এম এস হক 
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন এবং দলীয় পর্যায়েও সমর-প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। অথচ ৭৬ শতাংশ আমেরিকানের মতে, ভুল গন্তব্য অভিমুখে আমেরিকা ধাবিত হচ্ছে। সংবাদটি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডেমোক্র্যাটিক দলের জন্য বড় ধরনের অশুভ সংকেতই বয়ে এনেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। এবিসি নিউজ/ইপসোসের ৬ নভেম্বর প্রকাশিত জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, ৭৬ শতাংশ ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান বর্তমান প্রশাসনের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছেন এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দাবি করেছেন, আমেরিকা ভুল গন্তব্য অভিমুখে ধাবিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে মাত্র ২৩ শতাংশ আমেরিকানের ধারণা, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ রিপাবলিকান, ৭৬ শতাংশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও ৫৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট নিঃশঙ্কচিত্তে বলেন, বর্তমানে আমেরিকা ভুল গন্তব্য অভিমুখেই ধাবিত হচ্ছে।
এদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ২০২৪ সালের চূড়ান্ত নির্বাচন প্রশ্নে ৩৩ শতাংশ আমেরিকান বাইডেনের প্রতি এবং ২৯ শতাংশ উত্তরদাতা ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন বলে প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়েছে। আবার ২০২০ সালের নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ কৃষ্ণকায় এবং ৬৫ শতাংশ হিস্পানিক ভোটার বাইডেনকে ভোট প্রদান করলেও বর্তমানে ৪৯ শতাংশ কৃষ্ণকায় এবং ৩৩ শতাংশ হিস্পানিক বাইডেনকে সমর্থন করেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৩৩ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, ট্রাম্প কিংবা বাইডেন কেউই নিজ নিজ দলীয় মনোনয়ন না পেলে তাতে জাতীয় নির্বাচনে তেমন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। আবার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়া অন্য কেউ ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে উত্তরদাতাদের ২৯ থেকে ৪ শতাংশ তাদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে ডেমোক্র্যাট এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট উত্তরদাতাদের ৩৫ শতাংশ বাইডেনের বাইরে অপর ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রার্থীর প্রতি সমর্থনের কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন। পক্ষান্তরে ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, বাইডেন ছাড়া অন্য কেউ ডেমোক্র্যাটিক দলীয় মনোনয়ন পেলে তা জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
অনুরূপভাবে ট্রাম্প ছাড়া অন্য কেউ রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে উত্তরদাতাদের ৩১ থেকে ৮ শতাংশ তাদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে রিপাবলিকান উত্তরদাতাদের ৩৭ থেকে ৯ শতাংশ এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভোটারদের ৩৮ থেকে ৯ শতাংশ ট্রাম্প ছাড়া অন্য প্রার্থীদের প্রতি সমর্থন করার সুস্পষ্ট আভাস দিয়েছেন। সর্বোপরি ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, ট্রাম্প ছাড়া অন্য কেউ রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী হলে জাতীয় নির্বাচনে তা তেমন প্রভাব বিস্তার করবে না।
ইপসোস নলেজপ্যানেল ব্যবহারে পরিচালিত এবিসি নিউজ/ইপসোসের জনজরিপে অর্থনীতি ও মুদ্রাস্ফীতি-বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরে ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, অর্থনীতি তাদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যদিকে ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, মুদ্রাস্ফীতি জাতীয় জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অর্থনীতির প্রশ্নে ৩৫ শতাংশ উত্তরদাতা রিপাবলিকানদের প্রতি এবং ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি আস্থা রাখেন বলে জানিয়েছেন। তেমনি মুদ্রাস্ফীতি প্রশ্নে ৩৫ শতাংশ উত্তরদাতা রিপাবলিকানদের প্রতি এবং ২১ শতাংশ উত্তরদাতা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি দৃঢ় আস্থার কথা জানিয়েছেন। তবে ৩৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, অর্থনীতি ও মুদ্রাস্ফীতি প্রশ্নে তারা কোনো দলকে বিশ্বাস করেন না। এ ছাড়া ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতা স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা শিক্ষাকে আমেরিকানদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বলে উল্লেখ করেছেন। আর স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রশ্নে ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি এবং ১৮ শতাংশ রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। শিক্ষার প্রশ্নে ৩৩ শতাংশ উত্তরদাতা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি এবং ২৪ শতাংশ রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সর্বোপরি অপরাধকে ৫৭ শতাংশ এবং গান ভায়োলেন্সকে ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ৩২ শতাংশ উত্তরদাতার মতে রিপাবলিকান এবং ২০ শতাংশ উত্তরদাতার মতে ডেমোক্র্যাটরা অপরাধ নির্মূলে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন বলে তাদের বিশ্বাস। আবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতার মতে ডেমোক্র্যাট এবং ২৪ শতাংশ উত্তরদাতার মতে রিপাবলিকানরা কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম। এদিকে ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা গর্ভপাতকে জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন। গর্ভপাত প্রশ্নে ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি এবং ২৩ শতাংশ রিপাবলিকানদের প্রতি আস্থাশীল বলে জানিয়েছেন।
