Thikana News
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

কোভিড দেখিয়ে দিয়েছে, দেশে   চিকিৎসা গবেষণা দরকার

কোভিড দেখিয়ে দিয়েছে, দেশে   চিকিৎসা গবেষণা দরকার
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) টানা দুবারের কোষাধ্যক্ষ এবং বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি মেডিসিন) বিভাগের চেয়ারম্যান। তিনি একাধারে একজন বরেণ্য চিকিৎসক, শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক ও চিকিৎসা-বিষয়ক কলামিস্ট। ডা. আতিক ১৯৯৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বক্ষব্যাধির ওপর এমডি এবং ২০১৪ সালে আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিশিয়ান্স থেকে এফসিসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত নানা সংকট ও সমাধানে তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

অধ্যাপক আতিকুর রহমান অত্যন্ত সময়নিষ্ঠ এবং ভীষণ কাজপাগল মানুষ। রোগী তথা মানুষের সেবা এখন তার কাছে আর পেশা নয়, অনেকটা নেশার মতো হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থী আর রোগী নিয়ে দিনরাত ব্যস্ততার মধ্যেও আবার সময় দিচ্ছেন প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ কাজে। তাই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এবং রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যানের মতো বড় দুটি দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পালন করে চলেছেন। গত ১৩ মে শনিবার ঢাকায় বিএসএমএমইউতে নিজ অফিসকক্ষে ডা. আতিক দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাতের নানা সংকট, সমাধান ও সম্ভাবনা নিয়ে ঠিকানার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন। অধ্যাপক আতিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ ঠিকানার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নূরুল ইসলাম


ঠিকানা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রোগীদের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। দিন দিন এই হাসপাতালকে ঘিরে রোগীদের প্রত্যাশা বাড়ছে। আপনারা কীভাবে রোগীদের ভরসাস্থল হয়ে উঠলেন?
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বঙ্গবন্ধুর নামের প্রতিষ্ঠান, জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমাদের প্রথম টার্গেট ছিল চিকিৎসাসেবাটা তিনটি জিনিসের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া। ১. স্বাস্থ্যশিক্ষা, ২. স্বাস্থ্যসেবা ও ৩. স্বাস্থ্যগবেষণা। আমরা চেষ্টা করছি, সব ধরনের রোগীকে যেন এখান থেকে চিকিৎসাসেবাটা দিতে পারি। যারা দরিদ্র শ্রেণির, তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। তাই অতিদরিদ্র তহবিল থেকে তিন ধাপে তিনি ২৫ থেকে ৩৫ কোটি টাকা এখানে দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি, অল্প খরচে রোগীদের উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা দিতে, যে কারণে বিএসএমএমইউর প্রতি দিন দিন মানুষের আস্থা ও প্রত্যাশা বাড়ছে।
ঠিকানা : অভিযোগ রয়েছে, আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে প্রতিদিন রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যেমন টিকিট নিতে দীর্ঘ লাইন এবং আলট্রাসনো, এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান করার জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয়। আউটডোরের এই চিকিৎসাসেবাকে আরও সহজীকরণ করতে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : আমরা ইনডোর-আউটডোরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করি। এখানে যেসব রোগী আসেন, তাদেরকে দেখে আমরা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠাই। ভর্তির দরকার হলে ভর্তির ব্যবস্থা করি। আউটডোরে প্রতিদিন সকালে প্রায় ১০ হাজার রোগী দেখা হয়। আমাদের স্পেশাল বৈকালিক আউটডোরও আছে। এখানে প্রায় ৫৬টি বিভাগ আছে। তাই রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। সে জন্য হয়তো আমরা একটু হিমশিম খাচ্ছি। তবে সেটা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমরা এখন অনলাইন টিকিটের ব্যবস্থা করেছি। যারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে আসবে, তাদের নির্দিষ্ট সময় ও রুম নম্বর দেওয়া থাকবে। তাহলে লাইনের চাপ কিছুটা কমবে। সবাই সকাল সাতটা বাজে উপস্থিত হলে লাইনের একটা ধাক্কা পড়ে, পরীক্ষার বেলায়ও সেটাই ঘটে। তাই আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব ভালো সার্ভিস দেওয়ার। তবে গরিব মানুষ তো অনলাইনে টিকিট করতে পারবে না। তাদের ক্ষেত্রে সকালবেলা লাইন ধরে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে।
ঠিকানা : বিএসএমএমইউ রোগীদের প্রত্যাশা পূরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তার পরও প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসাসেবা নিতে ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় যান। এতে প্রতিবছর বিশাল অঙ্কের টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসা নিতে রোগীদের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে বিএসএমএমইউর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : সবাই যে বিদেশ যাচ্ছে, তা নয়। আসলে বাংলাদেশে চিকিৎসা হচ্ছে না বা নেই, এ কারণে কিন্তু মানুষ বিদেশে যায় না। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তারা মূলত চেকআপের জন্য যায়। আবার কেউ কেউ ঘুরতে যাচ্ছে, সঙ্গে চিকিৎসাটাও করছে। একদিকে ঘোরাও হলো আবার চিকিৎসাও হলো। এ ছাড়া অনেকে সুন্দর পরিবেশের জন্যও বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়। তবে কিছু কিছু জায়গায় আমাদের দুর্বলতা আছে, সেটা খুব বেশি নয়। আগে যেমন হৃদরোগীদের বেলায় ছিল, কিন্তু এখন বাংলাদেশ হৃদরোগীদের জন্য অনেক এগিয়ে গেছে। তবে খুব সীমিত আকারে বাইরে যাওয়ার জন্য যেটা দরকার, যা বাংলাদেশে নেই, তখন যাচ্ছে।
বিদেশযাত্রা ঠেকানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে অনেক স্পেশাল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের এখানেও দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তায় একটা সুপার স্পেশাল হাসপাতাল হয়েছে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেছেন কিন্তু এটি এখনো চালু করতে পারিনি। এ জন্য আরও কিছু জিনিসপত্র লাগবে, স্পেশালাইজড লোকজনও নিয়োগ দিতে হবে। স্পেশালাইজড ডাক্তার নিয়োগ এবং জিনিসপত্র এলেই সেটি চালু হবে। আশা করছি, এটি চালু হলে এখানকার চিকিৎসার মান আরও উন্নত হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী দেশে কিছু সুপার স্পেশাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেমন বার্ন সেন্টার, নিউরোলজি সেন্টার, ইএনটি সেন্টার প্রভৃতি। নির্দিষ্ট রোগের জন্য নির্দিষ্ট ইনস্টিটিউট তৈরি করা হয়েছে, যাতে মানুষ ভালো সেবা পেয়ে বিদেশমুখী না হয়।
ঠিকানা : দেশে কি চিকিৎসক সংকট আছে?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : দেশে চিকিৎসক সংকট নেই, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট আছে। যেমন বাংলাদেশে অ্যাজমার ডাক্তার কিন্তু কম নেই, দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের ঘাটতিটা কোথায়? আমাদের পালমনোলজিস্ট তথা ফুসফুসের ডাক্তার অনেক কম। কোভিডের সময় দেখা গেছে, সারা বিশ্বেই পালমনোলজিস্টের সংকট।
ঠিকানা : বহির্বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা কি পিছিয়ে আছে?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেও সেবা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ চিকিৎসা, শিক্ষা ও সেবায় এগিয়ে আছে; কেবল পিছিয়ে আছে গবেষণায়। গবেষণার জন্য তো অনেক টাকার দরকার। হুট করেই আমরা কোভিডের জন্য গবেষণা করব, সে রকম সক্ষমতা তো এখনো অর্জন করিনি। ভারতও তো ভ্যাকসিন তৈরি করেনি। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন কিন্তু ওরা নিজেরা তৈরি করেনি। তবে ধীরে ধীরে আমরা গবেষণায়ও সফল হব। কারণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গবেষণার দিকে বেশি নজর দিয়েছেন, যদিও গবেষণাটা আমরা এখনো অত দূর করতে পারিনি। কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে জায়গায় গিয়েছে, চিকিৎসা গবেষণাটা অত দূর যেতে পারেনি।
ঠিকানা : গত ২ মে মঙ্গলবার ছিল বিশ্ব অ্যাজমা বা হাঁপানি দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটির বেশি মানুষ এখন অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছে। দিন দিন কেন মানুষ আশঙ্কাজনক হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেÑএ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তার হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কী?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : প্রথমত বৈশ্বিক পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন বিশাল একটা ফ্যাক্ট। বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো বায়ুদূষণে শীর্ষে। দেশে অসংখ্য কলকারখানা রয়েছে। এসব থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করছে। অনিবন্ধিত অনেক যানবাহন কার্বন নিঃসরণ করছে। সেগুলো বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, যেমন মেট্রোরেল। যেখানে উন্নয়ন হবে সেখানে বায়ুদূষণ হবেই। তবে বায়ুদূষণ থেকে আমরা ইচ্ছা করলে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারি। যেমন কোভিডকালে আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো মেনে চলতাম। মাস্ক পরিধান করতাম। তখন অ্যাজমার অ্যাটাক কম ছিল। এখন আবার আমরা আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছি। তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধিটা মানলেই অ্যাজমা রোগ থেকে অনেকটা সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।
ঠিকানা : অভিযোগ রয়েছে, দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ অ্যাজমা রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিএসএমএমইউর বক্ষব্যাধি বিভাগের একজন সফল চেয়ারম্যান হিসেবে এ বিষয়ে আপনার কোনো উদ্যোগ কিংবা পরামর্শ আছে কি?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : কোভিডকালে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতার জায়গাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। এই সময়টায় আমরা উপলব্ধি করেছি, চিকিৎসায় আমাদের গবেষণা দরকার। তাই আমরা এখন দ্রুত গতিতে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। সেই চিন্তা করেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আমরা পালমনোলজি বিভাগে ছাত্র ভর্তির সংখ্যা বাড়িয়েছি। প্রতিবছর এই কোর্সে যেখানে ৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতো, এই প্রথমবার সেটা বাড়িয়ে ১৮ জন ভর্তি করেছি। এটা প্রায় আড়াই গুণ। কোভিড দেখিয়ে দিয়েছে, দেশে চিকিৎসা গবেষণা দরকার। তবে রাতারাতি তো স্পেশালিস্ট তৈরি করতে পারব না, এটা সময়ের ব্যাপার। প্রতিবছর যদি ১৮ জন পালমনোলজিস্ট বের হয়, তাহলে আশা করা যায়, কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের সব অ্যাজমা রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাবে।
ঠিকানা : অ্যাজমা রোগীদের জন্য আপনার বিশেষ পরামর্শ কী?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : যতটা সম্ভব ঘর থেকে কম বের হওয়া আর প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলা। যারা ধূমপান করেন বা তামাক-জর্দা খান, তাদের অবশ্যই এটা বন্ধ করতে হবে।
ঠিকানা : আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এবং রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান। সফলতার সঙ্গে বড় দুটি দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করে চলেছেন। আপনার এই সফলতার রহস্য কী?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : সময়। মানুষকে প্রচুর সময় দিতে হয়। আমি কখনো অফিস টাইম মেনটেইন করি না। আমার অফিস সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হলেও রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত কাজ করি। এটা অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। মূলত বেশি সময় দেওয়ার কারণেই দুটি দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করা সম্ভব হচ্ছে।
ঠিকানা : করোনা মহামারির শুরুতে দেশ-বিদেশের মানুষ আশঙ্কা করেছিল, বাংলাদেশে লাখ লাখ লোক করোনায় মারা যাবে। রাস্তাঘাটে মানুষের মরদেহ পড়ে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটি। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক উন্নত দেশ করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ পুরোপুরি সফল। মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের আশ্চর্য রকমের সফলতার কারণ কী?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের প্রতিটি উপজেলার দুটি স্থানে কোভিড-১৯ টেস্টের ব্যবস্থা ছিল। প্রতিটি জেলা সদরে আইসিইউর ব্যবস্থা ছিল, যাতে করোনার প্রথম সেবা অক্সিজেনটা রোগীরা পায়। হাসপাতাল ছাড়াও দেশের প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে কোভিডের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক কোভিড টেস্ট করার সুযোগ পেয়েছে। ঢাকাসহ দেশের সব হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সরা জীবন বাজি রেখে করোনাক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন। তাই আমরা খুব দ্রুত করোনা মোকাবিলায় সক্ষম হই এবং আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যায়নি। অন্যদিকে আমেরিকার মতো উন্নত দেশও কোভিডের সময় ধরা খেয়েছে। তাদের বড় বড় মেডিকেল সেন্টার ছিল ঠিকই, কিন্তু আমাদের দেশের মতো তৃণমূল পর্যায়ে ছিল না। তাই তারা সারা দেশের সব জায়গায় চিকিৎসা দিতে পারেনি। যে কারণে আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুও হয়েছে সর্বাধিক।
ঠিকানা : বিএসএমএমইউ এবং এর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : বিএসএমএমইউকে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করতে চাই। এ জন্য আধুনিক গবেষণা, নিষ্ঠার সঙ্গে সেবা এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
ঠিকানা : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন জার্নালে আপনার লেখা ৪৭টি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় সংবাদপত্রগুলোতে চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত কলামও লেখেন। পেশাগত, সংগঠনগত বিরাট কাজের পরও কীভাবে লেখালেখির জন্য সময় বের করেন?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : মানুষের জন্য সেবা করার ঐকান্তিক ইচ্ছাই সব ধরনের কাজ করতে আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়।
ঠিকানা : আপনার শৈশব কোথায় কেটেছে এবং কেমন ছিল সেই সময়টা?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : আমার জন্ম সিলেটের বালাগঞ্জে, ১৯৬৯ সালের ১৫ মে। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে শৈশব-কৈশোর কেটেছে। সেই সময়টা ছিল সত্যিই দারুণ। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তি হই।
ঠিকানা : আপনার পরিবার সম্পর্কে জানাবেন কি?
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : আমার দুই কন্যাসন্তান। বড়জন কলেজে আর ছোটজন স্কুলে পড়ে। আমার সহধর্মিণী কাজী রাহিলা ফেরদৌসীও একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে হৃদরোগের ওপর পিএইচডি করছেন। আমার দুই ভাই আমেরিকা প্রবাসী।
ঠিকানা : ঠিকানা সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে ঠিকানা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা বলছে, যা এককথায় অসাধারণ। আমেরিকার মাটিতে তুলে ধরছে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতিকে, এতে আমি ভীষণ মুগ্ধ। ঠিকানার এই পথচলা অব্যাহত থাকুক।
ঠিকানা : মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অধ্যাপক আতিকুর রহমান : আপনি এবং ঠিকানা পরিবারকেও ধন্যবাদ।
 

কমেন্ট বক্স