Thikana News
০৬ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

মাথায় আছে মুখে আসছে না- এরকম কেনো হয়! 

মাথায় আছে মুখে আসছে না- এরকম কেনো হয়! 
কথা বলার সময় পরিচিত শব্দ মনে পড়ছে না, তখন আমতা-আমতা করতে হয়। এই রকম পরিস্থিতে প্রায় সবাই পড়েন। আর তখন বলেন, ‘পেটে আছে কিন্তু মনে পড়ছে না’ বা ‘মাথায় আছে মুখে আসছে না’। স্নায়ু-বিশেষজ্ঞরা একে বলছেন ‘টিপ-অপ-দ্য-টাং ফেনোমেনোন’।

“নির্দিষ্ট একটি তথ্য মনে রাখার পরও সেটা মনে করতে না পারলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়”- মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডেলওয়্যার কাউন্টি কমিউনিটি কলেজ’য়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. হেইলি নেলসন।

যে কারণে হয়

“মস্তিষ্কের যে অংশে তথ্য জমা থাকে সেখান থেকে মনে করার প্রক্রিয়াতে যোগাযোগহীনতার কারণে এই রকম পরিস্থিতির তৈরি হয়”- ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন ড. নেলসন।

মস্তিষ্কের গভীরে অবস্থিত ‘হিপোক্যাম্পাস’ অংশ বিভিন্ন তথ্য পাঠিয়ে কথা বলা থেকে শুরু করে নড়াচড়া, আবেগ শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। এই অংশই বিভিন্ন বিষয় মনে রাখা ও স্মরণ করার ক্ষেত্রে কাজ করে মস্তিষ্কের বাইরের অংশ ‘নিওকর্টেক্স’য়ের সাথে মিলে।

“স্মরণ করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে সাময়িক বাধা ‍সৃষ্টির ফল হল ‘মাথায় থাকা কথা মুখে না আসা’। এর কারণ হতে পারে মস্তিষ্কের এই দুই অংশের স্বাভাবিক ও অবাধে তথ্য আদান প্রদান না হওয়া”- বলেন ড. নেলসন।

অন্যান্য কিছু গবেষণা থেকে জানা যায়, আমাদের মস্তিষ্ক মাঝে মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করে।

এই বিষয়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া’র ‘কগনিটিভ’ স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ড. টড হ্যান্ডি বলেন, “কোনো কিছু বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্ক জ্ঞান ও শোনা কোনো কথা আলাদাভাবে সংরক্ষণ করে।”

আর বিভিন্ন শব্দ এবং এর অর্থ মস্তিষ্কের একেক জায়গায় সংরক্ষিত হয়। এই জন্য অনেক সময় নির্দিষ্ট কোনো জিনিসের নাম বা শব্দ ভুলে গেলেও সেটার ব্যাখ্যা বা বর্ণনাটা মনে থাকে।

ধরা যাক- কেউ মাকড়শা ভয় পায় সেটা নিয়ে কথা বলছেন, সেই সময় মনে করতে পারলেন না একে ‘ফোবিয়া’ বলে। একইভাবে আপনি হয়ত কারও সাথে প্রথম কোথায় দেখা হয়েছে মনে করতে পারছেন, তবে তার নামটা স্মরণে আসছে না।

এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ কি আছে?

‘টিপ-অফ-দ্য টাং’ পরিস্থিতি আপাতত দৃষ্টিতে হতাশাজনক মনে হলেও, মানুষের জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা” বলেন ড. হ্যান্ডি।
ডা. নেলসন যোগ করেন, “২০ থেকে ৩০ বয়সিরা মাঝেমধ্যে এই পরিস্থিতিতে পড়েন যা কিনা খুবই স্বাভাবিক আর দুশ্চিন্তার কিছ নেই।”

তবে বয়স্কদের মাঝে এই পরিস্থিতি প্রায়শই দেখা দেয়। তারমানে এই নয় এটা তাদের মস্তিষ্কের ক্ষয়ের লক্ষণ। যদিও ২০২০ সালে কোরিয়ার ‘ডেইগু ইউনিভার্সিটি’র ‘স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজি’ বিভাগের করা গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্করা প্রায় সময় ‘মাথায় থাকা কথা মুখে আসে না’ সমস্যায় ভোগেন। এটা হতে পারে জ্ঞানীয় ক্ষমতা ক্ষয়ের প্রাথমিক লক্ষণ।
তাই ডা. নেলসন পরামর্শ দেন, “যদি দেখা যায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্মরণশক্তি বা মস্তিষ্কের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে তাহলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয়ে নির্ধারিত চিকিৎসা নিতে হবে।”       

প্রায় সময় এরকম হলে কী করা উচিত?
হয়ত বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা গেল- কথা বলতে গিয়ে থেমে যেতে হচ্ছে সঠিক শব্দ মনে করতে গিয়ে।
“ক্লান্তি, মানসিক চাপ বা পর্যাপ্ত ‍ঘুম না হওয়ার মতো বিষয়গুলোর কারণে এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে পারে যে কেউ”- বলেন ডা. নেলসন।

যখন পর্যাপ্ত ঘুম হয় না তখন স্মরণশক্তিতে বাজে প্রভাব ফেলে। যা থেকে দেখা দিতে পারে ‘মাথায় থাকা কথা মুখে না আসা’।
আবার পরিস্থিতির কারণেও এরকম সমস্যা হতে পারে।

ড. হ্যান্ডি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, “যদি কাউকে ‘ইম্প্রেস’ করতে গিয়ে আপনি ঘাবড়িয়ে যান তখন এই ধরনের জটিলতা তৈরি হয়।”
সেটা হতে পারে কোনো চাকরির সাক্ষাৎকারে, ঊর্ধ্বতনের কাছে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরতে বা ভালোলাগার মানুষকে প্রভাবিত করতে গিয়ে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্নতা থেকে এরকম হয়।
আবার যাকে পছন্দ করেন সে যদি আপনাকে বিচার বা মূল্যায়ন করতে থাকে তখন তোতলামিতে ভোগা বা কোনো শব্দ বা ঘটনা ভুলে যাওয়ার মতো ব্যাপার ঘটে- ব্যাখ্যা করেন এই চিকিৎসক।

উত্তরণের উপায়
“যেহেতু ‘মাথার কথা মুখে আসে না’ বিষয়টা সাময়িক সে কারণে হাল ছেড়ে না দিয়ে জোর করে মনে করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে”- পরামর্শ দেন ড. হ্যান্ডি।

তিনি বলেন, “এটা অনেকটা কঠিন ব্যায়াম করার মতো জোর করা। যত বেশি মস্তিষ্ক ব্যবহার করা হবে ততই উন্নতি ঘটবে।”

যদি কোনো কিছু মনে করতে সমস্যা হয় তবে সেই বিষয় সংশ্লিষ্ট ইঙ্গিত বা আভাস পেতে সামনে থাকা মানুষ বা অনলাইনে খোঁজার চেষ্টা করাও একটা সমাধান।

ডা. নেলসন বলেন, “কোনো কিছু ভুলে গেলে সেই সম্পর্কিত বিষয় ধরে খোঁজ চালালে স্নায়ুর পথ কার্যকর হয় সেই সাথে নির্দিষ্ট বিষয়টা মনে করাতেও সাহায্য করে।”
আর এই দুই বিশেষজ্ঞই মনে করেন স্মরণশক্তি উন্নত করতে পর্যাপ্ত ঘুমেরও প্রয়োজন আছে। সেই সাথে কর্মক্ষম থাকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
আর বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সচল রাখতে মস্তিষ্কের ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে। সেটা হতে পারে সামাজিকভাবে মেলামেশা করে, ধাঁধাঁর সমাধান বা বুদ্ধি বাড়ায় এমন কোনো খেলায় মেতে থেকে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স