স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিরোধ অনেক ক্ষেত্রে সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। সেই সঙ্গে অমানবিক ও নিষ্ঠুর পর্যায়েও চলে যাচ্ছে। একজন আরেকজনকে শাস্তি দিতে গিয়ে এবং শিক্ষা দিতে গিয়ে বড় ধরনের ভুল করে ফেলছেন। রাগের বশবর্তী হয়ে যখন একজন আরেকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন, তখন তারা বুঝতে পারেন না কী করছেন। পরে যখন বুঝতে পারেন যে ভুল হয়েছে, সেটি আর শোধরানোর উপায় থাকে না।
সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিরোধের জের ধরে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যা অন্যায়, অমানবিক ও নিষ্ঠুর। যিনি কাজটি করেছেন, তিনি নিউইয়র্কের বাসিন্দা। স্বামীর জন্য স্ত্রী আবেদন করেছিলেন। স্বামী যখন সিটিজেনশিপ নিতে যান এবং তার যেদিন পরীক্ষা হয়, সেদিন স্বামী পরীক্ষায় পাস করেন। পরে তাকে শপথ গ্রহণের জন্য সময় দেওয়া হয়। ওই সময় স্বামী ব্যক্তিটি শপথ নেন। শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি যখন আমেরিকায় তার থাকার এত দিনের সব কষ্টের স্মৃতি ভুলে সিটিজেনশিপ পাওয়ার জন্য স্বস্তি পাবেন, আনন্দ করবেন, ঠিক তখন স্ত্রীর কারণে জীবনের সেই স্বাদটুকু নিতে পারেননি তিনি। কারণ তিনি শপথ নেওয়ার পরপরই তার স্ত্রী সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেটসহ যাবতীয় নথিপত্র কেড়ে নিয়ে যান। কোনো নথিপত্র না থাকায় এবং ওই সময়ে তার সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড নম্বর মুখস্থ না থাকায় তিনি সীমাহীন সমস্যার মধ্যে পড়েন। তিনি মনে করেন, তার সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। আর কোনো নথিপত্রই তিনি তৈরি করতে পারবেন না। তার স্ত্রী এমনটি করবেন, এটা তার চিন্তাতেও ছিল না। তাদের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য তারা চেষ্টাও করেছেন।
সূত্র জানায়, অনেক সময় অনেকেরই গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্রসহ সবকিছুু হারিয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায়। চুরি হয়ে গেলে ওই সব জিনিস ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। সবকিছুর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইডি, সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড, পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। কারও স্কুল, কলেজ কিংবা অফিসের আইডি হারিয়ে গেলে সেটি রিপ্লেস করা সহজ। কারণ এটি স্ব স্ব কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে থাকে। স্কুল-কলেজের আইডি দিয়ে একজনের নাম ও আইডি নম্বর থাকলেই সেটি উত্তোলন করা সম্ভব। পাবলিক স্কুলের আইডি ফ্রি। তবে কলেজের আইডির জন্য রিপ্লেসমেন্ট চার্জ রয়েছে। এই চার্জ দিলে আইডি ইস্যু করা হয়।
এদিকে যারা সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড হারিয়ে ফেলেন, তারা এটি রিপ্লেস করার জন্য আবেদন করলেও সেটি পাওয়া যেতে পারে। যদি কারও ডিএমভি আইডি কার্ড হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি করার জন্য নিয়মকানুন আছে, সেগুলো অনুসরণ করেই ডিএমভি অফিসে গিয়ে তা নিতে হয়। যদি কারও পাসপোর্ট হারিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে পাসপোর্ট হারানোর যাবতীয় তথ্য দিয়ে তা সংগ্রহ করা যায়। কারও যদি কিছুই না থাকে, তাহলেও এটি পুনরায় ইস্যু করানো সম্ভব।
এ ব্যাপারে বাংলা ট্রাভেলসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মোহাম্মদ বি হোসেন (বেলাল) বলেন, আমাদের পাসপোর্র্ট আবেদনসহ বিভিন্ন সার্ভিস রয়েছে। যেখান থেকে আমরা মানুষকে সহায়তা করে থাকি। যদি এমন হয়, কেউ অনেক দিন ধরেই পাসপোর্টের আবেদন জমা দিয়ে রেখেছেন কিন্তু কোনো হদিস পাচ্ছেন না, তাহলে এ ব্যাপারে তাকে সহায়তা করতে পারি। তিনি আমাদের কাছে এলে আমরা তাকে সংশ্লিষ্ট অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দিই।
তিনি উল্লেখ করেন, এক ব্যক্তি সিটিজেনশিপের শপথ নেওয়ার দিনই সব নথিপত্র নিয়ে নেন তার স্ত্রী। স্বামীর শপথের দিনে স্ত্রী তার সঙ্গে যান। স্বামী শপথ নিয়ে বের হয়ে আসার পর তার সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেটসহ ফাইলের সবকিছু নিয়ে যান তার স্ত্রী। সঙ্গে অন্যান্য যত আইডি ছিল, সেগুলোও নিয়ে যান। এ অবস্থায় তিনি খুব অসহায় হয়ে পড়েন। তখন আমাদের কাছে আসেন। তার সব কথা খুলে বলেন। আমরা চেষ্টা করি তাকে সহায়তা করার। আমরা তাকে সহায়তা করতে পেরেছি। তিনি তার পাসপোর্ট করাতে পেরেছেন। আইডি করেছেন। সোশ্যালও তার আছে। সব নথিপত্র পেয়ে এখন তিনি ভালো আছেন। তার স্ত্রী যে উদ্দেশ্যে সবকিছু নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা সফল হয়নি। তবে এখনো তার স্ত্রী জানেন না যে তার স্বামীর সবকিছু আছে। আমেরিকায় কেউ কাউকে ঠকাতে পারবে না। কারণ তার স্ত্রী মনে করেছিলেন, স্বামীর সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাকে শাস্তি দেবেন কিংবা তার সঙ্গে থাকতে বাধ্য করবেন। আসলে স্ত্রীর কাছে তার আর যাওয়ার অবস্থা ছিল না। এ জন্য তিনি আর ফিরেও যাননি। উল্টো তিনি এখন এখানে সব নথিপত্র করে তার মতো শান্তিতে বসবাস করছেন।
বেলাল বলেন, কেউ তার নথিপত্র হারিয়ে ফেললেও পুরো নাম এবং কিছু তথ্য দিতে পারলে আমরা তার সব নথিপত্র ওঠানোর জন্য হেল্প করতে পারব। এ ছাড়া কেউ যদি মনে করেন, তিনি নিজে নিজেই সব করতে পারবেন, সে ক্ষেত্রে তারা স্ব স্ব অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। তারাও হেল্প করবে।