Thikana News
০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
‘ভবিষ্যতে এমনটি হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা’

বাংলাদেশ সোসাইটির সভায় ‘বস্তি স্টাইল’ হট্টগোল

বাংলাদেশ সোসাইটির সভায় ‘বস্তি স্টাইল’ হট্টগোল
বাংলাদেশ সোসাইটিকে বলা হয় আমব্রেলা সংগঠন। প্রবাসে বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যম এই সংগঠনটি। অথচ এই সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদ, অর্থাৎ কার্যকরী কমিটির সভায় ‘বস্তি স্টাইল’ হট্টগোলের খবর বাংলাদেশি কমিউনিটিকে হতবাক করেছে। গত ২ জুলাই রোববার কার্যকরি কমিটির সভার হট্টগোলে পানির বোতল থেকে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে। ‘খিস্তিখেউর’ তো ছিলই। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় এসেছিল পুলিশও। 
ঘটনার সূত্রপাত বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠন নিয়ে। ১৩ সদস্যের মধ্যে একজন সদস্য নির্বাচন করা বাকী ছিল ট্রাস্টি বোর্ডে। ২ জুলাই রোববার দুপুরে এলমহার্স্টের হুইটনি অ্যাভিনিউর নিজস্ব কার্যালয়ে কার্যকরি কমিটির সভায় তা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। যে যার মত পছন্দের লোক প্রস্তাব করবেন এবং যার নাম সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হবে তিনি ট্রাস্টি হবেন। দুপুরে শুরু হয়েছিল কার্যকরী কমিটির সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রব মিয়া। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী। সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেনসহ কয়েকজন প্রস্তাব করেন সাবেক সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম. আজিজের নাম। আর এতেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন সোসাইটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান। তিনি আজিজের নাম নাকচ করে দিয়ে সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদের নাম প্রস্তাব করেন। এ নিয়ে তিনি গরম ভাষায় কথাও বলেন। তখন কার্যকরী পরিষদের দু-তিনজন সদস্য মনে করিয়ে দেন যে সিনিয়রদের কাছ থেকে আমরা শিখবো। অথচ আমরা কী দেখছি? আগামী প্রজন্ম কী শিখবে? এসময় মহিউদ্দিন দেওয়ান ও নওশেদ হোসেনের মধ্যে তুমুল বাগযুদ্ধ হয়। 
নওশেদ হোসেন অভিযোগ করেন, মহিউদ্দিন দেওয়ান তার দিকে পানির বোতল ছুঁড়ে মারেন। চেয়ার দিয়ে দুই বার আঘাত করার চেষ্টা করেন। একবার চেয়ার তার আঙুলে লাগে। এসময় সোসাইটির যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল চৌধুরীও আঙুলে ব্যথা পেয়েছেন। সহ-সভাপতি ফারুক চৌধুরীও থামাতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন। এসময় অন্যরা মহিউদ্দিন দেওয়ানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। 
নওশেদ অভিযোগ করেন, জ্যাকসন হাইটসে গেলে তাকে তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দিয়েছেন মহিউদ্দিন দেওয়ান। এ ঘটনার পর তিনি নিরাপত্তায় ভুগছেন। ঘটনার আকস্মিকতায় এবং জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি পুলিশ কল দিয়েছিলেন। হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্সও এসেছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি মহিউদ্দিন দেওয়ানের বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট করেছেন এবং প্রিসিঙ্কট থেকে ডিটেকটিভ যোগাযোগ করেছেন বলেও জানান। ভয়ে তিনি জ্যাকসন হাইটসে যাচ্ছেন না। এতে তার ব্যবসায়িক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। 
নওশেদ হোসেন আরো অভিযোগ করেন- মহিউদ্দিন দেওয়ান তাকে বাংলাদেশে গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, মহিউদ্দিন দেওয়ান ক্ষমতাসীন দলের নেতা। দেশে গেলে তার ক্ষতিও করতে পারেন। এই হুমকিতে তার ভেতরে মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, দুজনের মধ্যে চলা বাকবিতণ্ডা চলাকালে দুজনই অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা ‘বস্তি’র ভাষাকেও হার মানিয়েছে। তাদের মধ্যকার হট্টগোলে সোসাইটির নিচে রাস্তায় লোক জড়ো হয়ে যায়। এই হট্টগোলের সময় বাইরে বেশ কয়েকজন নবনিযুক্ত ট্রাস্টি পরবর্তী যৌথ মিটিয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাস্টি বলেন, যে ভাষায় একে অপরকে আক্রমণ করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এটা কারো কাম্য নয়। বিব্রতকর বটে। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা উচিত- এটা কারো ব্যক্তিগত সংগঠন নয়। বাংলাদেশ সোসাইটির ভবনে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত. অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। 
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য মহিউদ্দিন দেওয়ানকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে টেক্সট মেসেজে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিরতি মেসেজে এ ব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য নেই। 
সংগঠনের জনসংযোগ ও প্রচার  সম্পাদক রিজু মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। 
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকী ঠিকানাকে জানান, যা ঘটেছে তা ছিল অপ্রত্যাশিত। আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছি ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে। তিনি বলেন, সভাপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। ভবিষ্যতে আবারো এ ধরনের অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা কেউ ঘটালে সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষার প্রয়োজনে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার আগে সামাজিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী সভায় প্রয়োজনে রেজুলেশন হবে। 
এদিকে বাংলাদেশ সোসাইটির জনসংযোগ ও প্রচার  সম্পাদক রিজু মোহাম্মদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে কার্যকরী পরিষদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোসাইটির কার্যালয়ে গত ২ জুলাই রোববার বিকেল ২ টায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
সভায় সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুর রব মিয়ার নেতৃত্বে কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা নবনির্বাচিত বোর্ড অব ট্রাস্টির  সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এসময় কার্যকরী পরিষদ সদস্যরা তাদের দেয়া বক্তব্যে  সোসাইটিকে আরো গতিশীল এবং কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত করতে তাদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা কামনা করেন। 
নবনির্বাচিত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. আক্তার হোসেন, মফিজুর রহমান, আজিমুর রহমান বোরহান, মো. এমদাদুল হক কামাল, আব্দুল হাসিম হাসনু, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, মো. শাহজাহান সিরাজী, খোকন মোশারফ, মো. জহিরুল ইসলাম মোল্লা, মো. আতোয়ারুল আলম। 
বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা তাদের নির্বাচিত করে বাংলাদেশ সোসাইটির কল্যাণে তাদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য কার্যকরী পরিষদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এসময় তারা বলেন, সোসাইটিকে আরো গণমুখী এবং কল্যাণকর সংগঠনে পরিণত করতে যেকোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য তারা সবসময় প্রস্তুত আছেন।
এর আগে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের নিয়মিত মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়।  সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুর রব মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকীর পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ-সভাপতি ফারুক চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ মোঃ নওশেদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম ভূঁইয়া, জনসংযোগ ও প্রচার  সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. টিপু খান, সাহিত্য সম্পাদক ফয়সল আহমদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক মাইনুল উদ্দিন মাহবুব, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য, কার্যকরী সদস্য ফারহানা চৌধুরী, মো. আখতার বাবুল, আবুল বাশার ভূঁইয়া, মোহাম্মদ সাদী মিন্টু ও শাহ মিজানুর রহমান।

কমেন্ট বক্স