Thikana News
২৫ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
ভালো কিছুর আশায় শেখ হাসিনা ✪ বিএনপির সামনে-পেছনে অন্ধকার

সন্দিহান ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্র 

সন্দিহান ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্র 
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যখন চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরভা বাড়াচ্ছে, তখন বিএনপি ও সমমনাদের অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির ভারসাম্য কিছুটা হলেও ফিরে আসবে। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে বাংলাদেশ  নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ধোঁয়াশায় পরিণত হচ্ছে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের ধোয়া তুলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা সামনে এনে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আপসহীন বিএনপিও শেষ মুহূর্তে আপসের পথেই হাঁটছে। সরকারের সঙ্গে সংলাপে নানান শর্ত জুড়ে দিলেও যুক্তরাষ্ট্র এখন শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছে। ফলে সরকার পতনের কঠোর আন্দোলনের মাঝপথে এসে বিএনপি সামনে-পেছনে অন্ধকার দেখছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর কাছে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছেÑযুক্তরাষ্ট্র আসলে কী চায়?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ‘পূর্বশর্ত ছাড়া’ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ১৩ নভেম্বর সোমবার ওই চিঠির তথ্যটি প্রকাশ পাওয়ার পর সংলাপের সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক মহল থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও সে রকম সম্ভাবনা খুব কম। যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির পরও সেই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে বলে তাদের মনে হয় না। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে যে ধরনের শক্ত মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছিল, সে অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এটা এখন সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। তার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন তার আপন গতিতেই এগোচ্ছে। ১৫ নভেম্বর বুধবার নির্বাচনী তফসিল নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ওই বৈঠকের পরই ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানালেও সংলাপে বসার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানেই রয়েছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ বলছে, কোনো দল সংলাপে বসার আগ্রহ দেখালে তা বিবেচনা করে দেখা হবে। আর বিএনপি বলছে, সংলাপে বসতে বাধা নেই, তবে তার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে সরকারকে।
এখানে উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর পক্ষ থেকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো চিঠি এরই মধ্যে হস্তান্তর করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি এরই মধ্যে চিঠিপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠিতে কী আছে, আনুষ্ঠানিক সেটি প্রকাশ করা না হলেও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে জানানো হয়, দেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানাতে তিনটি বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
দূতাবাস আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এর জন্য সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করে সংযমের আহ্বান জানানো হয়।
দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এক দলের চেয়ে অন্য দলকে প্রাধান্য দেয় না। কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের সবার বিরুদ্ধে সমানভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে অসমর্থিত সূত্রগুলো বলছে, ভারত-চীনের পূর্ণ আস্থা-আশীর্বাদে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আর আপাতত পেছনে তাকানোর সময় নেই। কিন্তু বিএনপির পেছনে-সামনে কেবলই অন্ধকার। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের ওপর অতিনির্ভরতা দৃশ্যত ধারণাতীতভাবে বুমেরাং হয়েছে দলটির। তবে আশা ছাড়ছে না। পরবর্তী করণীয় নিয়ে বিদেশি ময়মুরব্বিদের দুয়ারে ছুটছে আরও বেশি মাত্রায়।
রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ডোনাল্ড লুর চিঠি নিয়ে গেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে। চিঠি পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় পার্টি। তার একান্ত কথাগুলো গোপন রাখছে জাতীয় পার্টি। যেমনটি গোপন রাখা হয়েছিল ভারত সফরে সেখানকার হেভিওয়েটদের সঙ্গে বলা কথাগুলো।
জিএম কাদের তখন বলেছিলেন, ভারতের বারণ আছে। ভারত না বলা পর্যন্ত তিনি বলবেন না কী কথা হয়েছে তাদের সঙ্গে। পিটার হাসের সঙ্গে অব দ্য রেকর্ডে কী কথা হয়েছে, তা গোপনের ক্ষেত্রেও বিশ্বস্ততা রাখছে জাতীয় পার্টি। তাদেরকে ডোনাল্ড লুর চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কোনো শর্ত ছাড়াই তিন দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। পরে দূতাবাসের বিবৃতিতেও এ আহ্বানের কথাই জানানো হয়েছে। এর আগে পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশে অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ নেই। পিটার হাসের কাছে, এটিই ছিল জাপার কাছ থেকে নেওয়া মূলকথা। পিটার হাস নতুন ঘটনা ঘটিয়েছেন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দূতাবাসের সহকর্মীদের নি‌য়ে বাংলার মানুষের জন্য রক্তদানের মাধ্যমে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ও ফেসবুকে দূতাবাসের সহকর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের রক্তদানের একটি ভিডিও পোস্ট করে দূতাবাস। ভিডিও পোস্টটির বর্ণনায় বলা হয়, ‘সকলের স্বাস্থ্যের জন্য রক্তদান অপরিহার্য! ঢাকার দূতাবাসে আমরা বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমাদের দায়িত্বটুকু পালনের চেষ্টা করি।  রক্তদান করুন, জীবন বাঁচান।’ কূটনৈতিক ঘটনা হিসেবে এটি একেবারেই ভিন্ন মাত্রার। যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে মাত্রাগত দিক থেকে আরও ব্যতিক্রম ঘটনার জন্ম দিয়েছে রাশিয়া। অর্ধশতাব্দী পর চট্টগ্রাম বন্দরে রাশিয়ার রণতরী ভেড়ার ঘটনা কূটনীতির অন্যতম ঘটনা। তাও একটি নয়, রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের তিন-তিনটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে।
ঢাকায় রুশ দূতাবাসের ফেসবুক থেকে তা পোস্টও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এটি বাংলাদেশে রাশিয়ার বন্ধুত্বের সফর। ৫০ বছর পর কেন যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে বন্ধুত্বের জানান দেওয়া লাগল রাশিয়ার? প্রশ্নটি কূলকিনারাহীন। রাজনীতির এই কঠিন সময়ে যুদ্ধজাহাজ নিয়ে রাশিয়ান নৌবাহিনীর বাংলাদেশ আগমনে বন্ধুত্বের উদ্দেশ্য এত সোজা ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করা কঠিন। তাও আবার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যখন রাশিয়ার নাজেহাল অবস্থা। এর আড়ালে ভারত-চীনের ছায়াও আলোচিত। আর এসবই ঘুরপাক খাচ্ছে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে। বাংলাদেশের অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনগুলো ছিল ডমেস্টিক রাজনীতির ইস্যু। এবারও ব্যতিক্রম নয়। বরং আরও বেশি। বরাবরই বিতর্কিত নির্বাচনে কেউ কায়দা করে উতরে গেছেন। কেউ ফেঁসেছেন। এবার নির্বাচন সমানে রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলো তাদের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা নিয়ে হাজির। তারা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ও জুড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরাশক্তির এ রেসলিং সামলানোর আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা, সিইসির জাতির উদ্দেশে ভাষণসহ নানা হোমওয়ার্কেও সরকারের বাছাই করা লোকজনের অন্তহীন পরিশ্রম। কিন্তু এর মাঝে নিয়মরক্ষার একতরফা নির্বাচনেও ভেজাল বাধিয়ে দিচ্ছে দলের কিছু মহল। যার শোডাউন হয়েছে লক্ষ্মীপুর উপনির্বাচনে। সেখানে সেকেন্ড মেপে সিল মারার রেকর্ড গড়ে গোটা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই বড় রকমের প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন ছাত্রলীগের এক নেতা।
ভিডিওটা প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় তাকে এখন ছাত্রশিবির বানিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এ ছাড়া নির্বাচনে লেজিটিমেসির কথা ভাবনায় নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন, তা আগাম বলে রেখেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সরকারও এ ক্ষেত্রে ডেমকেয়ার পজিশনে। যেকোনো মূল্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তুলে নেবে সরকার। আবার যুক্তরাষ্ট্রও নাছোড়বান্দা। আন্দোলনের মাঠের এই পরিস্থিতিতে কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, তা দেখতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ। পরিস্থিতি আরও বিষফোড়াময় হওয়ার পরও পদক্ষেপ নিতে পারে তারা। আর সেটা অবশ্যই নির্বাচনের পর। মানে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পথে বাধা থাকছে না।
এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র টেনে এনেছে কয়েক দিন আগে ভারতে হয়ে যাওয়া দুই দেশের বিদেশ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার কথা। নয়াদিল্লিতে সদ্য সমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্র-ভারত টু প্লাস টু সংলাপে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির বাইরে কোনো বক্তব্য নেই বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। 
আবারও আশ্বস্ত করা হয়েছে নির্বাচনে কারও পক্ষ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের মনোভাবের পর যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পর্যালোচনার নমুনাও দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের গভীর বোঝাপড়ার সুবিধা আবারও অনিবার্যভাবে মিলবে বলে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। আবার চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক চমৎকার আওয়ামী লীগের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও বেশি, তা যুক্তরাষ্ট্র জানে। এসব জানাজানিতেও যার যার নিজস্ব বোঝাপড়ায় ভালো কিছুর আশায় নির্ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে আবারও জেতার পর যাকে যেভাবে দরকার ম্যানেজ করে নেওয়ার দাওয়াই তার ঠিক করা আছে বলে তথ্য ঘুরছে রাজনীতির আকাশে-বাতাসে। তা কূটনীতিতেও। বাকিটা নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সেরের ওপর সোয়া সের দিতে পারা না-পারার ওপর।

কমেন্ট বক্স