Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

অসহায় বাংলাদেশ ব্যাংক

অসহায় বাংলাদেশ ব্যাংক


গত বছরের জুলাই মাসে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের ঢাকার জনতা ভবন করপোরেট শাখা ও লোকাল অফিস এবং চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখাÑএই তিন  শাখার বৈদেশিক ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে চাপের মুখে পরের দিনই ঋণ কার্যক্রম খুলে দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ প্রভাবশালীরা এই তিন শাখার গ্রাহক। ফলে সিদ্ধান্তটি ২৪ ঘণ্টাও ধরে রাখতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
গত বছরের আগস্টে দেশি-বিদেশি ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ডলার বাজার অস্থিতিশীল করে অতিরিক্ত মুনাফা করায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ব্যাংক ছয়টি হলো দেশের বেসরকারি খাতের প্রাইম, ব্র্যাক, দি সিটি, ডাচ-বাংলা ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন করে এসব ব্যাংকের ডলার কেনাবেচার তথ্য পর্যালোচনা করে। কোনো কোনো ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে এক মাসে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করার তথ্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু মাস না পেরোতেই আরোপিত শাস্তি শর্ত সাপেক্ষে শিথিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুচলেকা দেন ব্যাংকাররা।
শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ফের ডলার কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ে কয়েকটি ব্যাংক। ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচার প্রমাণ পাওয়ায় বেসরকারি ১০ ব্যাংকের ১০ জন ট্রেজারিপ্রধানকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার, ব্র্যাক, মধুমতী, মিডল্যান্ড, এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, আল-আরাফাহ ইসলামী, শাহজালাল ইসলামী ও ট্রাস্ট ব্যাংক। জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ৯ অক্টোবর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে জরিমানা দেননি তারা। প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার নামে এবারও পার পেতে পাঁয়তারা করছেন এই কর্মকর্তারা। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগের দায়িত্বে আছেন ডিএমডি পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
আর্থিক খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে। এ ছাড়া দেশের মুদ্রানীতি নিরূপণ ও পরিচালনার দায়িত্বও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা পাওয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কখনো ক্ষমতার দাপট আর কখনো সরকারি হস্তক্ষেপে নাজেহাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা। দায়িত্বপ্রাপ্তরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারায় হযবরল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে কিছু অসাধু কর্মকর্তার অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ কিংবা বোর্ড সদস্যদের সাহসী ভূমিকা পালনে ব্যর্থতাও অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
বর্তমানে সরকারি হস্তক্ষেপের পাশাপাশি ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থানকারী প্রভাবশালী মহলের কাছে অসহায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা। অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারে না বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রভাবশালীদের চাপে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং তাদের অনুকূলে প্রজ্ঞাপন জারি ও তদন্ত চালু বা বন্ধ হচ্ছে। ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করতে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় সব সিদ্ধান্তে ক্ষমতাশালীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রাধান্য পাওয়ার ঘটনা ওপেন সিক্রেট। সিদ্ধান্ত দিয়েও তা প্রত্যাহার কিংবা ঘোষিত রায় বাস্তবায়নে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্ষমতার দাপটের কাছে নতি স্বীকার করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির শীর্ষ নির্বাহীরা। ফলে আর্থিক খাতে অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছে। অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রণীত নীতি, ক্ষমতাচর্চার কারণে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে।
ক্ষমতাশালীদের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতি স্বীকারের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। বর্তমান গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ঋণ শ্রেণিকরণের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া করোনার অজুহাতে একের পর এক নীতি সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব প্রভাবশালীদের ইচ্ছায়ই করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ সিআইবির তথ্য হালনাগাদের ক্ষমতাও ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও তথ্য দাখিলে সুযোগ পেয়েছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে খেলাপির তথ্য গোপন করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। অন্যদিকে ক্ষমতাশালীদের চাপের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ববান কর্মকর্তাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ ও শাখা অফিসে বদলি করার ঘটনা ঘটছে অহরহ। সম্প্রতি কয়েকটি বড় গ্রুপের অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে কর্মকর্তাদের দায়িত্বে ব্যাপক রদবদল আনতে বাধ্য হয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষপাতমূলক আচরণের ঘটনা অবাক করার বিষয় নয় এবং এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনাও নয়। নানা অজুহাতে জালিয়াতচক্রকে সুরক্ষা দেওয়া বিচারহীনতার নামান্তর।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অপরাধীদের ছাড় দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির মতো ঘটনা অপ্রত্যাশিত এবং দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

কমেন্ট বক্স