নিউইয়র্কে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমলেও এখনো অনেক পণ্যই নাগালের বাইরে। এ কারণে অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের পণ্য কিনতে পারছেন না। এ অবস্থায় গ্রোসারি থেকে স্ট্রলারের মাধ্যমে চুরি হচ্ছে পণ্য। নারী-পুরুষ উভয় ক্রেতাই চুরির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। চুুরি করে জিনিস নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের অনেকে ধরাও পড়ছেন। ধরা পড়ার পর কেউ কেউ সরি বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন, কেউবা ক্ষমা করে দিতে বলেন আবার কেউ কেউ তার সীমাহীন কষ্টের কথা উল্লেখ করে চুরি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান। এসব চোরকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানবিক দিক বিবেচনা করে গ্রোসারির ক্যাশ কাউন্টার পারসন বা ম্যানেজার জিনিস রেখে মাফ করে দেন। কিন্তু অনেকে আবার চুরি করার পর অস্বীকার করেন। ধরা পড়ার পর চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, অন্য দোকান থেকে পণ্য কিনে এনেছেন। তারা দাম না দিয়ে মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ ধরনের চোরদের ছাড় দেন না গ্রোসারির মালিকপক্ষ। তাদের দোকান থেকেই ধরা পড়া ব্যক্তি স্ট্রলার কিংবা ট্রলিতে পণ্য ভরেছেন এবং লুকিয়ে রেখেছেন, সেটা ক্যামেরায় ধরা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন গ্রোসারিতে কর্মরতরা। তখন চোরদের আর অস্বীকার করার উপায় থাকে না। জনসমক্ষে লজ্জা পাওয়ার পাশাপাশি তাকে নির্ধারিত দাম দিয়ে পণ্যটি কিনে নিতে হয় অথবা রেখে যেতে হয়। অনেক সময় গ্রোসারি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুলিশে সোপর্দ করে।
জ্যামাইকার একটি বড় গ্রোসারির এক স্টাফ বলেন, এখন অনেকেই জিনিস চুরি করার চেষ্টা করেন। অনেকে অভাবের তাড়নায় চুরি করেন আবার কেউ কেউ অভ্যাসগত কারণেও চুরি করেন। তবে চুরি করলেও আমরা সবাইকে পুলিশে দিচ্ছি না বা তাদের বিরুদ্ধে কেস করছি না। কারণ চুরিতে ধরা পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে ভিন দেশি কিছুু কিছু থাকলেও বেশির ভাগই বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশিদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিরা যেমন রয়েছেন, তেমনি হিজাব পরা অনেক নারীও রয়েছেন। তারা চুরি করার উদ্দেশ্যেই মূলত গ্রোসারিতে আসেন। তারা কিছু জিনিস হাতে রাখেন আর কিছু জিনিস স্ট্রলারে লুকিয়ে রাখেন। হাতে রাখা জিনিসগুলো কাউন্টারে দেন পেমেন্ট করার জন্য। আর স্ট্রলারের ভেতরে যেসব জিনিস রাখেন, সেগুলোর পেমেন্ট দেন না। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। অনেকে সঙ্গে বাচ্চা নিয়ে আসেন। আমরা আগে মনে করতাম, স্ট্রলারে বোধ হয় বাচ্চার জিনিসপত্র ও খাবারদাবার রয়েছে। এ জন্য চেক করতাম না। কিন্তু ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, অনেকেই বাচ্চার খাবারদাবারের সঙ্গে দোকান থেকে কিছু জিনিস নিয়ে নিচ্ছেন। পেমেন্টের সময় আমরা যখন জিজ্ঞাসা করি, আপনার কাছে আর কিছু আছে কি, তখন তারা দিব্যি বলেন আর কিছু নেই। অথচ আমরা দোকানের প্যাকেট দেখলেই বুঝতে পারি যে তিনি এখান থেকেই পণ্যটি নিয়েছেন। তাই এখন কেউ বাসা থেকে স্ট্রলার নিয়ে এলে আমরা নজর রাখি, তিনি স্ট্রলারের ভেতরে করে কোনো মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন কি না।
তিনি আরও বলেন, একবার এক নারী হিজাব পরে এসে স্ট্রলারে করে জিনিস নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, তিনি কোনো পণ্য নেননি। তার স্ট্রলারে থাকা পণ্য অন্য গ্রোসারি থেকে এনেছেন। তার কাছে রিসিট দেখতে চাইলে বলেন, বাচ্চা ছিঁড়ে ফেলেছে। আমরা তার কথায়ই বুঝতে পারছিলাম, তিনি মিথ্যা বলছেন। তার মিথ্যা বলার বিষয়টি ধরা পড়ার পর তিনি সরি বলেন ও মাফ চান এবং জিনিসগুলো রেখে যান। ৫০-৬০ ডলারের জিনিস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তার মতো মানুষ এমনটা করায় আমরা খুবই অবাক হয়েছি।
সেখানকার আরেকজন স্টাফ বলেন, অনেকে চুরি করে ধরা পড়লেও আমরা তাদের পুলিশে দিই না। কারণ সেটা ভীষণ লজ্জাজনক ও অপমানজনক। আমরা কেবল মানিবক কারণে এবং বাংলাদেশি বলে পুলিশে দিই না। আসলে কিছু কিছু মানুষের জন্য বদনাম হচ্ছে।
এদিকে চুরি ঠেকাতে এখন অনেক বড় বড় গ্রোসারিতেই সিকিউরিটি বসানো হয়েছে। তারা রিসিট চেক করে দেখেন সব ঠিক আছে কি না। জ্যাকসন হাইটসের একটি বড় দোকানে চেকার বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই দোকানের মালিক বলেন, অনেকেই না বলে জিনিসপত্র নিয়ে যায়। চুরি ঠেকানোর জন্যই চেকার বসাতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কাস্টমারদের ব্যাগে হাত দিচ্ছি না এবং কোনো জিনিসও চেক করছি না। কেবল রিসিটটা চেক করছি।
জ্যাকসন হাইটসের একটি গ্রোসারির কর্ণধারের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানকার সব দোকানেই ক্যামেরা বসানো আছে। এর পরও অনেক মানুষ চুরি করার চেষ্টা করে। বছর দুয়েক ধরে চুরি অনেক বেড়েছে। কয়েকজন বাংলাদেশিকে আমি ধরেছি। এর মধ্যে একজনকে পুলিশেও দিয়েছিলাম। এখন আমরা মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছি।
জ্যামাইকার একজন গ্রোসারির মালিক বলেন, অনেকে চুরি করার চেষ্টা করে। সবাইকে আমরা ধরতে পারি না। আর ধরলেও কোনো শাস্তি বা পুলিশে দিচ্ছি না। কারও কাছে টাকা না থাকলে আমরা তো অনেক সময় ফ্রি খাবার দিই। আসলে এটি নীতি-নৈতিকতার বিষয়। চুরি করাটা অনেকের অভ্যাস।