চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিককে খুনের পর তার লাশ গুমের উদ্দেশ্যে মাংসখণ্ড ও হাড়গোড় আলাদা করে পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। তারা হলেন উচিং থোয়াই মারমা ও ক্যাসাই অং চৌধুরী।
এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব মিলে নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব কর্মকতার্দের বলেছেন, উচিত শিক্ষা দিতে শিবলীকে জবাই করে খুন করে তার মাংসপিণ্ড ও হাড়গোড় আলাদা করে পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন তারা।
৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তারের পর ১ অক্টোবর রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর অপহরণের ১৪ দিন পর রাঙামাটির কাউখালীর পাহাড়ের গহিন অরণ্যে একটি গর্ত থেকে শিবলী সাদিক হৃদয় নামে ওই কলেজছাত্রের খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর গণপিটুনিতে উমংচিং মারমা নামের একজন নিহত হয়। আটক হয় আরও দুজন। পলাতক ছিল এ ঘটনায় জড়িত আরও দুই আসামি।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, হৃদয়কে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে উচিং থোয়াই মারমাকে শনিবার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসাই অং চৌধুরীকে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব-৭ কমান্ডার আরও বলেন, ‘মুরগিকে পর্যাপ্ত খাবার না দিয়ে বিক্রি করে দিত খামারে কর্মরত শ্রমিকরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করে পোলট্রি খামারের ম্যানেজার শিবলী সাদিক হৃদয় (১৯)। এ কারণে খামারে কর্মরত ওই শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বাগবিতণ্ডাও হয় তার। তখন থেকে শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নেয় হৃদয়কে উচিত শিক্ষা দেবে। এ জন্য তাকে খামার থেকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার উচিং থোয়াই মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হৃদয়কে অপহরণের এক দিন পর ২৯ আগস্ট বিকালে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে হত্যা করা হয়। উচিং থোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরে। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল শুধু যারা খামারে কাজ করত তারাই। এর মধ্যে উমংচিং মারমা ও অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে। উচিং থোয়াই মারমা তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনে। তাদেরকে দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।
মাংস খাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে র্যাব-৭ এর এই কর্মকর্তা জানান, হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলেছে—এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা জানে না। তবে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, এটি সত্য। মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঠিকানা/এনআই