Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের বাঙালি খেলায় আরও জটিলতা

সরকারের ফাঁদে বিএনপি

সরকারের ফাঁদে বিএনপি সরকারের ফাঁদে বিএনপি
পিছু হটার রাস্তা নেই কারও। না ক্ষমতাসীনদের, না ক্ষমতাহীনদের। সরকার ক্ষমতার হিম্মতে বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়ে গেছে খাদের কিনারে। পেছনে ঠেকা দেওয়ার দেয়ালও রাখেনি। জামায়াতকে কৌশলে সঙ্গী করায় অনেকটা ফাঁদে পড়ে গেছে। তার ওপর  যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে নিয়ে বাঙালি খেলায় জটিলতা আরও পাকিয়েছে। বিরোধী দলকে নিয়ন্ত্রণ ও দমনে পারঙ্গমতার ধারাবাহিকতায় এবারও উতরে যাওয়ার কনফিডেন্সে বিদেশি শক্তিগুলোকে বশ মানানোর ব্যাপারেও আশাবাদী সরকার। সেই দৃষ্টে বিএনপির গরম করা চুলায় জামায়াতসহ ডান-বামের কিছু দলকে দিয়ে পরোটা ভাজার আয়োজনও রয়েছে সরকারের। তাদেরকে দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ড্রামা শোর চিন্তা চেপেছে সরকারের মধ্যে। সেই চিন্তা ও কনফিডেন্স থেকেই বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল করা এবং মহাসচিবসহ বিএনপির নেতাদের ধরপাকড়, নতুন মামলা, গ্রেপ্তারের ধুম। এর বিপরীতে শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়ে থাকেন বিদেশি কূটনীতিকেরা। ঢাকায় প্রাণহানি ও সহিংসতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের গভীর মর্মাহত হওয়ার বার্তা তাদের সেই অবস্থানেরই জানান দেওয়া। সিইসিকে পিটার হাসের শর্তহীন সংলাপের তাগিদও এরই অংশ।
বিএনপির মহাসমাবেশে সহিংসতা, বহু হতাহত এবং দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেপ্তারের খবর গুরুত্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এতে বিরোধী দলের ওপর সরকারের ‘দমন-পীড়ন’ এবং গত সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের পাশাপাশি উঠে এসেছে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাও। ঢাকায় ২৮ অক্টোবর সংঘটিত সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীনদের হেদায়েত করার কাজে পারদর্শী বলে বিবেচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুও। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে পাঠানো বার্তায় ডোনাল্ড লু জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সকল সহিংসতার ঘটনা পর্যালোচনা করবে। তার এ বার্তা নিয়েও খামখেয়ালি। একে যার যার মতো নেওয়ার প্রবণতা। ডোনাল্ড লুর এ হুমকি বিএনপির ওপর প্রযোজ্য করার কারসাজি এঁটেছে সরকার। প্রমাণের চেষ্টা করছে পুলিশ হত্যা, বাসে আগুনসহ ২৮ অক্টোবরের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য বিএনপিরই কাণ্ড। সেই সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবকে গ্রেপ্তারসহ নতুন নতুন মামলা ও ধরপাকড়ে সরকার তার হার্ডলাইনে চলে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। পরিস্থিতিটি ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকদেরও জানানোর পথে যেতে হয়েছে সরকারকে। সেই লক্ষ্যে তাদেরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডাকা হয়েছে।
সরকারের ডাকে সাড়া দেওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সকলকে সহিংসতা পরিহার করে সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। দেশগুলোর দেওয়া এ বার্তা পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশস্থ দূতাবাসের ফেসবুকেও পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে বলা হয়েছে, এগুলো বিএনপিরই কাজ। সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারমাধ্যমকে বলা হয়েছে, এগুলো দেখে বিদেশি কূটনীতিকেরা স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। আসলে ভেতরের খবর ভিন্ন। এসব ফুটেজ কূটনীতিকদের হাতে চলে গেছে আরও আগেই। কোনো কোনোটি তাৎক্ষণিকও পৌঁছে গেছে। এদিকে ঢাকার ডার্টি গেম ওয়াশিংটনেও ঠেলে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। ঘুরছে সেখানে আওয়ামী লীগ- বিএনপির মহড়ার তথ্য। স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে-পেছনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি নোংরামি গোটা দেশকে ভোগাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রবাসী বাঙালি উজবুক টাইপের লোককে দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলা করা বা বাইডেনের উপদেষ্টা সাজিয়ে কোনো অর্ধ-উন্মাদকে দেশে ধরে নিয়ে আসার বাঙালিপনা কৌতুক জোগানোর পাশাপাশি বাজে পরিস্থিতিও করে দিতে পারে।
রাজনীতি-কূটনীতির এ বাঁকে এসে যোগ হয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর মারমুখী সংগ্রাম। এক শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে।
গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় গুলিবিদ্ধ শ্রমিক নিহতের জেরে কোনাবাড়ী এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় আগুনও দিয়েছে শ্রমিকরা। সেই আগুনে পুড়ে মারা যান আরেক শ্রমিক। গাজীপুর-সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলের গত কদিনের প্রকৃত চিত্র গণমাধ্যমেও আসছে না। সেখানে চলছে একধরনের ব্ল্যাকআউট। দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট শ্রমিকেরা ৮ হাজারের স্থলে ২৩ হাজার টাকা দাবি করছেন। বিপরীতে সরকারের উচ্চ পদ থেকে মালিকদের পক্ষ নিয়ে বলা হচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকা রপ্তানি গার্মেন্টসের মজুরি বাড়িয়ে দিলেই তাদের দাবিকৃত বেশি বেতন দেওয়া সম্ভব হবে। হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে গার্মেন্টসের মতো অর্থনীতির অন্যান্য সেক্টরকেও ভোগানো শুরু করেছে। এরই মধ্যে চরম সংকটে  ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে, এমন শঙ্কা ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের। পরিস্থিতি যেখানে এসে ঠেকেছে, চলমান রাজনীতির সমাধান অহিংস পথে হওয়ার আলামত নেই। সংঘাতের মাধ্যমে ফয়সালা হলে অবর্ণনীয় অবস্থায় পড়বে গোটা দেশ। সরকার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করতে নারাজ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকার সেই বার্তা আরও পরিষ্কার করে দিয়েছে।
এর মাঝে আবার আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন রটেছে। পুলিশের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের গুঞ্জনটি বেশ বেগবান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশস্থ দূতাবাসের ফেসবুকে পোস্ট থ্রো হচ্ছে বেশি মাত্রায়। এগুলোতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলা হচ্ছে, মার্কিন সরকার যেকোনো বিষয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার জন্য তার নাগরিকদের অধিকারকে সম্মান করে এবং রক্ষা করে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আশা করে। মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে বলা হয় : ‘সমবেত হওয়ার অধিকার গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আমেরিকানদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার একটি সম্প্রসারিত পদ্ধতি, যা মানুষকে দল গঠন করতে, ধারণা বিনিময় করতে এবং মানবাধিকারকে মূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে এবং এটি একটি স্থিতিশীল সমাজে সামাজিক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।’ এক‌‌ই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দুটো ফেসবুক পোস্টের প্রতিটি শব্দ ও বাক্য নানান অর্থে ঠাসা। বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিনিদের এমন গভীর মনোনিবেশ উপেক্ষা করে কারও কতদূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব, তা ভাবনার বিষয়।
 

কমেন্ট বক্স