ঢাকা অফিস : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ মিথ্যা, বানোয়াট, অশালীন ও মানহানিকর পোস্ট দিয়ে আসছে কিছু দুষ্কৃতকারী। কুলাউড়া, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে এই জঘন্য অপকর্ম চালাচ্ছে একটি চক্র। এ নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে কুলাউড়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে জিডি হলেও দমেনি চক্রটি। এ অবস্থায় চলতি বছরের মার্চ মাসে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন সাপ্তাহিক মানব ঠিকানা পত্রিকার কুলাউড়াস্থ কার্যালয়ের অফিস সহকারী এবং কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল নূরের ছেলে মেহেদী হাসান খালিক। বিচারক মো. আবুল কাশেম মামলাটি আমলে নিয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্তপূর্বক আদালতে রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কুলাউড়া থানায় করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) (নং ৮৩৯, তাং ১৭/১২/২০২২) ও সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়ের করা বাদীর মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৪ জুন, ৩ সেপ্টেম্বর, ৮ নভেম্বর, ১৭ ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন তারিখে ফেসবুক আইডি থেকে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীনসহ কুলাউড়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, অশালীন ও মানহানিকর পোস্ট দিয়ে আসছে দেশ ও প্রবাসের একদল দুর্বৃত্ত। তাদের এই মিথ্যা, কটাক্ষ ও কুরুচিপূর্ণ পোস্টের কারণে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পারিবারিক ও সামাজিক মানসম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ ও শঙ্কা বিরাজ করছে। শুধু তা-ই নয়, স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়েও ফেসবুকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসব ঘৃণ্য অপপ্রচারের কারণে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় স্থানীয়ভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। মামলার আরজিতে বাদী আরও উল্লেখ করেন, আসামিরা স্বনামধন্য ব্যক্তিদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদেরকে সামাজিকভাবে অপমান, অপদস্থ করার হীন উদ্দেশ্যে কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য ফেসবুকে প্রকাশ করছে। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত এবং কুলাউড়া থানায় এ নিয়ে জিডি করার পরও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন বলে বাদী মেহেদী হাসান খালিক উল্লেখ করেন। তিনি আসামিদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে অনুরোধ জানান।
জানা গেছে, মামলাটি তদন্ত করছেন কুলাউড়া থানার এসআই (নিঃ) মোহাম্মদ আমির উদ্দিন। যেসব ফেসবুক আইডি থেকে এসব কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেওয়া হচ্ছে, তাদের শনাক্ত করতে অপরাধীদের পূর্ণাঙ্গ নাম, ঠিকানা, ব্যবহৃত আইডি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মামলার আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডিতে পাঠাতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকের অনুমতি প্রার্থনা করেন এসআই আমির। আদালতের বিচারক মো. মনির কামাল আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে মামলাটির আলামত ঢাকায় সিআইডি ব্যুরোতে পাঠাতে গত ৪ অক্টোবর এসআই মোহাম্মদ আমির উদ্দিনকে ক্ষমতা প্রদান করেন। বর্তমানে ঢাকার মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে অপরাধীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মেহেদী হাসান খালিক বলেন, ‘আমি গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ফেসবুকে একাধিক আইডিতে কুরুচিপূর্ণ পোস্টগুলো দেখতে পাই, যা আমাকে ভীষণ পীড়া দিয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীনসহ যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেওয়া হচ্ছে, তারা সবাই সমাজের স্বনামধন্য ও আলোকিত মানুষ। কুলাউড়াবাসীর উন্নয়ন-অগ্রগতিতে তাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এই গুণী ও মানী ব্যক্তিদের অগণিত সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন, তাদের মধ্যে আমিও একজন। স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সম্মানহানি করলে তা সমাজে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাই প্রিয় নেতা এম এম শাহীনসহ অপপ্রচারের শিকার হওয়া স্বনামধন্য ব্যক্তিদের জানমালের নিরাপত্তা এবং তাদের অর্জিত মানসম্মান রক্ষার্থে আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’
খালিক আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, এ ধরনের হীন ও জঘন্য অপপ্রচার কোনো একক ব্যক্তি চালাচ্ছে না, এর পেছনে রয়েছে দেশ ও প্রবাসের শক্তিশালী চক্র, যারা নিজ স্বার্থ আদায়ে কারও প্ররোচনায় এসব করছে। পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগের প্রতি অনুরোধ করছি, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।’
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সিলেট জজকোর্টের অ্যাডভোকেট আবদুর রউফ মিলাদ বলছেন, মামলা হয়েছে জজ আবুল কাশেমের আদালতে। এটি তদন্তের জন্য কুলাউড়া থানায় পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই (নিঃ) মোহাম্মদ আমির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।