কোনো পণ্য নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মজুদ রাখলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কৃষিজাত দ্রব্যাদি কি আমদানি করা পণ্য, ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ দিন গুদামে ধরে রাখা যাবে। নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে তা হবে অপরাধ। এ জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অর্থদণ্ড, ছয় মাসের সশ্রম দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে নির্দিষ্ট সময়ের পর পণ্য ধরে রাখা, মজুদ করা যাবে না।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আমদানিকৃত চিনি, সয়াবিন তেলসহ সব রকম ভোজ্যতেল এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ধান, চাল, গম, আটা, ময়দা, চিনির ক্ষেত্রেও এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য প্রস্তাবিত আইনবহির্ভূত থাকবে। খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিতরণ ও বিপণন আইন ২০২৩ এবং এর বিধিমালা মজুদবিরোধী উল্লেখিত ব্যবস্থাসহ আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চাল, ধান, গম/গমজাত দ্রব্যাদি, পরিশোধিত চিনি, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, ডালসহ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত পণ্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে মজুদ রাখার পরিমাণ ও সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। জানা যায়, প্রস্তাবিত আইনে চাল ও ধান পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০০ মে. টন সর্বাধিক ৩০ দিন মজুদ রাখা যাবে। খুচরা পর্যায়ে ১৫ দিন সর্বোচ্চ ১৫ মে. টন চাল মজুদ রাখা যাবে। শতভাগ আমদানি করা পণ্য আমদানিকারক সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। গম ও গমজাত পণ্য পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২০০ মে. টন ৩০ দিন এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১০ মে. টন ১৫ দিন অবিক্রীত অবস্থায় রাখা যাবে। পাইকারি বিক্রেতা পরিশোধিত চিনি সর্বোচ্চ ৫০ মে. টন ৩০ দিন এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৫ মে. টন সর্বাধিক ২০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। সয়াবিন ও পাম অয়েলের বেলায়ও পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মজুদ রাখার পরিমাণ ও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একজন পাইকারি বিক্রেতা পরিশোধিত সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ ৩০ মে. টন ৩০ দিন এবং খুচরা বিক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ মে. টন সর্বাধিক ২০ দিন অবিক্রীত অবস্থায় হাতে রাখতে পারবেন। একজন আমদানিকারক আমদানি করা পরিশোধিত সয়াবিনের শতকরা ২৫ ভাগ সর্বোচ্চ ৫০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। বাকি ৭৫ ভাগ আমদানির পর পরই বাজারে ছাড়তে হবে। পাইকারি পর্যায়ে পরিশোধিত পাম অয়েল সর্বোচ্চ ৩০ মে. টন সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখা যাবে। খুচরা বিক্রেতা তা সর্বোচ্চ ২০ দিন রাখতে পারবেন অবিক্রীত অবস্থায়।
পাইকারি বিক্রেতা সর্বাধিক ৪০ মে. টন ডাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন এবং খুচরা বিক্রেতা সর্বাধিক ৫ মে. টন সর্বোচ্চ ২০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। আমদানি করা ডালের ২৫ ভাগের কম যেকোনো পরিমাণ সর্বোচ্চ ৬০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। অবশিষ্ট ৭৫ শতাংশ ডাল আমদানির পরপরই বাজারে ছাড়তে হবে। প্রস্তাবিত আইনে চালকল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। একজন চালকল মালিক তার অটোমেটিক মেশিনে ১৫ দিনে যে পরিমাণ চাল ছাঁটাই করা হয়, তার ৫ গুণ চাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। হাসকিং মেশিনে ধান ছাঁটাই ক্ষমতার সর্বোচ্চ ৫ গুণ সর্বোচ্চ ৩০ দিন এবং চাল সর্বোচ্চ ১০০ মে. টন সর্বাধিক ১৫ দিন অবিক্রীত অবস্থায় রাখা যাবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার এসব ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। এর ব্যতিক্রমকারীদের নিম্নে ৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা যাবে। সশস্ত্র কারাদণ্ড হবে ছয় মাস এবং জেল ও অর্থদণ্ড দুটোই একসঙ্গে করা যাবে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই আইন ও বিধিবিধান কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত সকল ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগও নেয়নি। সবই বাণিজ্যমন্ত্রী আর খাদ্যমন্ত্রীর মুখের কথায় রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনটি সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাস আগেই খসড়া পর্যায়ে ছিল। এখনো তা খসড়াই রয়ে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আগেকার ভ্রাম্যমাণ আদালতও তেমন একটা কার্যকর আছে বলে দৃশ্যমান নয়। পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য ভোক্তা সাধারণের কাছে সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাজার পরিস্থিতি উল্টো কথা বলছে। রমজানে তা আরও এক দফা বেড়েছে। সরকারি কোনো তৎপরতাও লক্ষণীয় নয়।


ঠিকানা রিপোর্ট


