নন্দিনী মুস্তাফী
টুক! টুক! টুকটাক!
দু’হাত প্রসারিত করে খুলেছিলাম বন্ধ দুয়ার।
‘ওয়েলকাম এঞ্জেলিকা!!’
রং-বেরঙের পাতায় লেখা আর
ডেইজি গোলাপের ঘ্রাণের ভেতরে
ভয়ানক এক ঘুমে ঘুমিয়ে আছে
আদুল গায়ের স্বর্গের দেবশিশু।
ঝাঁকড়া চুলে সিঁথির পাশে
ক্লিপ আঁটা লালে সাদায়,
অবাক করা দৃষ্টি নিয়ে
থমকে দাঁড়াই কয়েক পলে।
চার মাসের আয়ুর মাঝেই
বুঝে গেছে সে পলের হিসাব,
টোল পড়া দুটো গালেই যেন
চেপে ধরা অক্সিজেনের নজুলখানি
সুস্পষ্ট শ্বেতকায় দুটো বেদনার পদ্ম।
হৃদয়ের স্পন্দন বড়ই ক্ষীণতর
জন্মের তিথিডোরেই কী এক কষ্ট নিয়ে
জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে;-
পা রেখেছিল ধরার ’পরে
চোখ মেলেনি পলকের তরে
কচি পিঠে শ্বাসের চাবি বইতে হলেও
থেমে যাবে কয়েক দিন বা মাসের বলয়!
সাত-আটজনের ডাক্তার নার্স
ঘিরে দাঁড়িয়ে নিমগ্নতা নিয়ে
কিছুটা দ্বিধান্বিত অনুতাপের অনুরণে,
গর্ভধারিণী এক সমুদ্রজলে ভেসে
এক মুঠো সেই পুতুলটাকে
আঁকড়ে নিয়ে বুকের ভেতর;-
নীরব নিথর আক্ষেপেতে
মরণঘুমের নীলের পাতায়,
নাড়িছেঁড়া টুকরোটাকে
কমফোর্ট কেয়ারের তত্ত্বাবধানে
সম্মতি দেয় সব হারিয়ে।
(বি. দ্র. চার মাসের শিশু এঞ্জেলিকাকে বাঁচানো যাবে না কিছুতেই। অনেক চেষ্টা করেছে বড় বড় ডাক্তার। তাই বাবা-মায়ের সম্মতিতেই আজ ওকে কমফোর্ট কেয়ারে দেওয়া হলো। কাল গিয়ে হয়তো পাব না। চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছে হয়তো এরই মাঝে। মরফিনের ডোজ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিনে কষ্টে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে যাবে। আহা! জীবন। মনটা ভীষণ রকমের খারাপ হয়ে আছে।)