Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

ইউনূসে দেশি-বিদেশি সব ফ্রন্টকে লাল কার্ড

ইউনূসে দেশি-বিদেশি সব ফ্রন্টকে লাল কার্ড
বিশেষ প্রতিনিধি : যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের একান্তজন শান্তিতে নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শ্রম আইনে জরিমানাসহ সর্বোচ্চ সাজা ছয় মাসের কারাদণ্ড দেশি-বিদেশি ফ্রন্টগুলোর জন্য সরকারের কড়া বার্তা। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো প্রভাব পড়বে নাÑবলছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। একজন ব্যক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না তিনি। সব ফ্রন্টে একসঙ্গে যুদ্ধ বাধালে হিতে বিপরীত হয়, এতে হিটলারের পতনও ত্বরান্বিত হয়েছিল বলে একটি ভয় দেখানো হয় সরকারের শীর্ষ মহলকে।  কিন্তু গ্রাহ্য হয়নি। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রী এসবে সামান্যতম আমল দিতে রাজি নন। তিনি ডিফেন্স নয়, ফ্রন্টে খেলছেন। দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতি বিরাগও প্রকাশ করেছেন তিনি। ড. ইউনূসের রায়ের দিন রাজধানীর কলাবাগান মাঠের বিশাল জনসভায় তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র থাকলে বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বহীন হয়ে যান। তাদের মূল্যায়ন থাকে না। তাই নানা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন তারা।
ড. ইউনূসের কারাদণ্ডের খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান, বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স, কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরা, ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর, হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালফ নিউজ, ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করলেও সরকার এতে ভ্রুক্ষেপ করছে না। বরং এটি তেমন ঘটনা নয়, তা প্রমাণ ও প্রচারে বলা হচ্ছে, পৃথিবীর বহু নোবেল বিজয়ী শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন, জেল খেটেছেন। কারাগারে মৃত্যুবরণও করেছেন। নোবেলজয়ীদের জেল-জরিমানা বাংলাদেশের জন্য নতুন হলেও বিশ্বে নতুন নয়। জেল খেটে বা জেলে থেকে নোবেল পাওয়ার ঘটনা আছে কয়েকটি। আবার নোবেল পাওয়ার পর জেল খাটার ঘটনাও রয়েছে। এবারের শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইরানি নার্গেস মোহাম্মদি এখনো কারাগারেই আছেন। মাত্র মাস কয়েক আগে, বেলারুশের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং মানবাধিকার কর্মী আলেস বিলিয়াতস্কিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কারাবন্দী অবস্থায় শান্তিতে এর আগে নোবেল পেয়েছেন আরও চারজন। ১৯৩৫ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া জার্মান সাংবাদিক ও শান্তিবাদী কার্ল ভন ওসিয়েৎস্কি সে সময় আটক ছিলেন নাৎসি বন্দিশিবিরে। নোবেল পুরস্কার নিতে অসলোতেও যেতে দেওয়া হয়নি তাকে। ১৯৩৮ সালে বন্দী অবস্থায়ই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই নোবেলজয়ী। ১৯৯১ সালে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি শান্তিতে নোবেল পান বার্মায় গৃহবন্দী অবস্থায়। ২০১০ সালে জেলে থাকা চীনা ভিন্নমতাবলম্বী লিউ শিয়াওবো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। গণতন্ত্রপন্থী লিউকে দেওয়া হয় ১১ বছরের কারাদণ্ড। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর তার স্ত্রী লিউ শিয়াকে গৃহবন্দী করা হয় ও তিন ভাইকে চীন ত্যাগে বাধা দেওয়া হয়। লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ৬১ বছর বয়সে চীনের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
ফিলিপাইন, বেলারুশ বা ইরানের নোবেলজয়ীদের বিচার দিয়ে ড. ইউনূসের বিচারকে স্বাভাবিকতা দিতে চায় সরকার। নোবেল বিজয়ী কেউ অপরাধ করতে পারেন নাÑএমন কোনো কথা নেই। তিনি বা তারা বিচারের ঊর্ধ্বেও নন। বাংলাদেশে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েও দেশে-বিদেশে নানা আলোচনা চলমান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপিসহ কয়েকটি দলের তা বর্জনসহ একটি বাজে সময়ে নতুন বছরের প্রথম দিনে দেওয়া হলো ড. ইউনূসের মামলার রায়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আদালতে উপস্থিত ড. ইউনূস নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, যে দোষ করেননি সেই দোষেই তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এটা কপালে ছিল। মনে দুঃখ রয়ে গেল নববর্ষের আনন্দের দিনে আঘাতটা পেলেন বলে। ড. ইউনূসের এমন অভিব্যক্তি গণমাধ্যমে ব্যাপক আবেদন তৈরি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বইছে। এমন ঝড়ের সময় আবারও কঠিন সতর্কতা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের। বলেছেন, ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনের প্রভাবের কারণে এবার ভোটারদের আস্থার সংকট। আরও বলেছেন, সরকার বাধ্য ইসিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সহায়তা করতে। আবার সরকারের সহায়তা ছাড়া ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবও নয়। এই নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে প্রমাণ করতে হবে দলীয় সরকারের অধীনে ইসি ভালো নির্বাচন করতে পারে। আর কমিশনার মো. আনিছুর রহমানের বার্তা আরও কঠিন। তিনি বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে না পারলে দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ভোট সুষ্ঠু করতে না পারলে রাষ্ট্র ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে বলেও সতর্ক করেছেন এই কমিশনার।
কেন কী হয়েছে? সিইসি আউয়াল বা ইসি আনিছুর কিসের ভয় করছেন? বিএনপিসহ সমমনা বা তাদের মিত্রপক্ষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভয়? তারা কিছু ঘটিয়ে ফেলবে? যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নই-বা কিছু ঘটাতে পারে? নাকি নিজেদের ইমেজের ভয় করছে নির্বাচন কমিশন? সম্ভবত এগুলোর কোনোটাই নয়। এখানে সাবজেক্ট আন্তর্জাতিক মহল। আর নির্বাচন প্রশ্নে পিটার হাসের যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মহলের একটি অংশ মাত্র। কেন আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে? কয়েক দিন আগে তা কিছুটা খোলাসা করেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার কারণে উদ্বেগ নির্বাচন কমিশনের। সেখানে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
আইসিসিপিআরেও (ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস) ভোট দেওয়ার অধিকার, ভোট পাওয়ার অধিকার, নির্বাচিত হওয়ার অধিকারের বিষয়ে সুস্পষ্ট মানদণ্ড উল্লেখ আছে। বাংলাদেশও এতে অনুস্বাক্ষর করেছে। এতে ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির প্রতি একটি কঠিন দায়বদ্ধতার মুখে নির্বাচন কমিশন। আর জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা তো রয়েছেই। বলার অপেক্ষা নেই, আসন্ন নির্বাচন আক্ষরিক অর্থে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশের বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে নির্বাচনটি কার্যকরভাবে অংশগ্রহণমূলক হয় না। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, অহিংস, সুষ্ঠুসহ নির্বাচনের বাদবাকি শর্তগুলো পূরণ করা সম্ভব। এরপর গ্রহণযোগ্যতা বা ক্রেডিবিলিটির প্রশ্ন। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের তোড়জোড়, কিছু জায়গায় স্বতন্ত্র বা ডামিদের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং জাতীয় পার্টিসহ মিত্রদের উল্টাপাল্টা কাণ্ডে নির্বাচনটি যেন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পায়, সেই চেষ্টার অন্ত করছে না নির্বাচন কমিশন। সিইসিসহ বাকি কমিশনারদের সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ অব্যাহত রাখার নেপথ্য কারণ সেখানেই। তার ওপর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তো তার বিরুদ্ধে লেগেই আছে। এতে তার কিছু আসে যায় না। শেখ হাসিনার এমন সাহসের নেপথ্য কারণ তাকে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় রাখতে চীন, রাশিয়া ও ভারত এককাট্টা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রও হাল ছাড়ছে না। ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত দম নিচ্ছেন। তাদের নিষেধাজ্ঞা-ভিসানীতির ওয়ার্নিংয়ে সরকার ফরোয়া না করার পরও তিনি ঢাকা-দিল্লি করছেন। পিটার হাসকে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা এবং যা হওয়ার নির্বাচনের পর হবেÑভারতীয় এমন পরামর্শে নেপথ্য মাজেজা পরিষ্কার। এতে দম বা শ্বাস নেওয়া ছাড়া আপাতত করণীয় কিছু নেই হাসের। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বৈশিষ্ট্য। তাদের ভরসায় থাকা বিএনপিরও নিঃশ্বাস নেওয়াই নিয়তি। তার পরও মাঠ ছাড়া যায় না। নিভু নিভু হয়ে রাস্তায় লিফলেট বিতরণ আর কিছু ভার্চুয়াল কাজ ছাড়া গত্যন্তর নেই দলটির। লিফলেট বিতরণের মতো দায়সারা নামকাওয়াস্তের কর্মসূচিতে কোনোমতে নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার পাশাপাশি ভেতরে ভেতরে তারা এখনো ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হচ্ছে না মর্মে বেসুরে সুর তোলে। কিন্তু তা কীভাবে, কোন পথে, কোন শক্তিতে, তা বলতে পারে না। বিএনপির কিছু কিছু নেতা এখনো মনে করেন, নির্বাচনের আগে নাটকীয়ভাবে কোনো আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ হতে পারে। বিশেষ করে, পশ্চিমা দেশগুলো শেষ মুহূর্তে নাটকীয় কোনো পদক্ষেপ নেবে। তারা উদাহরণ দেখায় ২০০৭ সালের। ওই বছরের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তেও এ রকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নির্বাচন-পরবর্তী আন্তর্জাতিক চাপ, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদির আশায়ও বুক বাঁধছে বিএনপি। নিজেদের শক্তিতে নয়, অন্য কোনো ঘটনা ঘটলে বেনিফিশিয়ারি তারাই হবেন বলে যারপরনাই আশা ও অপেক্ষা তাদের।

 

কমেন্ট বক্স