হাতে অনেক কাজ কিন্তু কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না- এরকম মাঝেমধ্যে হতেই পারে।তবে কোনো কিছু করার উৎসাহের অভাব হলে আর সেটা অনেকদিন ধরে চলতে থাকলে, ধরে নিতে হবে মানসিক সমস্যা চলছে। যাকে বলে ‘অ্যাভোলিশন’।
‘অ্যাভোলিশন’ বলতে যা বোঝায়
“কোনো লক্ষ্য অর্জনে জড়িত হওয়ার অক্ষমতাকে বলা হয় ‘অ্যাভোলিশন”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন মার্কিন মনোবিজ্ঞানি ওয়েন্ডি ও’কনর।
যদিও সাময়িকভাবে অনুপ্রেরণা হারানোর মতো ঘটনা মানসিক জগতে ঘটতেই পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এরকম চললে জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেখা দেয় নানান মানসিক সমস্যা। যেমন- বিষণ্নতা, ‘বাইপোলার ডিজঅর্ডার’ এবং ‘শিজোফ্রেনিয়া’।
সাময়িকভাবে অনুৎসাহ বোধ করা আর ‘অ্যাভোলিশন’য়ের সাথে প্রধান পার্থক্য হল- এটা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা।
ও’কনর বলেন, “অনুপ্রেরণার অভাব বোধ করা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তবে জীবনে, সম্পর্কে, ভালো থাকাতে যদি এটা হস্তক্ষেপ করা শুরু করে তাহলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।”
যে কারণে অনুপ্রেরণার অভাব হয়
“প্রতিদিন অনুপ্রেরণা বোধ করা অবাস্তব ব্যাপার”- মন্তব্য করেন ও’কনর।
তার কথায়, “বাস্তব বিষয় হল- অনুপ্রেরণা অনেকটা আবহাওয়ার মতো। ওঠা-নামা থাকবেই।”
মানসিক সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় অনুপ্রেরণা কমে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে।
অনুপ্রেরণাকে সমুদ্রের মতো মনে করলে, এর জোয়ার ভাটা চলবেই।
“বর্তমানে অনুপ্রেরণা কমে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে আছে- আবিষ্টতা, দ্বিধা, চাপে থাকা ইত্যাদি। এসবের কারণে অনেক সময় জীবনটাকে খেলো মনে হয়, মনে হয় এর কোনো মানেই হয় না। ফলে কোনো কিছু করার উৎসাহের মাত্রা কমতে থাকে”- বলেন ও’কনর।
‘অ্যাভোলিশন’য়ের অনুভূতি কেমন
ও’কনর বলেন, “অ্যাভোলিশন’য়ের লক্ষণ একেকজনের একেকরকম হয়।”
যেমন- কারও কাছে হতে পারে, মেসেজ বা ইমেইলের জবাব দিতে ইচ্ছে না হওয়া। কারও কাছে সারাদিন কোনো কাজ না করে বসে থাকা। আবার কারও ক্ষেত্রে হতে পারে নিজেকে যত্ন ও পরিচ্ছন্ন না রাখা।
“এই অনুভূতির কারণে কোনো কিছু করার আগ্রহ পায় না, এমনকি অবশ অনুভূত হতে পারে”- বলেন এই ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
যখন উদ্বেগের কারণ
ভেতর বা বাইরে থেকে, ছোট কিংবা বড়- কোনো অনুপ্রেরণাই যখন আসে না, আর সেটা জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলা শুরু করলে অবশ্যই বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।
ও’কনর বলেন, “কোনো কিছু করার উৎসাহ না পাওয়ার বিষয়টিকে যদি সাময়িক না মনে হয় তবে অবশ্যই আপনাকে সাহায্য নিতে হবে।”
আচরণগত সক্রিয়তা পদ্ধতি
মানসিক সমস্যার সাথে ‘অ্যাভোলিশন’য়ের লক্ষণ থাকলে, ও’কনর- আচরণগত সক্রিয়তার পদ্ধতি বা ‘কগনেটিভ বিহেইভিয়োরাল থেরাপি (সিবিটি)’ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট আচরণের মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি ঘটানো হয়।
ও’কনর বলেন, “এই পন্থার প্রধান বিষয় হল- ‘যতক্ষণ না হচ্ছে ততক্ষণ মিথ্যাভাব ধরে যাওয়া’। মানে যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন সেটা অল্প করে শুরু করা, আর এমনভাব ধরা- এটাতো হয়েই যাবে।”
সবসময় মনে করা হয় কাজের আগে অনুপ্রেরণা দরকার। তবে উল্টোটাও হয়। কাজ শুরু করলে অনুপ্রেরণা ফিরে আসতে থাকে।
ছোট বিরতি নেওয়া
কোনো উদ্দেশ্য পূরণের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার অভাব হলে, ছোট বিরতি নেওয়ার পরামর্শ দেন- ও’কনর।
এর ফলে নতুন করে ভাবতেও সাহায্য করে। আর অনুপ্রেরণায় অনুরণন ঘটে।
তবে এই বিরতি বেশি সময় ধরে নেওয়া যাবে না। তাহলে উল্টো ফল হবে।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া
থেরাপি নেওয়া বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া এক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগের কারণ নির্ণয় করে সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
কাছের মানুষদের সাহায্য নেওয়া
মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি কাছের মানুষদের সাহায্য নেওয়া আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এসব ক্ষেত্রে। স্বাস্থ্যকর জীবনের রুটিনে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি সেটাতে অভ্যস্ত হওয়াতে সাহায্য করবে তারা।
হতে পারে সে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ কিংবা জীবনসঙ্গী।
এক্ষেত্রে সহানুভূতিশীল, সাহায্যকারী ও সহায়ক মানুষদের সাথে থাকার পরামর্শ দেন, ও’কনর।
ঠিকানা/এসআর