Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
যা হয় নির্বাচনের পরে হবে : আ’লীগ, নির্বাচনের পরে দেখে নেবে বিএনপি

ডান-বাম মুচড়ে দুরন্ত সরকার

ডান-বাম মুচড়ে দুরন্ত সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ফাইল ছবি
 ভাগ-বাঁটোয়ারা, ডামি নির্বাচন, ভাগযোগের ভোট, বানরের পিঠা ভাগ, কর্তৃত্ববাদের কলঙ্কসহ নানা বদনামে থামতে বা পিছু হটতে নারাজ সরকার। অবিরাম এগিয়ে চলার সিদ্ধান্তে অটল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপিসহ কিছু মহলের এখনো ভোট না হওয়ার মাঝে আওয়ামী লীগ এগোচ্ছে হাইস্পিডে। নির্বাচনের ট্রেন স্টেশনে পৌঁছানোর সব আয়োজন ও টুলস তাদেরই হাতে। যা হওয়ার নির্বাচনের পরে হবেÑসরকারের এমন মানসিকতার বিপরীতে বিএনপির অপেক্ষা নির্বাচনের পর কী হয়, তা দেখার।
স্বাভাবিকভাবেই অনেক বড় প্রশ্নÑনির্বাচনের পর কী করবে বিএনপি? কী করার আছে তাদের? বিএনপির ভরসা বিদেশি শক্তিই-বা কী করতে পারে। স্যাংশন-রেস্ট্রিকশনে ভয় না পাওয়ার মনস্থিরের পাশাপাশি বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার অ্যাজেন্ডাও আছে। যার কিছু কিছু প্রকাশও পাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের কথা ও কাজে। তার ওপর বিএনপিকেই বহুল আলোচিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতিতে ফেলার চেষ্টা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসহযোগ আন্দোলনকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা উল্লেখ করে বিদেশিদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেনÑবিএনপির এ কর্মকাণ্ড কি ভিসানীতি কিংবা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে না? তা খতিয়ে দেখতে ঢাকায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, নির্বাচনে বাধাদানকারীদেরই ভিসানীতির আওতায় আনবে ইউরোপ-আমেরিকা। তাদের চাওয়া আর আওয়ামী লীগের চাওয়া এখন এক হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এমন পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবে বিএনপি? কীভাবে করবে আত্মরক্ষা?Ñএ প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার লোক নেই বিএনপিতে। দলের নাম্বার ওয়ানের থেকেও না থাকার অবস্থা। দ্বিতীয়জন দেশান্তরি। নেতাদের বেশির ভাগই কারাবন্দী। বাকিরা ফেরারি। কর্মীরা জান হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে। টানা ১৭ বছরের দুর্ভোগে কাহিল তারা। গত ১৫ বছরে তাদের শ্রম-ঘাম-আন্দোলন মাঠে মারা গেছে। বিদেশি ভরসা হয়েছে বুমেরাং। ওয়ান ইলেভেনের সিডর না কাটতেই ওই সরকারটির ফলোআপ হয়ে আসে বিএনপির জন্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের পর বিএনপি পড়ে যায় অস্তিত্ব সংকটে, যা চলছে অবিরাম। শুধরে নিয়ে শুদ্ধ কাজ করার রাস্তাও সংকীর্ণ হয়ে যায়। যা করে সবই ভুল হয়ে যায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাকে ভুল ধরা হয়। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে যাওয়াকেও বলা হয় ভুল। রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থাপনায় বিএনপিকে নিষিদ্ধের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সংবিধান ও নির্বাচন কার্যবিধি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকার সব ব্যবস্থা এখন সরকারের হাতে। এই আনডান অবস্থা থেকে বাঁচার দৃশ্যত অবস্থা নেই বিএনপির। সাংগঠনিক শক্তির প্রশ্নে সরকারের কিছুটা ভয় জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে। সেটাও আগের অবস্থায় নেই। সংগঠনটির বিএনপির কাছাকাছি যাওয়ার তথ্য পাওয়ামাত্র তা ভণ্ডুল করে দিচ্ছে সরকার। চরমোনাই বা ইসলামী আন্দোলনসহ ডান ঘরানার বাকি দলগুলোকে নিয়ে ভাবছে না সরকার। বাম ঘরানা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে আগেই। কখনো কখনো সরকারের তা করতেও হয় না। বামরা নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশে যথেষ্ট।
সিপিবি, বাসদ, গণসংহতিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের এককভাবে কর্মসূচি পালনের সক্ষমতা থাকার পরও এই সময়ে জোটচর্চা করতে গিয়ে নিজেদের এগিয়ে যাওয়া বরবাদ করে দিয়েছে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার দাবি মানুষের কাছে তুলে ধরার সুযোগ হাতছাড়া করে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা-স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জোটগত লড়াইয়ের যেমন দরকার ছিল, একইভাবে নিজস্ব কর্মসূচিরও গুরুত্ব ছিল। অন্যদিকে দেশের মানুষের কাছে বাম ঘরানার মূল শক্তি হিসেবে পরিচিত জাসদ-ওয়ার্কার্স পার্টি সরকারের খুদ-কুড়ায় বেঁচে থাকার খোঁয়াড়ে ঢুকে গেছে বহু আগেই। যার হাস্যকর শোডাউন হয়েছে এবারের নির্বাচনে। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন রাশেদ খান মেনন-ফজলে হোসেন বাদশা, হাসানুল হক ইনুর মতো বাম জননেতারা। নির্বাচন নৌকায়, কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহার স্ব স্ব দলের। সব সম্ভবের এই বাম-ডানের দূষিত রক্তের কুটিরশিল্প মানুষকে বিনোদন দিচ্ছে। আর আওয়ামী লীগকে দিচ্ছে সুখ-স্বস্তির বারতা। নির্বাচনসহ ভাগের হক নিয়ে মাঝেমধ্যে ভেজাল করা জাতীয় পার্টিকে এবার জনমের শিক্ষা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে জাপা নেতা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্ন, ওয়ান ইলেভেনের অন্যতম নায়ক সাবেক লে. জেনারেল মাসুদসহ কয়েকজন হয়ে গেছেন পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। জি এম কাদের এদিক-ওদিক মোচড় দিলেও এখন তার নিজের এবং স্ত্রী শেরিফা কাদেরের আসনটা পেয়েই তুষ্ট। নইলে অন্তত নিজের আসনটাতে যেন তাকে জিতিয়ে দেওয়া হয়, সেই আবদার নিয়ে ঘুরছেন।
ডান-বামকে এমন খয়রাতি জায়গায় নিয়ে আসা, বিএনপির হাড়-কোমর ভেঙে যাওয়ায় উইন উইন সিচুয়েশনে সরকার। এ পথে এখন ডিস্টার্ব কেবল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)সহ কিছু প্রতিষ্ঠান। সরকারের দিক থেকে তাদেরকে বারবার ওয়ার্নিং দেওয়া হচ্ছে। কারণ তাদের কারও কারও ভূমিকা কখনো কখনো সরকারের জন্য বিএনপির চেয়েও মারমুখী। সর্বোচ্চ সংখ্যক কোটিপতি প্রার্থীর এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া, ১৮ প্রার্থীর ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকা নিয়ে টিআইবির সর্বশেষ করা রিপোর্টটি সরকারের শীর্ষ মহলকে আহত করেছে। তাদের রিপোর্টটির সূত্র কেবলই বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং। কদিন আগে ব্যাংকিং খাতের অর্থ লোপাট নিয়ে একই কাজ করেছে সিপিডি। তাদের প্রকাশিত রিপোর্টের কোনো তথ্যই নতুন নয়, সিডিপি গবেষণা করেও বের করেনি। প্রতিটি ঘটনাই বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তখন সরকার এগুলোর দিকে নজর দেয়নি। সিপিডি এখন সব ঘটনা কম্পাইল করে প্রকাশ করেছে মাত্র। অনেকগুলো ঘটনা একসঙ্গে করায় টাকার অঙ্কটা বড় দেখাচ্ছে। তা নজরে আসায় বিরক্ত সরকার। কয়েকজন মন্ত্রী এ নিয়ে এরই মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

কমেন্ট বক্স