ঠিকানা রিপোট : নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে যেখানে মসুলিম কমিউনিটি বসাবাস করে সেখানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে এবং ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২১ এপ্রিল হবে এমনটাই প্রস্তুতি ছিল। সৌদি আরবে ২০ এপ্রিল চাঁদ দেখা দেয়। সেই হিসাবে ঈদুল ফিতর ঘোষণা হয়। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২১ এপ্রিল শুক্রবার উদযাপিত হলো মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টারে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়। প্রতিটি ঈদের জামাতে মুসল্লিদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। ঈদের জামাত শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্্ের প্রবাসীদের ঘরে ঘরে এখনও চলছে ঈদের আনন্দ ও কুশল বিনিময়। নানা রঙের নতুন নতুন কাপড় পরে পবিত্র নামাজ শেষে আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবের বাসায় বাসায় হাজির হয়ে সবাই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ঈদের সালামি আদায়ে ছিল দিনভর ব্যস্ত। ঈদে শুক্রবার থেকে রোববার তিনদিনের ছুটির কারণে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে বিভিন্ন স্টেটেও বেড়াতে গেছেন। শুক্রবার কেউ কেউ কাজ করেছেন। তারা অবশ্য ঈদের পরদিন আত্নীয় স্বজনের বাসায় বেড়াতে যান।
মুসলিম আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস’(কেয়ার)-এর তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে এবার প্রায় তিন হাজার ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানত স্থানীয় মসজিদ ও ইসলামি কেন্দ্রের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় মসজিদ, খোলা মাঠ ও রাস্তায় এসব ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব জামাতে ৩০ লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মার্কিন মুসলিমদের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২১ এপ্রিল শুক্রবার এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ‘জিল (ফার্স্ট লেডি) ও আমি রমজান মাসের শেষে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ঈদুল ফিতর উদযাপনকারী মুসলমানদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমরা আপনার সম্প্রদায়কে সহানুভূতিতে ভরা একটি সুখী সম্প্রদায় কামনা করি। ঈদ মোবারক!’
চাঁদরাতে জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কসসহ বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট। ঈদকে কেন্দ্র করে চাঁদ রাতে ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে কেনাকাটা করেন মানুষেরা, সেই সাথে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। গ্রোসারিগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। ঈদকে ঘিরে মেহেদি উৎসব জমে উঠেছিল। চাঁদ রাতে এবং শেষ রোজায় অনেকেই হাতভরে মেহেদি লাগান। এবার নিউইয়র্কে ফিতরা ছিল সর্বনিম্ন ৮ ডলার থেকে ২০ ডলার পর্যন্ত। এক এক মসজিদে একেক রকম সর্বনিম্ন ফিতরার অংক নির্ধারণ করা হয়। ঈদের নামাজের আগেই সবাই ফিতরা আদায় করার চেষ্টা করেন এবং করেছেনও বলা যায়। এদিকে এবার অনেক প্রবাসী ঈদ করার জন্য পরিবার নিয়ে দেশে গেছেন। সেখানে তারা নিজ পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ উদযাপন করেছেন।
২০২০ সালের মার্চে করোনা শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগে গেল। গত দুই বছর করোনার বিভিন্ন বিধি নিষেধের কারণে ঈদে মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, অ্যাপায়নের বিষয়গুলো ছিল সীমিত। ফলে স্বাভাবিক সময়ের মতো ঈদ হয়নি। এবার করোনা পরবর্তী সময়ে প্রথম স্বাভাবিক পরিবেশে ঈদ উদযাপিত হয়। এই কারণে বিভিন্ন বাসায় সবাই ঈদের উৎসবে মেতে উঠেন। আমন্ত্রণ জানানো হয় বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়স্বজনকে।
সেখানে সবাই মিলে আনন্দ করেছেন। মসজিদে ঈদের নামাজে উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। নিউইয়র্কে সবেচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে। সেখানে দশ হাজারের বেশি মানুষের উপস্থিত হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। টমাস এডিসনের বিশাল মাঠে এই নামাজের আয়োজন করা হয়। পুরুষদের পাশাপাশি নারী শিশু সবার জন্য নামাজের ব্যবস্থা ছিল।
ঈদ উদযাপন করেছেন এমন অনেকেই বলেছেন, এবার আমরা প্রাণ ভরে ঈদ উদযাপন করতে পেরেছি। করোনার কোন বিধি নিষেধ ছিল না। আমাদের আশা ছিল এবারের ঈদ ঘরে ঘরে বয়ে আনবে অনাবিল আনন্দ। সেটি হয়েছে কারণ করোনার পর এবার স্বাভাবিক পরিবেশে ঈদ হয়। ঈদের নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মসজিদে মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঈদের নামাজ আদায় করতে গিয়ে দুই বছর পর অনেকের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে।
নিউইয়র্কে ঈদের নামাজে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যোগ দেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য্য তুলে ধরে ধরে আলোচনা করা হয়। মুসলিম উম্মার শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোজানাত করা হয়, বিভিন্ন মসজিদে ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজের আগে ও পরে সেখানে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে অর্থ অনুদান দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিউইয়র্কে বিভিন্ন মসজিদের পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে ঈদের নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। যেসব স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, সেসব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। ঈদের দিন মুসলমানরা একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা ছাড়াও বিভিন্ন ঈদের জামাতে নিউইয়র্কের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। মুসলিম কমিউনিটি ও বিভিন্ন মসজিদের পক্ষ থেকে, নিউইয়র্ক স্টেটের ডেপুটি গভর্নর, মেয়র এরিক অ্যাডামস, জেনিফার রাজকুমার, জন লু, মিলিন্ডা ক্যাটস, গ্রেস মেং, অ্যালেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও, ক্যাটলিনা ক্রুসসহ বিভিন্ন নির্বাচিত প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, কুইন্স ভিলেজ, হলিস, সাউথ জ্যামাইকা, ওজন পার্ক, রিচমন্ড হিল, পারসন্স, উডসাইড, এস্টোরিয়া, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, ম্যানহাটনের বিভিন্ন মসজিদ বিশেষ করে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসে বাংলাবাজার জামে মসজিদ, নর্থ ব্রঙ্কস জামে মসজিদ, ওজন পার্কে মসজিদ আল আমান, এস্টোরিয়ায় আল আমিন মসজিদ, আরাফা ইসলামিক সেন্টার, ব্রুকলিনে বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, বায়তুল জান্নাহ মসজিদ এবং এলমহার্স্টের বিভিন্ন মসজিদে, জ্যাকসন হাইটসে আলনূর ইসলামিক সেন্টার, আল নূর ইসলমিক সেন্টার শরীয়া বোর্ড নিউইয়ক, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার, পার্কচেস্টার জামে মসজিদ, বাংলা বাজার জামে মসজিদ, বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, মোহাম্মদী সেন্টার, দারুল উলম, ইকনা মসজিদের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং নিউইয়র্ক স্টেটের বিভিন্ন এলাকায় যেখানে মুসলিম কমিউনিটি ও মসজিদ আছে, সেখানে ঈদের জামাত আদায় করা হয়। নিউইয়র্ক ছাড়াও নিউজার্সি, কানেক্টিকাটসহ বিভিন্ন স্টেটে যেখানে মুসলমানরা রয়েছেন, সেখানেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, পার্শ্ববর্তী মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়া রাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। দীর্ঘ প্রায় এক মাস সিয়াম সাধনার পর শুক্রবার ভোর হতেই বৃহত্তর ওয়াশিংটন প্রবাসী বাংলাদেশিসহ মুসলিম সম্প্রদায় সপরিবারে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ আদায় শেষে সবাই আনন্দ আলিঙ্গনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ড ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা, মিশিগান ও ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
কোথায়, কখন ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে: জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের জামাত
অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকার টমাস এডিসন হাইস্কুলের মাঠে। সেখানে একটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়। আগেভাগেই সেখানে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষ অনুমোদনও নেন। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আফতাব মান্নান বলেন, আবহাওয়া ভালো ছিল। রোদ ছিল। সুন্দর পরিবেশে ও আবহাওয়ায় টমাস এডিসনের মাঠেই ঈদের জামাতের আয়োজন করেছিলাম। এবার আমরা মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা রাখিনি। যারা নামাজ পড়তে এসেছেন , তারা স্বাভাবিক সময়ের মতোই আসতে পেরেছেন। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালনা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম দেলায়ার বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে জামাতের আয়োজন করতে পেরেছি। আমরা আমাদের স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা এসেছেন। যোগ দিয়েছেন। নিউইয়র্কে প্রতিবছর সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় কুইন্সের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের (জেএমসি) উদ্যোগে টমাস এডিসন স্কুল মাঠে। এখানে ১০ হাজার মুসল্লি এবার একসঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। নামাজে ইমামতি করেন জেএমসির খতিব ও পেশ ইমাম মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। খুতবা পাঠ করেন জেএমসির ইমাম শামসে আলী।
নামাজের আগে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্ডা কাটজ, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি সদস্য ডেভিড ওয়েপ্রিন ও এলিসিয়া হাইন্ডম্যান, ম্যানহাটন কাউন্টি জজ অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ, কাউন্সিল সদস্য জেমস এফ. জেনারো, জেএমসির প্রেসিডেন্ট ড. সিদ্দিকুর রহমান, জেনারেল সেক্রেটারি আফতাব মান্নান প্রমুখ।
এবারের ঈদের নামাজে প্রায় দশ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এর চেয়ে বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এবার করোনার কোন বাধ্যবাধকতা না থাকায় করোনা পূর্ববর্তী সময়ের মতোই নামাজের স্থানে সবাই আসতে পেরেছেন। মাস্ক পড়তে হয়নি। সেখানে নামাজের অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল সাড়ে আটটায়। এখানে পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুদের জন্যও নামাজের ব্যবস্থা ছিল। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও যোগ দেন। তারা একে অপরের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
এস্টোরিয়ার আল আমিন জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে আটটায়। মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ২১ এপ্রিল ঈদের নামাজের জামাতের আয়োজন করা হয়। এস্টোরিয়ার ৩৬ স্ট্রিটে জামাত হয়। আবহাওয়া ভাল হওয়ার কারণে খোলা স্থানেই ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। অনেক মানুষ যোগ দিয়েছেন। এবং তারা সবাই খুশি। একে অপরের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা লুৎফুর রহমান চৌধুরী।
আল আরাফা ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগের জ্যামাইকার সুজান বি এন্থনীর মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়। প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে অংশ নেন। পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারী খন্দকার তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এবার করোনামুক্ত পরিবেশে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করেছি। এই জন্য করোনা সংক্রান্ত কোন বিধি নিষেধ ছিল না। খোলা জায়গায় প্লেগ্রাউন্ডে সকাল নয়টায় জামাত হয় একটি। বিপুল সংখ্যক মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করার পাশাপাশি ঈদ শুভেচ্ছা বিণিময় করেন। জামাতে যেসব শিশুরা এসেছিল তাদের জন্য ছিল কটন ক্যান্ডি, বেলুন। আমরা সফলভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই জন্য আগত সকল মুসল্লীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।
নামাজে ইমামতি করেন ইমাম সোয়েব শেখ, দোয়া পরিচালনা করেন ডা. শেখ মাহমুদ, পরিচালনা পরিষদের প্রেসিডেন্ট শফিকুল হাসান, সেক্রেটারী খন্দকার তরিকুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট ২৭ এর কাউন্সিল ওমেন নানতাশা উইলিয়াম, স্টেট সিনেটর জুন লু, উপস্থিত ছিলেন। তারা মানুষের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিণিময় করেন।
জ্যামাইকার ১৪৮ স্ট্রিটে দারুস সালাম মসজিদের উদ্যোগে মসজিদের নিজস্ব ভবনে চারটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তারা করোনামুক্ত পরিবেশে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করেন। এই জন্য করোনা সংক্রান্ত কোন বিধি নিষেধ ছিল না। সেখানে মসজিদে প্রথম জামাত সকাল সাড়ে সাতটায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে আটটায়, তৃতীয় জামাত সকাল সাড়ে নয়টায় এবং চতুর্থ জামাত সকাল সাড়ে ১০ টায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত ছাড়া অন্যান্য সব জামাতে মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা ছিল। জ্যামাইকা দারুস সালাম মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ১ম জামাতে ইমামতি করেন উক্ত মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আবদুল মুকিত। ২য় জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আলী। ৩য় জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা আল আমীন আরাফাত। ৪র্থ জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ আশরাফুর রহমান।
জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজায় নিউইয়র্ক ঈদগাহর উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় ছয়টি। সকাল সাতটা থেকে জামাত শুরু হয়। এরপর প্রতি এক ঘণ্টা পরপর ঈদের জামাত হয়। মাওলানা কাজী কাইয়্যূম বলেন, আমরা প্রতিবছর ডাইভারসিটি প্লাজায় ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করে থাকি। এবারও করেছি। নামাজের জন্য আগেই অনুমতিও নেওয়া হয়। আবহাওয়া ভালো থাকায় ডাইভারসিটি প্লাজায়ই নামাজ হয়। সেখানে যারা জামাতে অংশ নেন তাদের জন্য ওমরাহ হজের ৩৫০০ ডলারের প্যাকেজের উপহার ছিল। পাঁচটি নামাজের জামাতের পর এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, ঈদুল ফেতরের ৫টি জামাতই বরাবরের মত অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কের মিনি বাংলাদেশ জ্যাকসনহাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায়। সকাল ৭ টায় টার প্রথম জামাত থেকে নিয়ে ১১টার শেষ জামাতটিতে মুসল্লির সংখ্যা ছিল সন্তোষজনক। নতুন প্রজন্মকে মুসলিম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংগ ‘ঈদগাহ’ তে এসে নামাজ পড়ার বিশেষত্ব ও গুরুত্ব বুঝাতেই কোয়ান্টিটি নয় বরং কোয়ালিটি সম্মত ঈদের নামাজ নতুন প্রজন্মকে উপহার দিতে তারা এখানে আসেন আনন্দ ও প্রফুল্ল চিত্তে। ঈদের নামাজের বিশেষ সুন্নাহ মোতাবেক প্লাজার একদিকে তারা আগমন করে নামাজ শেষে প্রস্থান করেন অন্য দিকে। নারী-পুরুষ-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সহ ডাইভার্স কম্যিউনিটির সর্বস্থরের মুসলমানদের এখানে উপস্থিত হতে দেখা যায়। ঈদ শেষে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছার আদান প্রদান প্রতক্ষে মনে হচ্ছিল যেন, এ ঈদের নামাজ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসে নয়, বরং বাংলাদেশের কোনো ঈদগাহতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্লাজার চারদিকে দাঁড়িয়ে কম্যিউনিটির অমুসলিম প্রতিবেশীরাও এসে মুসলমানদের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নিউইয়র্ক ঈদগাহর ঈদের নামাজের প্রংশসা করেন এজন্য যে, এখানে যাতায়াতকারীদের পুরো রাস্তা বন্ধ করা হয়নি, যেভাবে আশেপাশের অন্যান্যরা নামাজ জামাতের আয়োজন দিয়ে রাস্তা ঘাট বন্ধ করে অমুসলিম প্রতিবেশীর গাড়ী পার্কিং ও যাতায়াতে অসুবিধার সৃষ্টি করেন। রাস্তাঘাট বন্ধ করা ঠিক কাজ হয় না। আমরা মনে করি, আমাদের নিজেরদের পাশাপাশি অন্যদের সুবিধাও দেখতে হবে।
সাউথ জ্যামাইকের আল কুবা মসজিদের আয়োজনে ১০১ এভিনিউ পিএস ৫০ এর খোলা মাঠে এক বিশাল ঈদ উল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। গত শুক্রবার ২১ সে এপ্রিল শত শত ধর্ম প্রাণ মুসলিম জামাতে অংশ গ্রহণ করেন। নামাজে ইমামতি করেন মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোঃ আবু সাঈদ । এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কের সিনেটর জন ল্যু, এ্যাসেম্বলী ওমেন জেনিফার রাজকুমার , সিটি মেয়র এরিক এ্যাডামসের সাউথ এশিয়ান প্রতিনিধি মিশ সুকরানী , কমিনিটি বোর্ড -১২ এর এরিয়া চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী, ডিস্ট্রিক্ট লিডার ও সিটি স্পিকার এডরিয়ানী এ্যাডামের সাবেক চিফ এব স্টাফ জামাল হেকার সন, মূলধারার রাজনিতিবিদ এডভোকেট মজিবুর রহমান।
সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন সভাপতি সেলিম খান, সাধারণ সম্পাদক জামাল পাশা, ট্রাস্ট্রি বোর্ড চেয়ারম্যান আখলাক জাহান ও কার্যকরী পরিষদের কর্মকর্তাবৃন্দ। জেনিফার রাজকুমার ইসলাম ধর্মকে শান্তির ধর্ম বলে আখ্যায়িত করে নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে শান্তিরদূত বলে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া তিনি রোজার মধ্যে এই মসজিদের তরুন চার জন ইমামকে সাইটেশন দিয়ে সম্মান জানান।
জন ল্যু বলেন, আমি বাংলাদেশিদের বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। এবার আমি প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশীদের ইফতারে অংশগ্রহণ করেছি । বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী , মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সকলকে মোবারক বাদ জানিয়ে বলেন, এই মসজিদের পক্ষ থেকে এই এলাকার উন্নয়নে বহুমূখি ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। মসজিদ শুধু নামাজই নয় তারা নতুন প্রজন্মের সন্তানদের সুন্দর চরিত্র গড়ায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে জানান। এই কাজের সাথে সম্পৃক্তদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ।
জ্যামাইকার মারকোনি পার্কে পিএস-৪৮-এ রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিক সেন্টার ইনকের উদ্যোগে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এটি ১৫৭ স্ট্রিট এবং ১০৮ অ্যাভিনিউ। সকল মুসলমানকে নামাজ আদায় করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঈদের জামাত পরিচালনা করেন রিয়াজুল জান্নাহ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. শফিকুল ইসলাম। মসজিদ কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়ে ছিল, নামাজে মুসল্লিদের নিজস্ব জায়নামাজ নিয়ে যেতে হবে। যদি কারো চেয়ার লাগে, তাকে চেয়ার নিয়ে যেতে হবে। ফেস মাস্ক পরতে হবে। সেই হিসাবে আগেভাগেই সবাই প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে গেছেন। একটি জামাত হয় সকাল সাড়ে সাতটায়, অন্যটি সকাল সাড়ে আটটায়। পুরুষদের জন্য গেট নম্বর ১, ১০৮ অ্যাভিনিউ ১৫৬/১৫৭ স্ট্রিট এবং মহিলাদের জন্য গেট নম্বর ২ ও ৩, গেট ৩ স্কুলের পাশে।
মসজিদ মিশন সেন্টার (হাজী ক্যাম্প মসজিদ)-এর উদ্যোগে ঈদুল ফিতরের ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদের ভিতরে যথাক্রমে সকাল ৭টা, ৮টা ও সোয়া ৯টায়। এই জামাতে ইমামতি করেন যথাক্রমে ইমাম হাফেজ রফিকুল ইসলাম, হাফেজ তানভিরুল ইসলাম ও মওলানা মঞ্জুরুল করীম।
কুইন্সের পিএস ১২৭ এর মাঠে ইস্ট এলমহার্স্টে ইস্ট এলমহার্স্ট জামে মসজিদ এ্যান্ড মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একটি জামাতের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল সকাল নয়টা। সেখানকার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সৈয়দ আবু লেইস বলেন, আমরা বড় পরিসরে ঈদের নামাজের আয়োজন করছিলাম। আমাদের এখানকার স্থানীয়রা আসেন এবং এর আশেপাশের এলাকা থেকেও মুসল্লিরা ঈদের নামাজে শরিক হন। অত্যন্ত সুন্দর ও সফলভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উডসাইডের বায়তুল জান্নাহ জামে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় দুটি। ৬২ স্ট্রিট এর খোলা রাস্তায় বিশেষ ব্যবস্থায় ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একটি জামাত সকাল আটটায় পরের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়।
জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার এন্ড মসজিদের উদ্যাগে ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৮টায় এবং সকাল সাড়ে ১০টায় ৭৩ স্ট্রীটে রাস্তার উপরে। নিউইয়র্ক ঈদগাহ’র উদ্যোগে ঈদুল ফিতরের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়
ওজনপার্কের আল ফরুকান মসজিদে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয় ৭৭ এ্যান্ড গ্ল্যানেমার এভিনিউ, ওজনপার্কে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল আটটায় আর দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়। সেখানকার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বদরুল হোসেন খান বলেন, আমরা এবার করোনামুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করেছি। এক একটি জামাতে ১৫০০ থেকে দুই হাজার মানুষ অংশ নেন।
ওজনপার্কের আল আমান মসজিদে (ফরবেল স্ট্রিট) ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। এতে বিপুল সংখ্যক নর-নারী ঈদের নামাজ আদায় করেন। আল ফোরকান মসজিদের উদ্যোগে ঈদের ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল ৮টা ও ৯টায়।
ব্রুকলিনের ৫৬৯ ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউ সিটিতে ব্রুকলিনে বায়তুল জান্নাহ জামে মসজিদ অ্যান্ড মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে খোলা রাস্তায় ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। একটি জামাত হয় সকাল নয়টায়। আমরা সফলভাবে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত করতে পেরেছি বলে জানান সেখানকার পরিচালনা পরিষদের নেতা মো.দিদারুল আলম। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছরই এখানে নামাজের ব্যবস্থা করি। পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ ঈদের নামাজে শরিক হন। এবারও অনেক মানুষ ছিল। জামাতে ইমামতি করবেন আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত হাফেজ নাজমুস সাকী।
ব্রুকলিনে বায়তুল মামুর মসজিদ এন্ড কমিউনিটি সেন্টার : ব্রুকলিনে বায়তুল মামুর মসজিদ এন্ড কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় ১০৩৩ গ্লেনমোর এভিনিউতে। মুনা সেন্টারে (২৩৩২ নিউক্লার্ক এভিনিউ) ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় একটি সকাল ৮টায়। বেলাল মসজিদের (১৪০৪ নিউক্লার্ক এভিনিউ) উদ্যোগে ঈদের ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল ৭টা, ৮টা ও ৯টায়।
ব্রঙ্কসে বাংলাবাজার জামে মসজিদ : ব্রঙ্কসের বাংলাবাজার জামে মসজিদের উদ্যোগে ২১ এপ্রিল শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টায় মসজিদের নিকটবর্তী ২১২০ সেইন্ট রেমন্ডস এভিনিউর পিএস ১০৬ খোলা মাঠে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এই ঈদ জামাতে অংশ নেন। ঈদ জামাতে ইমামতি করেন বাংলাবাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা আবুল কাশেম এয়াহইয়া। নামাজ শেষে বাংলাবাজার জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ গিয়াস উদ্দিনের আত্মার মাগফেরাত ও মুসলিম উম্মাসহ বিশ্ব মানবতার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। নামাজের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মসজিদের সভাপতি ডা. আবদুস সবুর এবং সাধারণ সম্পাদক মো. লালন আহমেদ। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কমিটির সহ সভাপতি মো. আহসান রাসুল নাসির, কোষাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন, কার্যকরী সদস্য ওয়ালিউর রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামিম উদ্দিন, জাফর তালুকদার, আজিজুল হক ও সোহেল চৌধুরী।
পার্কচেস্টার জামে মসজিদ : নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের প্রাচীনতম মসজিদ পার্কচেস্টার জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮ টা ও সকাল ৯ টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জামাতে মহিলাদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। পার্কচেস্টার জামে মসজিদের প্রথম জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা জুবাইর রাশিদ। তিনি পবিত্র ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ আলোচনা করেন। মুসলিম বিশ্বসহ সমগ্র মানবতার কল্যাণ কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। দ্বিতীয় জামায়াতে ইমামতি করেন মৌলভী নূরুল ইসলাম। ঈদ জামায়াতের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মসজিদ কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুল আহিয়া, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ সরাফিন মোর্শেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নিউইয়র্কের নর্থ ব্রঙ্কস জামে মসজিদের উদ্যোগে ২১ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৯টায় ব্রঙ্কসের ওভাল পার্কের খোলা মাঠে বিশাল ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এই ঈদ জামাতে অংশ নেন। নামাজে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতীব হাফিজ মুসাদ্দেক আহমেদ। নামাজের পূর্বে ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মসজিদ কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর সভাপতি আল্লমা সৈয়দ জুবায়ের আহমেদ। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মসজিদ কমিটির সভাপতি সৈয়দ জামিন আলী এবং সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের সহ কমিটির সদস্যবৃন্দ।
২১ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৯টায় ব্রঙ্কসের গাউছিয়া মসজিদের সামনে খোলা জায়গায় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল ব্রঙ্কসে গাউছিয়া মসজিদের প্রথম ঈদ জামায়াত। খলিফায়ে ফুলতলী আল্লামা জালাল সিদ্দিকীর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনায় এ ঈদ জামায়াতে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ মুসল্লিরা অংশ নেন। মুসলিম উম্মাসহ বিশ্ব মানবতার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন আল্লামা জালাল সিদ্দিকী।
নিউইয়র্কের অন্যতম পুরনো মসজিদ ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদ ভবন সংলগ্ন পার্কে ঈদের একটি জামাত হয় সকাল ৯টায়। নিউইয়র্কের অপর দুটি বড় ইসলামিক সেন্টারের মধ্যে ব্রুকলিনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আমেরিকা মুসলিম সেন্টার (এএমসি)-এর উদ্যোগে ঈদের ৩টি জামাত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল সাড়ে ৬টায় মসজিদ ভবনে। অপর দুই জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৯টা ও সকাল সাড়ে ১০টায় মসজিদের সামনের রুফজ কিং পার্কে।
জ্যামাইকার হলিস মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় স্থানীয় হলিস প্লে গ্রাউন্ডে।
লং আইল্যান্ডে নতুন প্রতিষ্ঠিত পোস্ট ওয়াশিংটন মসজিদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ১০টায়, ১১৮ হারবার রোড, পোস্ট ওয়াশিংটন ঠিকানায়।
এছাড়াও নিউইয়র্কের উডসাইডের আবু হুরায়রা মসজিদ, ইস্ট এলমহার্স্ট জামে মসজিদ এন্ড মুসলিম সেন্টার, বায়তুল ইসলাম মসজিদ এন্ড কমিউনিটি সেন্টার ইনক, এস্টোরিয়ার শাহজালার মসজিদ, ব্রঙ্কস মুসলিম সেন্টার, ব্রঙ্কস ইসলামিক কালচারাল সেন্টার মসজিদ বিলাল, শাহ জালাল দারুস সুন্নাহ, বাইতুল মামুর মসজিদ, বাফেলো মুসলিম সেন্টার (বিএমসি) সহ বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে ঈদের একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্কে বেশিরভাগ মসজিদে চলতি বছরে সকাল আটটা থেকে সকাল নয়টায় জামাতের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিছু কিছু মসিজেদ সকাল সাতটায় প্রথম জামাত এর সময় নির্ধারণ করা হয়। সেই সময়েই হয়েছে। এবার খোলা স্থানে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। তবে আগাম প্রস্তুতি হিসাবে বৃষ্টি হলেও যাতে নামাজের কোন সমস্যা না হয় সেই জন্য মসজিদের ভেতরে একাধিক ঈদের নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়। সেই ক্ষেত্রে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে এমনটাই বলা হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া ভাল থাকায় সবাই সুন্দর আবহাওয়ায়, সুন্দর পরিবেশে নামাজ আদায় করতে পেরেছেন।