অটোয়া-নয়াদিল্লি উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে কানাডা সরকার দেশটির হিন্দুদের হুমকি দেয়া সম্পর্কিত একটি ভাইরাল ভিডিওর নিন্দা করেছে। কানাডার জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্ক হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন যে ‘ভারত ফিরে যাও’ আহ্বান সংবলিত ‘শিখস ফর জাস্টিস সংস্থা’র অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে আপনারা হুমকি বোধ করবেন না। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো খলিস্তানপন্থী ব্যক্তিত্ব হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরপরই ‘শিখস ফর জাস্টিস’ এবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুদের কানাডা ছাড়ার হুঁশিয়ারি দেয়। এক ভিডিও বার্তায় নিজ্জরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গুরপতবন্ত সিং পান্নুন জানিয়েছেন ‘ইন্দো হিন্দু কানাডা ছাড়ো। তোমরা ভারতে চলে যাও। তোমরা শুধু ভারতকে সমর্থন করছ এমনটাই নয়, তোমরা খলিস্তানপন্থীদের বাকস্বাধীনতাতেও আঘাত হানছ। এমনকি নিজ্জরের খুন উদ্যাপনের মাধ্যমে তোমরা উৎসব করেছ।’
ট্রুডোর বক্তব্যের পর কানাডা-ভারত ভয়ঙ্কর কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই কানাডার ইন্দো কানাডিয়ান কমিউনিটি বিশেষত হিন্দুদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ‘কানাডিয়ানস হিন্দুস ফর হারমনি’র মুখপাত্র বিজয় জৈন জানিয়েছেন, ‘আমরা তো এখন বিদেশে হিন্দুফোবিয়া দেখছি।’
ভারত ট্রুডোর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এটিকে ‘অযৌক্তিক’ বর্ণনা করেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ভারত কানাডায় তার দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলোতে ‘নিরাপত্তা হুমকি’ উল্লেখ করে কানাডিয়ানদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে।
লেব্ল্যাঙ্ক সরাসরি শিখস ফর জাস্টিসের নাম উল্লেখ করেননি। তবে তিনি সংস্থাটির ভিডিওটির তীব্র সমালোচনা করেছেন। সমালোচনার মুখে বেশ কয়েক দিন পরে এখন ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
লেব্ল্যাঙ্ক এক টুইটে বলেন, ‘সব কানাডিয়ান তাদের কমিউনিটিতে নিরাপদ থাকার অধিকার রাখে।’
তিনি বলেন, ‘হিন্দু কানাডিয়ানদের লক্ষ্য করে একটি অনলাইন হেট ভিডিও প্রচার করা কানাডিয়ানদের মতো আমাদের প্রিয় মূল্যবোধের বিরোধী। এখানে আগ্রাসন, ঘৃণা, ভীতি প্রদর্শন বা ভয়ের উসকানি দেয়ার কোনো স্থান নেই।’
পাবলিক সেফটি কানাডা ভিডিওটিকে আপত্তিকর ও ঘৃণ্য বলে অভিহিত করেছে। আরেক টুইটে তিনি বলেন, ‘এই দেশে আগ্রাসন, ঘৃণা, ভীতি প্রদর্শন বা ভয়ের উসকানির কোনো স্থান নেই এবং এগুলো শুধুমাত্র আমাদের বিভক্ত করার জন্য কাজ করে।’ ‘আমরা সকল কানাডিয়ানকে একে অপরকে সম্মান করতে এবং আইনের শাসন অনুসরণ করার আহ্বান জানাই। কানাডিয়ানরা তাদের কমিউনিটিতে নিরাপদ বোধ করার যোগ্যতা রাখে।’
কানাডার প্রধান বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোইলিভর বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কানাডায় হিন্দুদের লক্ষ্য করে ঘৃণ্য মন্তব্য বাড়ছে।
তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘প্রত্যেক কানাডিয়ান নির্ভয়ে বাঁচার এবং তাদের কমিউনিটিতে স্বস্তি বোধ করার যোগ্য। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আমরা কানাডায় হিন্দুদের লক্ষ্য করে ঘৃণ্য মন্তব্য দেখেছি।’
রক্ষণশীলরা আমাদের হিন্দু প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের বিরুদ্ধে এই মন্তব্যের নিন্দা করেন। তারা বলেন, হিন্দুরা আমাদের দেশের প্রতিটি অংশে অমূল্য অবদান রেখেছে এবং এখানে সর্বদা তাদের স্বাগত জানানো হবে। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জগমিত সিংও কমিউনিটির সমর্থনে একটি বার্তা টুইট করেছেন। তবে ভিডিওটির নিন্দা করা রাজনীতিবিদদের কেউই সরাসরি শিখস ফর জাস্টিস-এর নাম উল্লেখ করেননি। হিন্দুদের ভারতে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো ভিডিওটি নিউইয়র্কের একজন আইনজীবী গুরপতবন্ত সিং পান্নুন উপস্থাপন করেন। তিনি কানাডায় হিন্দুদের একই সাথে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ করেন। গত জুন মাসে কানাডায় নিহত শিখ নেতা নিজ্জরও খালিস্তান আন্দোলনের একজন স্পষ্টবাদী সমর্থক ছিলেন। ভারত তাকে একজন ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী এবং তাকে একটি জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব ও নিয়োগের জন্য অভিযুক্ত করে। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল ভারত।