প্রায় এক যুগ আগে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব আসবে ভেবে ‘তীর্থের কাক’ হয়ে নেতাকর্মীরা যখন অপেক্ষা করছেন, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তিন নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ঘরে অশান্তির দাবানল বইতে শুরু করেছে। অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা। এসবের প্রভাব পড়ছে বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
সাধারণ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটি না দিয়ে তিনজনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি সক্রিয়। কমিটি না থাকায় দলীয় নানান কর্মসূচি তাদের আলাদাভাবে পালন করতে হচ্ছে। দেশে যখন বিএনপি আন্দোলনে নিষ্প্রভ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা পালন করছে। অথচ দলীয় রাজনীতি ও কমিটির ব্যাপারে কেন্দ্রের উদাসীনতা, স্টেট কমিটির মাধ্যমে দলীয় রাজনীতি পরিচালনার সিদ্ধান্তে চরম হতাশা আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন এখানকার নেতা-কর্মীরা। এখন তা ক্ষোভে পরিণত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে যে যেভাবে পারছেন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসা কিংবা বক্তব্য দেওয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। ফলে অভিভাবকহীন শুধু নয়, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি।
২০১১ সালে আবদুল লতিফ সম্রাট ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুলের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়ার পর আর নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার কমিটি গঠনের দাবির পাশাপাশি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
অতিসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পাঁচ নেতা যথাক্রমে গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান, মিল্টন ভূঁইয়া, জসিম ভূইয়া ও মোশাররফ হোসেন সবুজ লন্ডনে গিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এই সাক্ষাতের পর তারেক রহমান গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান ও মিল্টন ভূঁইয়াকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবে পুরস্কৃত করেন। পাঁচজন একসঙ্গে গেলেও তিনজন কেন্দ্রে ঠাঁই পেলেও বাকী দুজন হতাশ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
তিন নেতাকে কেন্দ্রে অন্তর্ভূক্তির পর সাধারণ নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি আসবে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে আপাতত কোনো কমিটি আসছে না। কমিটি কবে আসবে, তা কেউ জানেন না। এমনকী ইতিমধ্যে গঠিত ১৭টি স্টেট কমিটি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাংগঠনিক কার্যত্রম চলবে, এমন খবরে সাধারণ নো-কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি দাবি করে বলেছেন, যারা এখন কেন্দ্রে গেছেন তাদের বাদ দিয়ে কমিটি দেওয়া হোক। এমনকী এ ব্যাপারে তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন নেতা-কর্মীরা। অন্যথায় ভবিষ্যতে তাদের অংশগ্রহণে কোনো অনুষ্ঠানে যাবেন না নেতা-কর্মীরা।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তিন নেতার একাধিক পৃথক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছে। সাধারণ নেতা-কর্মীদের অনেকে তাদের অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। ৮ মে সোমবার গুলশান টেরেসে অনুষ্ঠিত একজন নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা হয়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম ভূঁইয়াকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির শীর্ষপদে দেখতে চান তার সমর্থকেরা। গত ৭ মে রোববার ব্রুকলিনে বৃহত্তর নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী ফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে জসিম ভূইয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে কেন্দ্রে অথবা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির শীর্ষস্থানীয় পদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির যেসব নেতা কেন্দ্রে গেছেন তাদের কেউ সম্মান করবে না। কারণ তারা পদ পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটির ব্যাপারে চুপ হয়ে গেছেন। অথচ তারা চাইলে নেতা-কর্মীদের কথা তারেক রহমানকে জানাতে পারেন।