Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
পঁচাত্তরের জুজু ♦ ডান-বাম একাকার ♦ নষ্টের গোড়া ড. ইউনূস!

উথাল পাথালে বাংলাদেশ

উথাল পাথালে বাংলাদেশ
দেশে পুরোপুরি পঁচাত্তরের পূর্বাবস্থা বিরাজ করছে, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলকেই নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা চলছে- নিজ দলের নেতাদের কাছে এ বার্তা দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। ভয়-জাগানিয়া তথ্যটির সঙ্গে তাদের বলেছেন সতর্ক থাকতে। এ বার্তার নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিএনপির দিক থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বা সাংগঠনিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে নিজস্ব আঙিনায় তারা একে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্য সব বক্তব্য বা মন্তব্যের মতোই মনে করছেন। ভাবছেন, এটি নিজ দলীয় কর্মীদের ভয় পাইয়ে সংগঠিত ও পূর্ণোদ্যমে মাঠে রাখার চেষ্টা মাত্র। কারণ, কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ সামনে নানা শঙ্কায় আত্মরক্ষার পথ ধরেছেন। মিটিং-মিছিলসহ কর্মসূচিতে হাজিরা দিয়ে এদিক-ওদিক কেটে পড়ছেন। কাজেকর্মে তাদের নানান জায়গা থেকে খুঁজে আনতে হয়।
নেতাকর্মীদের এ শ্রেণিটিকে চাঙা রাখা এ সময়ের জন্য জরুরির চেয়েও জরুরি হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই গত ১৪-১৫ বছরে নানান সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে এখন সরে সরে থাকছেন। কার চেয়ে কে বেশি কামিয়েছেন, সেই তথ্য দিয়ে নিজেকে তেমন কিছু না পাওয়ার দাবি করছেন। দলীয় কাজে গা-ছাড়া দেওয়া নেতাদের মধ্যে বঞ্চিতও আছেন কেউ কেউ। তাদেরকে এখন কোনো না কোনো প্রণোদনা দিয়ে হাত করার আয়োজন রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল সম্পৃক্ত কিছু কিছু কোম্পানি তাদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ পেয়ে যাওয়ায় বাকিদের উদ্দেশে সরকারি কেনাকাটায় চাক্কা কামাইর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ-সংক্রান্ত কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানে পরিবর্তন আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের শেষ সময়ে এসে সরকারি কেনাকাটাসহ উন্নয়নকাজে ভাগ বসিয়ে কতটা সুবিধা করা যাবে, এ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দ্রুত বিল বা টাকা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস রয়েছে। এ ছাড়া নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পারিবারিক মালিকানার সীমা ১৫ শতাংশ করে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতেও ভালো রকমের মওকা মিলবে ক্ষমতাসীন ঘরানার ব্যবসায়ীসহ নেতাকর্মীদের।
এদিকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ের জন্য খারাপ বার্তা দিলেও সরকার বিএনপিকে দমন-পীড়নে একটুও ছাড় দিচ্ছে না। বরং আরও বাড়াচ্ছে। বিএনপিকে সামনের দিনগুলোতে কেবল পুলিশ নয়, আনসার দিয়ে পেটানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এমনকি অপরাধীকে আটকের ক্ষমতাও দেওয়া হচ্ছে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যদের। সেই দৃষ্টে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল ২০২৩’ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। বিলটি দ্রুত পাস করার প্রস্তুতি চলছে। সরকারের এই পদক্ষেপে কেবল বিএনপি নয়, সরকারের মিত্রপক্ষ জাতীয় পার্টিও আতঙ্কিত-ক্ষুব্ধ। সংসদে সেই ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে বলা হয়েছে, এতে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হয়ে যাবে। আনসার বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার জন্য। এখন তাদের পুলিশের প্যারালাল করে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এমনকি আন্দোলনের মাঠেও আনসারদের অ্যাকশন দেখা যেতে পারে শিগগিরই। এ ছাড়া বিরোধী দলকে দমনে নেতাকর্মীদের বিচারকাজেও গতি আনা হয়েছে। এরই মধ্যে রাতেও আদালত বসানোর দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। ধরে আনতে বললে বেঁধে আনার মতো কাজটি করেছে পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস। তারা পুরোনো মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার কাজে নেমেছে। সেগুলোর বেশির ভাগ আসামি বিএনপির নেতাকর্মীরাই।
পুলিশকেও কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এসব মামলার বিচার জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ করার ব্যবস্থা করতে। প্রায় আড়াই শ মামলার আসামিদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী। বিচারে তারা দোষী সাব্যস্ত হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য মর্মে হাইকোর্টের নির্দেশনাও বিএনপির জন্য বড় রকমের দুঃসংবাদ। পর্যবেক্ষণমূলক নির্দেশনাটি এসেছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ থেকে।
বিচার বিভাগ ও সরকারপক্ষের এ ধরনের আয়োজনের বিপরীতে বিএনপি আতঙ্কিত। আবার আন্দোলনের সাফল্য নিয়েও আশাবাদী। নির্বাচন আদৌ হবে কি না-সেই প্রশ্নও মাঠে ছাড়তে পেরেছে তারা। বিশেষ করে, ‘দেশে পুরোপুরি পঁচাত্তরের পূর্বাবস্থা বিরাজ করছে’ প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বার্তা তাদেরকে কিছু পুলকিতও করছে। আর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের এগিয়ে আসায় উৎসাহিত হওয়ার কথা প্রকাশ্যেই বলে ফেলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদেরের কথা আরও উদ্বেগজনক। তিনি বলেছেন, নির্বাচন ঠিক সময়ে হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। কখন কী ঘটে যায়, বলা যায় না। সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন আরও আগ বাড়িয়ে। ‘সরকারকে চলে যেতে হবে’ বলে মন্তব্য তার। ডান-বাম এবং মধ্যপন্থা মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন মতিগতি পঁচাত্তরের পূর্ববর্তী সময়েও দেখা গেছে। মাঠে-ময়দানেও তারা এখন কাছাকাছি। নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, তোপখানা রোড মিলিয়ে তারা এগোচ্ছে অনেকটা যুগপতে। ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যু থেকে প্রায় অভিন্ন বার্তা দিচ্ছে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, হেফাজত, খেলাফত। বাম ঘরানার সিপিবির টোকাটুকিও কাছাকাছি। রব-মান্না, নুরু-সাকীরা তো আছেনই। তবে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের দিকে।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন তথ্যের আলোকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বিশ্বাস, ড. ইউনূসই যত নষ্টের গোড়া। তিনিই পেছন থেকে যাবতীয় কলকাঠি নাড়ছেন। দমছেন না শ দেড়েক মামলায় ফাঁসানোর পরও। মিডিয়াকে এড়িয়ে চলা এই নোবেলজয়ীর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিবৃতিকেও মারাত্মক সন্দেহের চোখে দেখছে সরকার। বিবৃতিতে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘এই দিনে এবং এই যুগে আমাদের সবারই সম্মিলিতভাবে এই বোধোদয় হওয়া উচিত যে যুদ্ধ ও রক্তপাত আধুনিক সভ্যতার মূল্যবোধ ও অগ্রগতির সঙ্গে একেবারেই সংগতিপূর্ণ নয়।’ তার মন্তব্যের মাঝেও নানা অর্থ ও তরজমা খুঁজে ফিরছে সরকার ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মার্কিনি চিকিৎসক আসার পেছনেও ড. ইউনূসের যোগসূত্র আঁচ করছে সরকার।
 

কমেন্ট বক্স