দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের আন্দোলন শুরুর চিন্তাভাবনা থাকলেও সরকারের বিরুদ্ধে আপাতত বড় কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাসহ বিরাট সংখ্যক নেতাকর্মীই বর্তমানে কারাগারে। অনেকের নামে রয়েছে মামলা, অনেকে আছেন আত্মগোপনে। এ অবস্থায় হরতাল-অবরোধের বাইরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। একই সঙ্গে নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে চান তারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর ৭ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মূল্যায়ন, তাদের ভোট বর্জনের ডাকে জনগণ সাড়া দিয়েছে। মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি। কোনো কেন্দ্রে ভোটারের লাইন দেখা যায়নি। সুতরাং নির্বাচন বর্জনের আন্দোলন সফল হয়েছে। তাদের ধারণা, ১০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। সারা দিন কেন্দ্রগুলো খালি ছিল। সেখানে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট দেশ-বিদেশে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। আবার নির্বাচনের শেষ এক ঘণ্টায় ১৪ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয়েছে। এক ঘণ্টায় এত ভোট পড়ায় ভোটে কী ধরনের কারচুপি হয়েছে, তা সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ফলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ও চলমান আন্দোলন নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলোর সঙ্গে ৯ জানুয়ারি বৈঠক করেছে বিএনপি। ওইদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুটি জোট ও একটি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দলটির নেতারা। প্রথমে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক হয় বিকেল সাড়ে চারটায়। এরপর পর্যায়ক্রমে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনে কারচুপির কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে এবং নানামুখী চাপ প্রয়োগ করতে পারে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ভোট সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে হয়নি। পশ্চিমারা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সে পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, নেতাকর্মীরা অনেক দিন কারাগারে আছেন। তাই নির্বাচনের পর এখন নেতাকর্মীদের জামিনের বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া হরতাল-অবরোধে নেতাকর্মীরা বেশ ক্লান্ত। এসব দিক বিবেচনা করে এখন কঠোর কর্মসূচি না দেওয়ার পক্ষে অধিকাংশ নেতা। নির্বাচনের সার্বিক দিক নিয়ে আগামী বৃহস্পতি কিংবা শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করার কথা চিন্তা করছে বিএনপি। সেদিন পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
অন্যদিকে ভোটে সহিংসতা, জাল ভোটসহ নানা অনিয়মের ঘটনা নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করছে বিএনপি। এরই মধ্যে ২৯৯ আসনে অনিয়মের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগির ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, মূলত আমরা নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে অসহযোগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। এই ভোট বর্জন হয়েছে।
আমরা গণতান্ত্রিক দল শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি। আমরা নির্বাচনে বাধা দিতে যাইনি। তারা (সরকার) নিজেরা বাধা দিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলি করেছে, মানুষের প্রাণ ক্ষয় হয়েছে, আহত হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছেÑসবই হয়েছে তারা তারা।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষে ৬৩টি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। এই সরকারের অবৈধ, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ব্যবস্থাপনাকে জনগণ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।