শামীম আরা ডোরা : ছোট পাখির জন্য ভালোবাসা মেয়েটির কাছে নতুন কোনো ভাবনা নয়। ছোটবেলা হতেই ছোট্ট পাখির সঙ্গে সখ্য করতে চায়। বন্ধুত্ব গড়তে আগ্রহী। জানালার কার্নিশে দেখতে পায় ছোট্ট পাখি। কিছুদিন পরে আরও ছোট্ট দুটি পাখি। বুঝতে কষ্ট হয় না পাখির ছানা। হঠাৎ একদিন ইচ্ছে হলো পাখির বাসা বানিয়ে দেবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। পাখিটিও ছানা দুটিকে নিয়ে নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছিল। মাঝেমধ্যে খাবার দেওয়া, পানি দেওয়া সবই চলত।
ভাবখানা দেখে মনে হতো, পাখিরা ওর মনের কথা বুঝতে পারে। দুই পক্ষই কখনো কখনো নীরবে যার যার ভাষা চালিয়ে যাচ্ছে। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে পাখি, পাখির ছানা, পাখির বাসা কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। নিজেকেই অনেকবার প্রশ্ন করেÑএমনটি হলো কেন? তবে সে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি।
ভারতীয় ভদ্রমহিলা একই সোসাইটিতে একা থাকেন। ভীষণ পাখিপ্রেমিক। তার অ্যাপার্টমেন্ট বলতে গেলে ছোটখাটো একটি চিড়িয়াখানা। নিপুণ হস্তে পাখির পরিচর্যা করেন। মেয়েটি কান পেতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ মনোযোগ দিয়ে শোনে।
টিভির পর্দায় মেয়েটি বাবা-মায়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংবাদ দেখছিল। ফিলিস্তিনি এক শিশু তার পরিবারের সঙ্গে নীড়হারা। তবে প্রিয় পাখিটিকে নিয়ে চলছে। তীরভাঙা ঢেউ এসে তার নীড় ভেঙে দিয়ে গেলেও পোষা পাখিটিকে হাতছাড়া করেনি, বরং খাঁচার পাখিটিকে নিয়ে অবিরাম হেঁটে চলছে। তার চারপাশে স্বজনহারা আহাজারিÑপথের মাঝে বিশ্রাম। পাখিটিকে কাঁধে বসিয়ে পানি খাওয়াচ্ছে। ছোট্ট ছোট্ট খাবার মুখে তুলে দিচ্ছে।
মেয়েটির কাছে মনে হচ্ছে যদিও শিশু, ভগ্ন বুকে পাখিটিকে নিয়ে এই অবিরাম যাত্রা। বাবা-মা তীক্ষè দৃষ্টিতে সন্তানের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করছেন। নীরবে বলে যাচ্ছেন, এই শিশু বালিকাটির মানবিক দক্ষতার কাছে আমরা অনেকেই হেরে গেছি! ‘তুমি একটি বিস্ময়।’
একের ভেতর তিন। এই তিনজনের ভালোবাসাকে আমি কী উদাহরণ-উপমা দেব, সে শব্দ আমার জানা নেই। কত কিছুই তো মানুষের হবি হতে পারে। ব্যতিক্রমী এক ভালোবাসা, যা অনুভবে ছুঁয়ে দেখা যায় কিন্তু প্রকাশ হয়তো সম্ভব নয়। আমার কাছে কোনো মানবিক আশা-আকাক্সক্ষার তুলনা হয় না। ছোট্ট পাখিÑসেও প্রাণের জিনিস এবং প্রাণস্পর্শী।
স্বামী বিবেকানন্দের সর্বাধিক উদ্ধৃত উক্তি:
‘জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।’
লেখক : অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ
বর্তমানে নিউইয়র্ক প্রবাসী