Thikana News
২২ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪


 
সাক্ষাৎকারে মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন

কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত  হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি

কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত  হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি


বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান লিটন। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে তিনি আসকে কাজ করে আসছেন। ১৯৮৮ সালে রিসার্চার হিসেবে সংস্থাটিতে কাজ শুরু করেন তিনি। পর্যায়ক্রমে কো-অর্ডিনেটর, পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক পদে আসীন হন। প্রায় দুই বছর আসকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার  পর গত বছরের ২১ আগস্ট তিনি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জন্মলগ্নের পরপরই সংস্থাটিতে যুক্ত হওয়ার কারণে তিনি বহু ঘটনার সাক্ষী। মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার অ্যাওয়ার্ড’সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার পুরস্কার অর্জন করেন মো. নূর খান লিটন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মেয়ের কাছে এসেছেন নূর খান। নিউইয়র্কে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। ৮ অক্টোবর এসেছিলেন ঠিকানা অফিসেও। ঠিকানার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মো. নূর খান বলেন, কাজের পরিবেশ সংকুচিত হওয়ার কারণে এখানে এসেছি। এখানে লম্বা সময় থাকব। যদিও আমি গত ছয় মাস বিনা বেতনেই চাকরি করছি। আমি আসলে লম্বা ছুটিতে এখানে এসেছি। কবে নাগাদ দেশে ফিরব, তা বলতে পারছি না। তবে পরিকল্পনা আছে নভেম্বরে কিংবা জানুয়ারি মাসে দেশে ফিরে যাওয়ার। এই সময়টা মেয়ের কাছে থাকব।
তিনি আরও বলেন, এখানে আসার আগে আমি অফিসে ছুটির আবেদন জমা দিয়েছি। স্টেশন লিভ করার অনুমতি নিয়েই এখানে এসেছি। নিউইয়র্কে আসার পর ব্যস্ততা নেই। আসলে দেশ থেকে এত বড় ছুটিতে আসতাম না। অনেক দিন ধরেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিদেশি গ্র্যান্ট ছাড়ের অনুমতি মিলছে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানটি মানবাধিকার, বাংলাদেশের পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। গত দুই বছরে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এসব প্রকল্পের অর্থ সময়মতো পাচ্ছি না। আমাদের কাজের মধ্যে হিউম্যান রাইটস, পারিবারিক নির্যাতন, সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। আমাদের বেশির ভাগ অর্থ আসে সুইডিশ সিডা থেকে। এ ছাড়া আইআরসির মাধ্যমে আমেরিকার ইউএসএইডের সহায়তা আমরা পাই।
তিনি বলেন, আমরা গত দুই বছর ধরেই বিভিন্ন কারণে অর্থছাড়ের ব্যাপারে কঠিন সমস্যার মধ্যে আছি। আমাদের অনুমোদিত অর্থ আছে কিন্তু অনুমোদিত প্রকল্প হওয়ার পরও সময়মতো অর্থ ছাড় না হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আগে আমাদের ৭৮-৮২ জন স্টাফ ছিল, এখন তা ১০ জনে নেমে এসেছে। অর্থ সংকটের কারণে স্টাফদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিনা বেতনে কত দিন কাজ করবে তারা? এখন যে কজন আছেন, তারা বিনা বেতনেই কাজ করছেন।
নূর খান লিটন জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে আসকের জন্য পাঁচ কোটি টাকা অনুদান আসে। এর মধ্যে সময়মতো ৫০ শতাংশ অনুদান পেলেও বাকি ৫০ শতাংশ অনেক পরে অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পাওয়া গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের অর্ধেক আড়াই কোটি টাকা পাওয়া গেছে, বাকি আড়াই কোটি টাকা ছাড় করানোর জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু সেই অর্থ এখনো ছাড় পাইনি। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জুন মাসের পর অর্থ পেতে আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি।
আইনি কোনো প্রক্রিয়ায় অর্থ ছাড় পাওয়ার চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সব নথিপত্র দিয়েও অর্থ পাচ্ছি না। আইনি প্রক্রিয়ায় গেলে দেখা যাবে লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়বে। তাই এখনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি না।
সব ফান্ড বিদেশ থেকে আসার বিষয়ে নূর খান বলেন, আমাদের নিজেদের কোনো ফান্ড নেই। যতটুকু আছে তা চাঁদা ও দান এবং ব্যাংক ইন্টারেস্ট। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অঙ্ক চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার মতো। সেখান থেকে কিছু কিছু খরচ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের একটি ভূমি আছে। অর্থ সংকটের কারণে ভবন তোলা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালিত হয় বিদেশি অনুদানে। এ কারণে প্রথমে প্রকল্প নিতে হয়। সেটি অনুমোদন করাতে হয়। অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের টাকাও পাচ্ছি না।
ফান্ড ছাড় না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ফান্ড আছে কিন্তু ফান্ড ছাড় হচ্ছে না পুরোপুরি। ৫০ শতাংশ ছাড় হয়। বাকি ৫০ শতাংশ ছাড় হচ্ছে না। এনজিও ব্যুরো থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ে আমরা এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। সময় চেয়েছি কিন্তু পাইনি। এনজিও ব্যুরো যতবার যত নথিপত্র চেয়েছে, সব দিয়েছি, তার পরও অর্থ পুরোটা ছাড় হয়নি।
মানি লন্ডারিংয়ের আশঙ্কা থেকেই অনুদানের অর্থছাড়ের ব্যাপারে কড়াকড়ি করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে নূর খান লিটন বলেন, কোনো এনজিও মানি লন্ডারিং করছে কি না, এটা তো অবশ্যই মনিটর করা সম্ভব এবং ধরাও সম্ভব। সে রকম কেউ থাকলে ধরবে। আমাদের সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে যাতে দ্রুত অর্থ ছাড় দেওয়া হয়, সে অপেক্ষাই করছি।
মো. নূর খান লিটনের এক মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। স্ত্রী ও আরেক মেয়ে থাকেন বাংলাদেশে। তাদেরকে নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তার মধ্যে দিন পার করেন।
উল্লেখ্য, মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন মো. নূর খান লিটন। বিশ্বের ১০টি দেশে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ১০ জনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
মো. নূর খানকে নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বিগত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের সুপরিচিত দুটি মানবাধিকার সংস্থার নেতৃত্ব দিয়েছেন নূর খান। একই সঙ্গে দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নথিবদ্ধ করা এবং জবাবদিহির সংস্কৃতি এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, তার সময়োচিত পদক্ষেপ, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষে কথা বলা এবং দেশের সুশীল সমাজের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে এবং নির্দোষ অনেককে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে।

কমেন্ট বক্স