Thikana News
০৬ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

শ্রীকান্তের কাণ্ড

শ্রীকান্তের কাণ্ড
তাপস কুমার বর

‘দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা।
একবার মনের মানুষ ধরতে গেলে,
ছেড়ে যেতে আর দিও না,
দেখেছি...
দেখেছি, রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা।’

... এই গানটা শুনে কী মনে হচ্ছে? একটা রোমান্টিকতা? না, ওই দেবদাস ও রোমিও রোমান্টিকতা। ভাবছেন সকলে তাপস কুমার শরৎচন্দ্রের ওই ‘শ্রীকান্ত’ হয়ে গেল নাকি। না না, তাপস কুমার যেমনকে তেমনই আছে! আজকে এই গানটা নিয়ে একটু হাসি মনে এল, ভাবলাম লিখে ফেলি। সকলে কেমন অভিমত জানায় দেখি। কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস নিয়ে একটু হাসির খোরাক উপহার দিলাম সকলকে। তবে নিজের ভাবনায় গড়ে তোলা হয়েছে। আমি নায়ক শ্রীকান্ত। আরও চরিত্র নিয়েছি অমিত লাবণ্য আর শরৎ দাদাকে। শরৎদা যখন উপন্যাস লেখা শুরু করল, সবে কয়েকটা পাতা লেখা হয়েছে মাত্র। লাবণ্য আর অমিত শরৎদার কল্পনার ভূত। ওই দুটো দামোদর নদীর তীরে প্রেম কীর্তন করতে গেছে। এদিকে শরৎদা আমাকে নায়ক করেছে। বলছে নায়িকা কোথায়? আমি বললাম, দাদা, আমি তো জানি না। দাদা আমার ওপর খেপে গেল। বলল, নায়ক হয়েছ, নায়িকাকে সামলে রাখতে পারো না। অমিতটা ওকে নিয়ে কোথায় গেছে। আমি বললাম, জানি না তো। শরৎদা রেগে ভোঁ। বেত বের করেছে। আমি বললাম, দাদা, নায়ক শ্রীকান্ত মারা গেলে উপন্যাসের রং তো বদলে যাবে। শরৎদা বলল, হ্যাঁ, এই জন্য রক্ষা পেলি। আমাকে শরৎ দাদা আদর করে এক শ টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি ওদের খুঁজে নিয়ে আয়। এটা শেষ করে অন্য উপন্যাস ধরব। আমি বললাম তথাস্তু। এখন রৌদ্রে পুড়ে শ্রীকান্ত প্রেম মোহিনী লাবণ্য আর  রোমান্টিক অমিতকে খুঁজছি। কী কপাল রে বাপ। শরৎদার আদেশ পালন তো করতেই হবে, না হলে নায়ক চরিত্র ক্যানসেল। অমিত আমার কাছ থেকে ১০০০ টাকা ধার নিয়েছিল। দুজনে আনতাস শাড়ি কনটেক্সে নাম দিয়ে হেরে ভোঁ কাট্টা হয়েছে। ভুল গাইলে তো হারতে হবে...
রোমান্টিক অমিত প্রতিযোগিতায় এসেছে, না ইচ্ছে পূরণের জন্য এসেছে, সেটা বোঝা কঠিন। হেঁড়ে গলায় অমিত গান গাইছে...
‘দেখেছি রূপসাগরে রূপের সাগর, লাবণ্যকে।
তোকে ধরতে গেলে কোথায় তুই যাসরে চলে।’
আনতাস শাড়ি কনটেক্সে কুড়িটা প্রশ্ন থেকে অনেক কষ্টে ১০ নম্বর জোগাড় করেছিল। ভুল গান গাওয়ার অপরাধে -১০ করে দিয়েছে বিচারকগণ।
অমিত আর লাবণ্যকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বেশ কিছুদিন। শেষ পর্যন্ত আমি বাঙালি ডিটেকটিভ ফেলুদার কাছে গেলাম। দেখা হতে ফেলুদা বলল...
ফেলুদা : কী রে শ্রীকান্ত, কেমন আছিস?
শ্রীকান্ত : ফেলুদা, আর বলো না! শরৎদার ঝাঁকুনি খেতে হচ্ছে। অমিত ও লাবণ্যকে খুঁজে পাচ্ছি না। অমিত-লাবণ্য না থাকলে উপন্যাসটা জমবে না, দাদা। তোমার সহযোগিতা চাই।
ফেলুদা : এ তো জটিল রহস্য রে শ্রীকান্ত। অনেকগুলো ঝামেলা নিয়ে বসে আছি। ব্যোমকেশকে ফোন লাগাই, কী বলে দেখি। না হলে ওকে দিয়ে সমাধান করিয়ে দেব।
শ্রীকান্ত : ফেলুদা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?
ফেলুদা : বল।
শ্রীকান্ত : তুমি আর ব্যোমকেশ দাদা একই কাজ করেন, তো আপনাদের কাজের কোনো সমস্যা হয় না।
ফেলুদা : সত্যজিতের ফেলুদা ও শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ দুজনের চিন্তাভাবনা আলাদা।
শ্রীকান্ত : ও আচ্ছা।
ফেলুদা : তোকে এ বিষয় নিয়ে রাতে জানাব।
শ্রীকান্ত : আচ্ছা, ফেলুদাদা আসি।
আমি ভাবলাম ফেলুদাদা ও ব্যোমকেশ দাদা নিশ্চয় কোনো একটা সমাধান করে দেবে। কত বড় ডিটেকটিভ ওরা। রাতে ফোন করে ফেলুদা বলল, শ্রীকান্ত, আমি এখন একটা কেশ নিয়ে পড়েছি ‘গ্যাঙ্ক টকে গন্ডগোল’ এর সমাধান করে দিতে হবে। তাই আমি এখন তোর দায়িত্বটা নিতে পারব না। এদিকে আবার ব্যোমকেশ দাদা বলল, আমার প্রচুর চাপ আছে ভাই, পাঁচটা কেশ নিয়ে পড়েছি। কী আর করা যায়, তাহলে কি অমিত আর লাবণ্যকে খুঁজে পাব না? না, একটা উপায় আছে, শার্লক হোমসকে বলে দেখি। বিদেশি ডিটেকটিভ কী বলে দেখি। ফোন করতে শার্লক হোমস স্যার বললেন...

Srikanth: Hello I am Srikanth sir.
Sherlock Holmes: Tell me what you can solve.
Srikanth: Sir, I can’t find my friend Amit and Lavanya with him.
Sherlock:  And this thing, did you find his house?
Srikanth: Yes, not at home.
Sherlock: Now I’m very busy reading ‘The Hound of the Bascarvel’. Good night!

যা, শার্লক হোমস স্যারকেও পেলাম না।
শরৎদার কাছে গেলে রক্ষে থাকবে না। মাথায় হাজার চিন্তা, কী করে উপন্যাসটা শেষ হবে। আনমনা হয়ে হন্তদন্ত করে দামোদর নদীর তীরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। কাছে আসতে দেখি, যাদের খুঁজছি এত দিন ধরে, সেই শ্রীকান্ত এখন ওদের খুঁজে খুঁজে লালন ফকির হয়ে গেছে। রোমান্টিক দৃশ্য দেখাচ্ছি তোদের। ‘রোমান্টিক দৃশ্য লক্ষ করলাম’ অমিত বাবু গান ধরেছে কিশোর কুমারের...
‘তারে আমি চোখে দেখিনি তার অনেক গল্প শুনেছি।
গল্প শুনে তারে আমি অল্প অল্প ভালোবেসেছি।’
... আমি এখানে উপন্যাস শেষ করব উঠেপড়ে লেগেছি। এদিকে রোমান্টিক গান চলছে, গান গাওয়াচ্ছি।
কথোপকথন-
শ্রীকান্ত : (চিৎকার করে) এই অমিত।
অমিত : (হুমড়ি তুবড়ি খেয়ে) কে কে?
শ্রীকান্ত : চিনতে পারছিস না! ১০০০ টাকা ধার নিলি, এদিকে শরৎদা আমাকে বকেই চলেছে অমিত-লাবণ্যকে যেমন করে হোক আমার কাছে হাজির করতেই হবে, না হলে উপন্যাস বন্ধ থাকবে।
অমিত : আরে ভাই, শরৎ দাদা কি এত ব্যস্ত। অনেক দিন পর লাবণ্যকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি, একটু তো সময় লাগবে, ভাই।
শ্রীকান্ত : আমি ভাই নই। আমি নায়ক শ্রীকান্ত।
অমিত : কিছুই তো হলো না, শুধু টাকা খরচ হলো। তোর পুরো ১০০০ টাকা শেষ।
শ্রীকান্ত : (রেগে গিয়ে) আগামীকাল টাকাটা চাই।
অমিত : কী করে দেব? উপন্যাসও বন্ধ হয়ে আছে, তার সঙ্গে শরৎদা যেভাবে রেগে আছে।
শ্রীকান্ত : কী করে খরচ হলো টাকা?
অমিত : আমি ভাবলাম যমুনার তীরে আমি আর লাবণ্য ঘুরতে গিয়ে ওকে একটু ইমপ্রেস করব। তবে ভাই আমি তো বাঁশি বাজাতে পারি না, একজন বাঁশিবাদককে ধরে নিয়ে এলাম। উনি ৫০০ টাকা ছাড়া বাঁশি বাজাবে না। আমাকে গচ্ছা একটা ৫০০ টাকা দিতে হলো। আমি গাছতলায় কৃষ্ণ সেজে বসে আছি, রাধিকা কখন আসবে? তাতে কি রোমান্টিক জাগে? ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল, রাধিকার দেখা নেই। ও মা, এদিকে দেখি রাধিকা গ্রামের এক বড়াই ঠাকুমার সঙ্গে গল্প করছে। সব পণ্ড হয়ে গেল। টাকাও গেল।
শ্রীকান্ত : এদিকে উপন্যাস শেষ করার জন্য শরৎদা বারবার আমাকে বকছে। তুই এদিকে রোমিও সাজছিস। তোদের জন্য আমি বাধ্য হয়ে ফেলুদা, ব্যোমকেশ বক্সী ও শার্লক হোমসÑসব ডিটেকটিভকে ধরতে হয়েছিল কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত শ্রীকান্ত রহস্য উন্মোচন করল।
লাবণ্য : ও মা, শ্রীকান্ত এত সব কষ্ট করে ফেলেছে, বেচারাকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে।
শ্রীকান্ত : লাবণ্য, শরৎদা বেত কেটে রেখেছে!
অমিত : শ্রীকান্ত, বাঁচা বাপ!
লাবণ্য : শ্রীকান্ত উপন্যাসটা শেষ করলে কুড়ি হাজার টাকা পাবে। ওই জন্য ও তো উঠেপড়ে লেগেছে। আমাদের মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।
শ্রীকান্ত : আরে নায়কের একটু বেশি টাকা লাগে। অমিতের বেতন থেকে ১২০০ টাকা কাটব। আমাকে তোরা যেভাবে দৌড়েছিস, তার জন্য ২০০ বেশি। অমিত, লাবণ্য চল তাড়াতাড়ি, শরৎদা এসে পড়লে সব ক্যালো হয়ে যাবে।
আমরা তিনজন একটা গান ধরেছি...
‘তোরে বাঁধিব আমি পরাণে পরাণে’
বলতে না বলতেই শরৎদার উপস্থিতি। হাতে বেত নিয়ে...
শরৎদা : তোরা তিনটে আমায় পাগল করে দিবি, কত দিন এই উপন্যাস নিয়ে পড়ব। ব্যাটা সব দাঁড়া!
আমরা তিনজন দৌড় লাগালাম। আমি লাবণ্য ও অমিতকে বললাম, এবার তো নাটকের ক্লাইম্যাক্স শুরু রে। এদিকে পেছনে শরৎদা হাতে বেত নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। আমরা তিনজন চিৎকার করে বললাম, ছুট, জোর লাগাকে হেইয়া পেছনে আসছে শরৎদা।
-২১.১০.২৩

কমেন্ট বক্স