি?’ পত্রিকায় লেখা ছাপা হলে আমি ডাকযোগে পাঠিয়েছি। সেটি পেয়েও তিনি স্ট্যাটাস লিখেছেন। আমাদের অনলাইন বন্ধুত্ব এবার সরাসরি বন্ধুত্বে পৌঁছাল। তা ছাড়া মার্কিন কবি স্ট্যানলি কিউনিটজ একবার বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর সব কবিই এক মায়ের সন্তান।’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কবিদের সঙ্গে যতই মিশেছি ততই কথাটিকে সত্য মনে হয়েছে। ফলত, অনুষ্ঠান শুরুর আগে আমি কবিদের নিয়ে একটি সেলফি তুলে ফেললাম। সবাই কী প্রাণবন্ত হয়ে যোগ দিলেন, মনে হলো একে অপরের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে পরিচিত!
এই অনুষ্ঠানটি ছিল লাউন উৎসবের সমাপনী। ইতিমধ্যে ইসা ফার্তেমিস আমার থেকে জেনে নিলেন, আমি কোন কবিতা পড়ব। যেহেতু গত দুই দিন আমি উৎসবে ছিলাম না, তাই এখানে আমন্ত্রিত কবিদের মধ্যে আমিই একমাত্র কবিতা পড়লাম। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হলো। ঘোষক যখন আরবিতে আমার পরিচিতি তুলে ধরলেন, তখন শব্দগুচ্ছ ও হাসানআল আব্দুল্লাহ শব্দগুলো শুনেই বুঝতে পারলাম, তিনি আমার কথাই বলছেন। এরপর ইংরেজিতে বলা হলো, ‘আমরা কবি হাসানআল আব্দুল্লাহকে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ আমি বুঝে ফেললাম, কবিতা পড়ার আগে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিতে হবে। আমাকে মরক্কো আমন্ত্রণ জানানোর জন্যে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, ‘আমি ইতিমধ্যে জেনেছি যে আল কালিমা ফাউন্ডেশন ও সাহারা উইম্যান ডেভেলপমেন্ট ফোরাম নারীদের দ্বারা পরিচালিত দুটি সংগঠন, আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবের মতো এত বড় একটি আয়োজন যারা করেছেন। আমি চাই মরক্কোর মতো পৃথিবীর দেশে দেশে নারীদের এমন জাগরণ হোক। শুধু নারী জাগরণের ভেতর দিয়েই একুশ শতকের পৃথিবী এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’ এরপর একাত্তরে আমার পিতার শহিদ হবার কথা তুলে বলি, ‘সে বছর পাকিস্তানি সেনারা তিন মিলিয়ন নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছিল। গাজায় এই মুহূর্তে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে এই নৃশংসতা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। আসুন, আমরা শান্তির জন্যে আমাদের কলমকে শাণিত করি।’ অনুষ্ঠানে আমি একটি কবিতা পড়ি। কবিতার নাম ‘কিছু পয়সা হলে’, ইংরেজি অনুবাদ ‘উইথ এ লিটিল ক্যাশ’। আমি প্রথমে ইংরেজি ও পরে বাংলায় পড়ি। আমার পড়া শেষ হলে ইসা ফার্তেমিস আরবি অনুবাদে কবিতাটি পড়ে শোনান। বিপুল করতালির ভেতর দিয়ে নিজের আসনে গিয়ে বসে লক্ষ করি, মঞ্চ সাজানো হয়েছে ২৫ দেশের বিশাল বিশাল পতাকা দিয়ে। হাতের ডান দিকে কয়েকটির পরেই লাল-সবুজের হৃদয়ভরা মাতৃভূমির পতাকা দেখে বুকটা আকাশ হয়ে যায়। কী যে ভালো লাগে, তা কাউকে বোঝানো যাবে না। চীন কবিতা উৎসবের কথা মনে পড়ে, সে বছর ৩২ দেশের পতাকা দিয়ে মঞ্চ সাজানো হয়েছিল, শুরুতে ছিল বাংলাদেশ ও শেষে আমেরিকার পতাকা। আর কী আশ্চর্য, আমি ছিলাম দুই পতাকারই বাহক। অনুষ্ঠান শেষে সুযোগ বুঝে আমি দুই পতাকার পাশে দাঁড়িয়েই ছবি তুলি।
লাউনে কবিতা উৎসব উপলক্ষে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে কবিতা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় স্থান পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা কবিতা পড়ে। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। একটি মেয়ে আরবি আঞ্চলিক হাসানিয়া ভাষায় কবিতা পড়ে সবাইকে মুগ্ধ করে। সাহারা মরুভূমির আশপাশের অঞ্চলগুলোতে এই ভাষাটি ব্যাপক জনপ্রিয়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত নারীদের সবাইকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়। তাদেরকে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবার জন্যে বিশেষ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। একে একে ডাকা হয় আমাদেরও এবং প্রত্যেকের হাতেই কাঠের তৈরি কারুকার্যময় ফ্রেমে বাঁধাই করা সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় সংগীত পরিবেশন ও ড. ফাতিমা লিলির বক্তৃতার ভেতর দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠান শেষে বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আমার সঙ্গে সেলফি তুলতে আসে, আমি তাদের কারও কারও হাতে নিজের বই ও পত্রিকা তুলে দিয়ে বলি, ‘পর্যাপ্ত কপি না থাকায় সবাইকে দেওয়া সম্ভব হলো না। তোমরা শেয়ার করে পোড়ো।’
দরজা দিয়ে বের হবার সময় স্লোভেনিয়ার কবি ও বিখ্যাত শিল্পী পিটার এন্ড্রেজ বললেন, ‘তুমি নাকি গানও করো। তোমার কবিতা যখন বাংলায় শুনছিলাম, তখন আমি মনে মনে এর একটা বিট খুঁজে পেলাম। গান করা যায়।’ সত্তরোর্ধ্ব এই কবির কথায় আমি আপ্লুত হই, বলি, ‘গান লিখি, তবে একটু-আধটু সুর করাও শিখেছি। কিন্তু আপনি এই কবিতায় কী করে বিট খুঁজে পেলেন, এটি তো বেশ কঠিন ছন্দে লেখা।’ তিনি বললেন, ‘গিটারে একসময় তোমাকে দেখানো যাবে।’ পরে অবশ্য সেই সুযোগ না হলেও একদিন গিটার বাজিয়ে তিনি আমাদের অনেকগুলো গান শুনিয়েছিলেন। সেটি বেশ পরের কথা, বাণিজ্যশহর তানজিয়ারে।
সবাই যখন বাসে উঠছিল, আমি তিন আয়োজককে একসঙ্গে পেয়ে একটি সেলফি তুলে নিলাম। ইসাকে বললাম, ‘আপনি আমার অনুবাদক। একটু এদিকে আসুন।’ মূল ফটকে লম্বা করে টানানো অনুষ্ঠানের পোস্টারের দুই পাশে দুজন দাঁড়িয়ে একটি ছবিও হয়ে গেল।
কবিদের পরিবহনের জন্যে দুটি মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছে। আমি জানতে পারলাম, আমার লাগেজ একটি বাসে তোলা হয়েছে। ড্রাইভার এসে বললেন, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। লাগেজ ঠিক আছে।’ ওখান থেকে কবিদের নিয়ে হোটেলে যাওয়া হলো। পাঁচ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হলো চেক আউট করার জন্যে। কিন্তু তাই কি হয়, লাগেজ নিয়ে বেরোতে বেরোতে প্রায় আধা ঘণ্টা চলে গেল। এবং মাইক্রোতে এত লাগেজ পেছনে ও পায়ের কাছ দিয়ে, এমনকি দুই আইলের মাঝখানেও রাখা হলো। এভাবে আমরা পৌঁছালাম ডা. ফাতিমা লিলির বাসায়, সেখানে হবে দুপুরের খাওয়া। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তারপর সবাই একসঙ্গে বিমানে করে কাসাবলাংকা, এবং সেখান থেকে আরও দুটি মাইক্রো করে ৭০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক পারের শহর সাফিতে পৌঁছাব। কবি ও অনুবাদক মোহাম্মাদ মুখারিক ও ইসা ফার্তেমিস থাকেন ওই শহরে।
ডা. ফাতেমা লিলির বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম একটি বসার রুম, যেখানে ওয়াল টু ওয়াল কার্পেট। মাঝে মাঝে কুশন রাখা। দু-তিনজন ইতিমধ্যে ওই কার্পেটে বসে আছেন কুশনে হেলান দিয়ে। আমিও বসে গেলাম। কিন্তু নিচে বসতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। ওদিকে পেট ক্ষুধায় চোঁ চোঁ করছে। সেই সকালে প্লেনে নাশতা খেয়েছি! সেখান থেকে এক টুকরো রুটি ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছিলাম। কী জানি কখন কোথায় কী খেতে পাই এই ভেবে। সুগার কমে গেলে তো আর রক্ষা নেই। অনুষ্ঠান যখন চলছিল, তখন কোনো রকমে সেই রুটিটুকু চিবিয়েছি। কিন্তু এখন আর কোনো কিছুতেই পেট বাঁধ মানছে না। হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে বেরিয়ে আসছিল কখন খাবার দেবে, কখন খাবার দেবে!
আমার পেছনে অন্য যেসব কবি ঢুকলেন, তারা বসার রুমটি পেরিয়ে আরেকটা রুমে চলে গেলেন, একজন বললেন ওখানে সোফায় বসতে পারবে। আমিও তাদের অনুসরণ করলাম। এটাই হলো ড. লিলির লিভিং রুম। শুধু ওয়াল টু ওয়াল কার্পেটই নয়, চার দেয়াল ঘেঁষে সোফা বসানো। সে এক এলাহি কাণ্ড। ইসা ফার্তেমিস বললেন, ‘এটা হলো সাহারা অঞ্চলের ট্র্যাডিশনাল বসার ঘর।’ পুরো ঘরে তিনটি টেবিল পাতা। টেবিলগুলো ঠিক আমাদের জলচৌকির সমান নিচু, যাতে করে নিচে বসেই চারদিক দিয়ে মানুষ একসঙ্গে খেতে পারে।
কথাবার্তা ও নানা রকম গল্পে সময়ে চলে যাচ্ছিল। এরই ভেতর স্থানীয় গান ছাড়া হলো ক্যাসেটে। বেশ কয়েকজন তালে তালে নাচলেন। একটা হইহই রইরই অবস্থা। কিন্তু ঘণ্টাখানেক কেটে গেলেও খাবারের কোনো ব্যবস্থা দেখা গেল না। আমার মনে হলো, আমরা বাসায় ঢোকার পর হয়তো চুল্লিতে রান্না বসানো হয়েছে। তাই সময় লাগছে। কিন্তু আমরা যেমন চা-নাশতা দিয়ে শুরুতে লোকদের আপ্যায়ন করি, তার কোনো বালাই দেখা গেল না। শিহাম ওদিকে তার ক্যামেরায় একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছিলেন। হয়তো তাকে ছবি তোলা ও ভিডিও করার জন্যেই হায়ার করা হয়েছে। একপর্যায়ে আর থাকতে না পেরে আমি শিহামকে বললাম, ‘আপনি কি আমাকে সামান্য কিছু খাবার এনে দিতে পারবেন। আমার সুগার কমে গেছে।’ তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ভেতরে গিয়ে একটি পিরিচে করে বেশ কয়েকটি খেজুর ও কাজু বাদাম এনে দিলেন। কিন্তু পাশের বন্ধুদের না দিয়ে আমি কী করে খাই! ফলত, আমার আশপাশে বসা তিন-চারজন একটি করে খেজুর তুলে মুখে দিলে আমিও একটি মুখে পুরলাম। দুটি খেজুর ও একটি কাজু বাদাম খেয়ে আরও ঘণ্টাখানেক কাটানোর পর খাবার এল। বিশাল গামলায় ধোঁয়া-ওঠা কুচকুচ, যার ভেতরে দেওয়া হয়েছে উটের মাংস ও নানা রকম সবজি। পানীয় হিসেবে জগভর্তি উটের কাঁচা দুধ। খাবার রাখা হলো টেবিলের ওপর। তিন টেবিলের চারদিক দিয়ে সবাই ভিড় করে বসে গেলেন। পিরিচের মতো ছোট ছোট প্লেটে চামচ দিয়ে তুলে খেতে লাগলেন, আবার খাওয়া শেষ হলে ওই চামচ দিয়েই খাবার তুললেন। ব্যাপারটি আমার কাছে বিদঘুটে মনে হলেও এটাই এ দেশের ট্র্যাডিশন। পরেও বহুবার এটা দেখেছি এবং মানিয়ে নিয়েছি। খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু লাগল। সেটা কি ভয়াবহ ক্ষুধার কারণে না আদতেই রান্না ভালো হয়েছে বলে! তা ছাড়া জীবনে এই প্রথম উটের মাংস খেলাম। ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে হরিণ পড়লে যেমন হয়, আমাদের সবার অবস্থাও ঠিক তেমনটি ছিল। গোগ্রাসে সবাই মিলে খেলাম। আমার নিচে বসতে অসুবিধা হচ্ছিল দেখে স্থানীয় এক কবি একটি কুশন এগিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এটার ওপর বসে খান।’ তা-ই হলো। তবে পানীয় হিসেবে আমি দুধ রেখে স্প্রাইট বেছে নিলাম। উপর্যুপরি দুই রাত নির্ঘুম কাটিয়ে শরীর বেশ শুকনো লাগছিল। মনে হলো স্প্রাইট খেলে একটু চাঙা হয়ে উঠব। এরই মধ্যে এল ডিজার্ট হিসেবে কেক। সেটাও কিছুটা খেলাম। ইতিমধ্যে যে যার সোফায় গিয়ে বসেছেন। তিন-চারজন মেয়ে বিশাল রেকাবিতে করে নিয়ে এলেন নানা রকম ফল। ফল শেষ হলে এল পেসট্রি, তারপর এল বিচিত্র রকমের খেজুর। সবশেষে যা এল সেটা দেখে আমি পুরোপুরি অবাক, নানা রকমের পারফিউম, সবাই একটু একটু করে হাতে বা কাপড়ে মাখালেন। আমার সামনে এসে এক সুন্দরী নারী ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বললেন, ‘কোনো একটা নিয়ে হাতে মেখে দেখুন।’ আমি বললাম, ‘আগে আপনার একটি ছবি তুলে রাখি।’ মেয়েরা সবাই শাড়ি পরে এসেছেন। তবে বাঙালি নারীদের মতো এগারো হাত শাড়ি নয়। এখানে এই পোশাককে বলে লিমালহাফি বা জেলিবা। বিশেষ প্রক্রিয়ায় বানানো হয়। পরলে একেবারে শাড়ির মতোই লাগে। দুপুরের খাওয়া শেষে ড. ফাতেমা লিলির বাসা থেকে বেরোতে প্রায় সাড়ে চারটা বেজে গেল। আয়োজকেরা বললেন, এখন আর কোথাও নয়, সরাসরি এয়ারপোর্টে যাওয়া যাক। ওদিকে দেখলাম একটি ট্রাক ভাড়া করে সব লাগেজ তাতে ওঠানো হচ্ছে। বুঝলাম, মাইক্রোতে যেভাবে লাগেজ রাখা হয়েছে, সেটি নিরাপদ নয়। যাহোক ড্রাইভার এয়ারপোর্টের দিকে মাইক্রো ছোটালেন। লাউনের এই বিমানবন্দরের নাম হাসান ২; মরক্কোর পূর্বের রাজার নামানুসারেই  এই নামকরণ। ওদিকে কাসাবলাংকা বিমানবন্দরের নাম মোহাম্মাদ ৬; এটি বর্তমান রাজার নামে। বুঝে নিলাম মোহাম্মাদ আর হাসান নামটি ওখানে বেশ জনপ্রিয়।
আমার একটি বই কসোভোর এক কবিকে ইতিমধ্যে উপহার দিয়েছিলাম। বইয়ের নাম ‘আন্ডার দ্যা থিন লেয়ারস অব লাইট’। বাসে তিনি বসেছেন সামনের দিকে, তার পাশেই বসেছেন সাইপ্রাসের কবি লিলি মিশেলডিস; তিনি বইটি নিয়ে পাতা উল্টিয়ে এমন একটি কবিতা পেলেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে শোনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কবিতার নাম ‘হোয়েন গড ইজ ডেড’। তিনি আলাপরত যাত্রীদের এ ক্ষেত্রে কবিদের থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘হেই গাইজ, ইউ মাস্ট হেয়ার দিস।’ সবাই চুপ হয়ে গেলে তিনি বললেন, ‘হাসানআলের এই কবিতাটি তোমাদের শোনা দরকার।’ তিনি জোরে জোরে পড়লেন। পড়া শেষ হতেই সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন এবং কবিতার নানা দিক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। এই আলোচনা চলল ১০-১৫ মিনিট ধরে। একপর্যায়ে কসোভোর সেই কবি রেগেমেগে আমাকে বললেন, ‘তুমি কবিতায় মিথ্যা লেখো। আমি তোমার বই পড়ব না।’ তিনি আমার দিকে বই এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই নাও তোমার বই।’ আমি ভাবলাম, তিনি সম্ভবত রহস্য করছেন। বাস থেকে নামতে নামতে তিনি বললেন, ‘আরেকটি কথা, তুমি খুব জোরে হাসো, আমার কান ব্যথা হয়ে গেছে।’ তার কথা শুনে আমি এবারও হাসলাম। তিনি যে একেবারেই কোনো রহস্য করেননি, তা আমি বুঝতে পারলাম, যখন চেকইন করা সর্বশেষ কবি আইরিন সেন্টোস আমাকে বললেন, ‘কাউন্টারে তুমি তোমার একটা বই ফেলে এসেছ, আমি ঢোকার সময় দেখলাম।’ আমার দেওয়া বই কসোভোর সেই শ্বেতাঙ্গ কবি শুধু ফেলেই আসেননি, পুরো ১০ দিন তিনি আমার সঙ্গে নানা রকম বৈরী আচরণ করেছেন এবং আমি সব সময়ই তাকে পুরোপুরি ইগনর করে গেছি। কারণ, আমি জানি, ইতিমধ্যে পুরো গ্রুপের কবিরা আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন, প্রতি পদে তার প্রমাণও পেয়েছি। কারণ নিউইয়র্কে ফিরে এলে মোহাম্মাদ লিখেছেন, ‘বিলিয়নস অব থ্যাঙ্কস ফর ইয়োর এমাজিং পার্সোনালিটি দ্যাট ওয়াজ গ্রাভড ইন অল আয়ার মাইন্ডস।’ নিউজিল্যান্ডের কবি স্যু লিখেছেন, ‘ইউ আর দ্যা মোস্ট জেনারাস জেন্টেলম্যান, উইথ অয়ার্ম হার্ট অ্যান্ড জেনুইন ইমোশন, আই হেভ এভার মেট ইন পোয়েট্রি সার্কেল।’ ওদিকে ইতালির কবি লরা লিখেছেন, ‘হাসানআল, দ্যা মোস্ট “ক্রেজি” পোয়েট অব আওয়ার গ্রুপ।’ আমি সত্তরোর্ধ্ব এই অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসরকে লিখেছি, ‘ওয়েল, মোস্ট অব দ্য গ্রেট পোয়েটস ওয়ার ক্রেজি, থ্যাংক ইউ পর পুটিং মি ইন দ্যা লিস্ট!’ এ ধরনের অনুষ্ঠানে যা হয়, মাত্র কয়েক দিনে কবিদের সঙ্গে এতটাই বন্ধুত্ব হয়ে যায় যে এর কোনো কোনো সম্পর্ক সারা জীবন চলে। জার্মানির কবি স্যারার এয়ারপোর্টে কান্না না দেখলে এ কথার সত্যতা যাচাই করা কঠিন।
এভাবে মরক্কোর ১০ দিনের আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব ছিল নানা আয়োজন, নানা ভাবনা, নানামুখী আলোচনায় পরিপূর্ণ। আদতে পাঁচটি শহরে আলাদা করে, বলা ভালো, পাঁচটি উৎসব হয়েছে পাঁচ মহাদেশের ২৫ জন কবিকে নিয়ে। প্রতিটি শহরেই উপরন্তু স্থানীয় কবিরাও যোগ দিয়েছেন। কবিদের জন্যে শুধু সব রকম ব্যবস্থাই নয়, আল কালিমা ফাউন্ডেশন থেকে দেওয়া হয়েছে সম্মানী ও সম্মাননা। কবিতার মাধ্যমে ‘সফ্ট ডিপ্লোমেসি’, অনুবাদের গুরুত্ব, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সম্ভাবনা ও অন্তরায় এবং নির্বাসন ও স্বেচ্ছা নির্বাসনে কাব্যধারার পরিবর্তন নিয়ে নানা শহরে সেমিনার, কবিতাপাঠ, ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণ, রাজধানী রাবাতে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন দিয়ে নানাভাবে নানা আঙ্গিকে সাজানো হয়েছিল এই অভাবনীয় কবিতা উৎসব। জাতীয় টিভিতে একাধিক কবির সাক্ষাৎকার, একাধিক জাতীয় দৈনিকে কবিদের ছবিসহ খবর ও ‘প্রেস হাউস’ কর্তৃক ডকুমেন্টারি প্রকাশ ছিল আমার জন্যেও  আলাদা পাওয়া। তা ছাড়া মরক্কোর তুলনাহীন ঐতিহ্যবাহী খাবারের মুগ্ধতা ছিল অসামান্য। মোহাম্মাদ মোখারিক আমার অনূদিত ‘কনটেম্পোরারি বাংলাদেশী পোয়েট্রি’ বইটি পেয়ে আরবিতে অনুবাদের সংকল্পই করেননি, আমি নিউইয়র্কে ফিরে এলে এ নিয়ে একটি চুক্তিপত্র করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইসা ফার্তেমিস লিখেছেন, ‘আমি আপনার আরও কিছু কবিতা আরবিতে অনুবাদ করতে চাই।’ ফেরার আগেই হাঙ্গেরির কবি আতিলা আমাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘সাফিতে আপনি যে দুটি কবিতা পড়লেন ইংরেজি ও বাংলায় আবৃত্তি করে একটি ভিডিও পাঠান, আমি অনুবাদসহ আপনার ভিডিও ওয়েবে প্রকাশ করব।’ স্যারা জার্মান ভাষায় অনুবাদের জন্যে আমার একটি বই নিয়ে গেলেন। লরা ১০ জন বাংলাদেশের কবির কবিতা একসঙ্গে ইতালিতে প্রকাশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ওমানের কবি তালিব বললেন, তাঁর দেশে প্রায় ১০ লাখ বাঙালির বসবাস, আমি যেন সে দেশে একবার যাই। লিলি বললেন, সাইপ্রাসে আপনাকে একবার আসতেই হবে। ওদিকে কিউ বললেন, ‘ভিয়েতনামের মানুষ কবিতা ভালোবাসে, তারা ভালো কবিতা পাওয়ার জন্যে উদ্্গ্রীব হয়ে থাকে।’ তিনিও ভিয়েতনামি ভাষায় আমার একটি বইপ্রকাশের আগ্রহ জানালেন। আমিও এঁদের সাবাইকে ‘শব্দগুচ্ছ’ পত্রিকায় লেখার আহ্বান জানালাম। মরক্কো কবিতা উৎসবের ১০টা দিন এভাবে স্বপ্নের মতো পার হয়ে গেল।

কমেন্ট বক্স