জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা সরকার অপসারণের আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে শরিক হতে পারছে না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে তারা রাজপথে থাকবে। সুষ্ঠু, প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা তারাও চায়। নির্বাচন কমিশন ও সরকার দেশবাসী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রকাশ্য সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে জামায়াত ভিন্ন চিন্তা করবে। জামায়াত বরাবর বিএনপির সর্বাধিক বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে তাদের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলনে শরিক হয়েছে। জামায়াতের পরামর্শেই বেগম খালেদা জিয়া পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচি একতরফাভাবে বাতিল করেন। ভারতের সরকার ও জনগণ যা তাদের প্রতি চরম অসম্মানজনক বলে মনে করে। এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটে। নির্বাচন সামনে রেখে তারেক রহমান বিএনপির প্রতি ভারতের আস্থাহীনতা দূর করার জোর চেষ্টা করলেও উল্লেখযোগ্য ফল হয়নি। জামায়াতসহ ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে দূরে রাখা হয় কেবল নিকট প্রতিবেশী ভারতের কৃপালাভের আশায়। কিন্তু ফল হয়নি। ভারত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন ও সরকার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিসহ যেসব পদক্ষেপ ও কর্মপন্থা নিচ্ছে, তাতে জনগণের মনে ও বিদেশি মধ্যে বিদ্যমান সংশয়-শঙ্কা বহুলাংশেই দূর হয়ে যাবে। এ রকম অবস্থায় বিএনপির মতো দলের পক্ষে নির্বাচনের বাইরে থাকা কঠিন ব্যাপার। বিশেষ করে, দলগতভাবে বিএনপিকে বাইরে রাখা হলেও দলটির অনেক সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশী জনপ্রিয় নেতাদের পক্ষে নিজেদের নির্বাচনের বাইরে রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। সূত্র জানায়, গত ৩ এপ্রিল দেশের রাজনীতিবিদদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে সাবেক ও বর্তমান জোটসঙ্গীদের দাওয়াত দেওয়া হলেও জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সাবেক সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের এখনো যোগাযোগ রয়েছে। যদিও তিনি বলছেন, নেই। আর লন্ডনকেন্দ্রিক বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক কেমন, সেটা কেউ জানে না।
জামায়াত অবশ্য দলের জনপ্রিয়, যোগ্য প্রার্থী, নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চিন্তা করে নয়, দলীয় স্বার্থ বিবেচনায়ই দলগত সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নিয়েছে। জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু জামায়তই নয়, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, চরমোনাইর পীরের বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টিসহ আরো কয়েকটি ইসলামি দল নির্বাচনে অংশ নেবে। ধর্মীয় সংগঠনগুলোর দু-তিনটি দল বিএনপির সমান্তরাল কর্মসূচি দিতে পারে। বাকি প্রধান দলগুলো সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় নির্বাচনমুখী ভূমিকা নেবে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অন্য প্রক্রিয়ায়ও সমঝোতা চালানো হচ্ছে। ধর্মীয় এই সংগঠনগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সহযোগী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার পক্ষে নয়। তাদের মনোভাব ও সিদ্ধান্ত বিএনপিকে হতাশ করেছে। এই সংগঠনগুলো তাদের সিদ্ধান্ত ও করণীয় সম্পর্কে বিএনপিকে জানানোর জরুরি তাগিদ বোধ করছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের দারুণভাবে মনঃক্ষুণ্ন করেছে।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই ইসলামি দলগুলো নির্বাচনের পক্ষে মাঠে নামবে। তাদের অনেকে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীও চূড়ান্ত করা শুরু করেছে। তবে তারাও রাজপথে কর্মসূচি পালন করবে। তা করা হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে কেউ স্থায়ী শত্রু নয়, আবার কেউ চিরদিনের বন্ধুও নয়। এই মুহূর্তে কাউকে শত্রু কিংবা মিত্র বানানো বিএনপির লক্ষ্য নয়। বিএনপির লক্ষ্য হচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করা। আর এখানে যত পারা যায় রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত করা। সরকারবিরোধী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতকে নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ছিল, তাই অনেকটা আলোচনার ভিত্তিতে কৌশলগত কারণে তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলা হচ্ছে।