মহাকাশ পরিকল্পনা নিয়ে স্পেনে কী আলাপ করছে ইউরোপ?
আয়োজনে ইএসএ’র প্রস্তাবিত আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি নতুন নভোযান এমনকি ভবিষ্যতে মহাকাশ স্টেশন তৈরি করার বিষয়েও আলোচনার কথা রয়েছে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের মধ্যে।
সম্ভাবনাময় মহাকাশ সেক্টরের অর্থনৈতিক সুযোগ ইউরোপের দেশগুলোর ‘হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না’ বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইএসএ।
সোমবার স্পেনের সেবিয়ায় ২০টিরও বেশি দেশের মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসছে গবেষণা সংস্থাটি, যেখানে থমকে যাওয়া ‘আরিয়ান ৬’ মিশনের জন্য আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও মহাকাশ অভিযানে সম্ভাব্য নতুন ভূমিকা নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
এ ছাড়া, মহাকাশ বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ানো নিয়েও মঙ্গলবার আলোচনা করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যে খাতে বড় অগ্রগতি দেখিয়ে একচেটিয়া রাজত্ব করছে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স।
আরিয়ান ৬ মিশনটি থমকে যাওয়ার কারণ হচ্ছে আকারে ছোট ‘ভেগা-সি’ রকেটের অবতরণ ব্যবস্থা ও ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সয়ুজ ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেই এই ‘স্পেস সামিটে’ বসল ইউরোপ।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ আয়োজনে রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা নিয়ে ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির মতো মহাকাশ খাতের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে চলমান অচলাবস্থা সমাধানের চেষ্টা চালানো হবে। এর সঙ্গে রয়েছে আরিয়ান ৬ মিশনের জন্য মাঝামাঝি আকারের অনুদানের বিষয়টিও। এর প্রথম উৎক্ষেপণ পরীক্ষা হতে পারে ২০২৪ সালে, যা মূল পরিকল্পনা থেকে চার বছর পিছিয়ে গেছে।
এ শিল্পের বিভিন্ন সূত্র বলছে, খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফ্রান্সভিত্তিক উৎপাদক কোম্পানি আরিয়ানগ্রুপ এই অতিরিক্ত অনুদান চেয়েছে। গত সপ্তাহে ফরাসি বাণিজ্য সংবাদপত্র লা ট্রিবিউন প্রতিবেদনে বলেছে, এখনও এ প্রকল্পে ৩৫ কোটি ইউরোর ঘাটতি আছে।
এদিকে, ফরাসি মহাকাশ কোম্পানিতে অনুদান দিতে প্রায়ই অনিচ্ছা প্রকাশ করা জার্মানি নিজেই স্বতন্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা তৈরির উপায় খতিয়ে দেখছে। অন্যদিকে, ইতালি নিজেদের ‘ভেগা-সি’ প্রকল্প সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রকল্পের জন্যও উন্নত ব্যবস্থা চালু করতে চায়।
সূত্র বলছে, গত সপ্তাহে ইউরোপের এই তিন শীর্ষ দেশের মধ্যে চলমান ত্রিমুখী বৈরি সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ কিছুটা নেমেছে। তবে, এর সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হল বাজেট নিয়ে আলোচনা।
সেবিয়ার বৈঠকের আগে ইএসএ’র মহাপরিচালক ইয়োসেফ আশবাকার এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি না হলেও ইউরোপের প্রযুক্তি খাতে পুরোনো ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
“মহাকাশ অর্থনীতিতে উন্নতি হচ্ছে…আমার মতে, এতে অংশ না নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো অসম্ভব কঠিন।” --ফরাসি গণমাধ্যম ‘এজেপিএএই’কে বলেন আশবাকার।
দুই দশক আগেও পেটেন্ট ও মেধা সক্ষমতার বিচারে যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের তুলনায় ইউরোপ এতটা পিছিয়ে ছিল না।
“এখন শীর্ষ আইটি কোম্পানিগুলো ইউরোপে নেই। কিছু রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, আর কিছু চীনে। আমরা এ সুযোগ হাতছাড়া করেছি। একই ধরনের উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কোয়ান্টাম প্রযুক্তির কথা, যেখানে আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি।”
জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণায় এখনও নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে থাকলেও মহাকাশে মানুষের অনুসন্ধান চালানোর বেলায় মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা ও এর আগে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করত ইউরোপ।
রয়টার্স বলছে, আয়োজনে ইএসএ’র প্রস্তাবিত আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি নতুন নভোযান এমনকি ভবিষ্যতে মহাকাশ স্টেশন তৈরি করার বিষয়েও আলোচনার কথা রয়েছে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের মধ্যে। এমনকি আরিয়ান প্রকল্পে পরবর্তীতে মানুষ পাঠানোর বিষয়টিও যোগ হতে পারে।
এ প্রস্তাবনা থেকে আগের ‘হার্মিস স্পেসপ্লেন’ প্রকল্পের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা কখনওই বাস্তবায়িত হয়নি। মার্কিন স্পেস শাটলের জবাব হিসেবে এ পরিকল্পনা করেছিল ইউরোপ, যেখানে তিনজন নভোচারীকে নিয়ে মহাকাশে যাওয়ার কথা থাকলেও ১৯৯২ সালে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।
ঠিকানা/এসআর