Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
রাজনীতি-কূটনীতি-অর্থনীতির মেলবন্ধনে ফ্রন্টলাইনে সরকার

ফের ১০ ডিসেম্বরের ঘণ্টা

ফের ১০ ডিসেম্বরের ঘণ্টা
ক্ষমতায় থেকেও ক্ষমতার জন্য সমানে বোলিং-ব্যাটিংয়ে সময় পার হচ্ছে সরকারের। একদণ্ড বিরতি বা দম নিচ্ছে না। সর্বোচ্চ কাজে লাগাচ্ছে প্রতিটি মিনিট-সেকেন্ডকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিটি আজকের পরিস্থিতি আগামীকালের মতো থাকবে না বলে নিশ্চিত সরকার। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত সময়-পরিস্থিতি আরও বদলানোর তথ্য-সাবুদও ফের ১০ ডিসেম্বরের ঘণ্টা  আছে সরকারের কাছে। যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশে দেশে সরকার পাল্টায়, উতলাবস্থা তৈরি করে, সেই দেশটিতেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের খবরও সরকারের জন্য প্রণোদনাদায়ক। কয়েক ডজন শীর্ষ মার্কিন সেনা কর্মকর্তা বাইডেন সরকারকে সরাতে চান বলে পেন্টাগনের রিপোর্টটি কেবল বাংলাদেশ নয়, আরও কোনো কোনো দেশের সরকারের জন্য আনন্দের। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রতিক্রিয়া আটকে রাখতে পারেননি। তাকে সরাতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর কারসাজি আবারও জানান দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের দিক থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু পর্যবেক্ষণ ব্যাপক। আগামী ১০ ডিসেম্বরই-বা কী হয়, রয়েছে সেই অপেক্ষাও।
কূটনৈতিক-রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডায় ক্ষমতাসীনরা এবার ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে রাজধানীতে সমাবেশের উদ্যোগ নিয়ে পরে আবার থেমে যায়। দল থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের অনুমতি না মেলায় সে সমাবেশ হচ্ছে না। দিনটি বিএনপির খুব প্রিয়। তারা সেদিন মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছে। সরকারের অনুমতি পাবে কি না, তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। এবারের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র আবার কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে বলে গুঞ্জন ঘুরছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে এলিট ফোর্স র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল। প্রতিবছর মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। চট্টগ্রামের কক্সবাজারে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ক্রসফায়ারের ঘটনার সূত্র ধরে তৎকালীন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন সেই সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং বর্তমান পুলিশের আইজিও।
এবার যখন বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে এবং যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সোচ্চার অবস্থানে রয়েছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কী ধরনের প্রতিবেদন দেয়, তা নিয়ে জনমনে বিভিন্ন ধরনের আগ্রহ, উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে গুজবও প্রচার হচ্ছে। নির্বাচনের আগে ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারির গুঞ্জনও ব্যাপক। কিন্তু সরকার এসব নিয়ে কেয়ার করে না বলে জানান দিচ্ছে। ভেতরে ভেতরে ভয়ও পিছু ছাড়ছে না। আবার সরকারের এরই মধ্যে কিছু অর্জনও যোগ হয়েছে। বিশেষ করে, নির্বাচন কমিশনের কিছু ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে পশ্চিমা বিশ্ব।
নির্বাচন কমিশন গত কয়েক দিন অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে চলে গেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন আসনে প্রার্থীদের শোকজ করছে। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার চেষ্টাও করছে। এরই মধ্যে প্রশাসনে ব্যাপক বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছয় মাস বা এক বছর বা তার বেশি সময় আছেন, তাদেরকে প্রত্যাহার করতে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটি বাতাবরণ দেখাতে পারছে সরকার। বিএনপির অপূর্ণতা কাটাতে দলীয় লোকদের নির্বাচনে ডামি-স্বতন্ত্র প্রার্থিতার দুয়ার খুলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তথা অংশগ্রহণমূলক দেখানোর পথে কোথাও কোথাও যে বিপত্তি বেধেছে, তাও দ্রুত সারিয়ে নেওয়ার আয়োজন রেখেছে আওয়ামী লীগ। জোটমিত্রদের বুঝ মানানোর ব্যবস্থাও রেখেছে। এরই মধ্যে তাদের লাভ লেটার দেওয়া হয়েছে।
একমাত্র বিএনপি থেকে আসা শাহজাহান ওমর ছাড়া কাউকেই এখন পর্যন্ত নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। প্রতীক দেওয়া হবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর। ত্যাগ স্বীকারে শামিল হওয়াদের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে বলে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রকাশ্য ঘোষণায় দুটি আসনে কোনো মনোনয়ন দেয়নি। এর একটি জাতীয় পার্টির নেতা সেলিম ওসমানের জন্য। অন্যটি জাসদের হাসানুল হক ইনুর। কিন্তু এর পরও জাতীয় পার্টির অন্তত ২০ জনকে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত ছাড় দিতে পারে। এই আসনগুলোতে যারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবেন না, তাদেরকে পরবর্তী সময়ে দলীয় পদ এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাদেরকে সরকারের বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হবে। যারা গুরুত্বপূর্ণ তাদেরকে উপদেষ্টা করারও সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন পলিটিক্যাল ম্যানেজমেন্টের মধ্যে অর্থনীতিও সরকারের জন্য কিছুটা সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে, নভেম্বরে বেশ কমেছে মূল্যস্ফীতি। নির্বাচনের আগে গরুর মাংসের কেজি সাড়ে সাতশ-আটশ থেকে ছয়শ টাকায় নেমে আসাকে একটি বড় দাগের ঘটনা দেখাতে চায় সরকার। সবজিসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমে আসাকেও নিজস্ব ক্যারিশমা দেখানোর ক্যাম্পেইন রয়েছে সরকারের। নির্বাচনের আগে এক মাসের ব্যবধানে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশে ঠেকেছে। আগের মাস অক্টোবরে যা ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ ছাড়া অক্টোবর মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি যেখানে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল, নভেম্বরে সেটি নেমে এসেছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোÑবিবিএসের মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশে ঠেকেছে। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে সাধারণ মানুষও ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হবে বলে ধারণা সরকারের।

কমেন্ট বক্স