জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানকে ঘিরে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার রাতে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে মুখোমুখি অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। তারা বাংলাদেশ স্ট্রিটে (৭৩ স্ট্রিট) তুমুল হট্টগোল করে। একে অপরকে পানি ছুঁড়ে মারে। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ-অতিষ্ঠ এলাকাবাসী বিভিন্ন ভবন থেকে পানি ও অন্যান্য কঠিন বস্তু ছুঁড়ে মারে।
গভীর রাত পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে বাংলাদেশ স্ট্রিটে। পুলিশের হস্তক্ষেপে কোনো প্রকার সংঘর্ষ ছাড়াই মধ্যরাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীরা এলাকা ছেড়ে যায়। তবে দীর্ঘসময় হট্টগোলের কারণে এই এলাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অবরূদ্ধ হয়ে পড়ে। তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
৭৩ স্ট্রিটের ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর এক প্রকার আয়োজন করে মুখোমুখি অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর রোববার জেএফকে বিমানবন্দরে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ শেষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা রোববার রাত ১০টার পরে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটে সমবেত হয়। দুই দলের নেতা-কর্মীরা প্রায় দেড়ঘণ্টা মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় সেখানে দেখা দেয় চরম উত্তেজনা। পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে বড় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে গভীর রাতে এলাকার পরিবেশ উত্তপ্ত করে একটি বহুতল ভবন থেকে নেতা-কর্মীদের গায়ে পানি ও শক্ত বস্তু ছুড়ে মারে। এতে কেউ আহত হয়নি। তবে রাস্তায় পার্ক করা একটি গাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের। কিন্তু দুই দলের কিছু নেতা-কর্মী বিশৃঙ্খলায় মেতে ওঠে। একে অপরের সঙ্গে বাদানুবাদের চেষ্টা করে। তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ‘গায়ের জোরে’ আড্ডা দেয়। রেস্টুরেন্ট মালিকরা তাদের কিছু বলতে সাহস পায় না।
জানা গেছে, জ্যাকসন হাইটসে সভা-সমাবেশ করে দুই দলের নেতা-কর্মীরা স্ব স্ব দলের কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে শুধু পদ-পদবীর লোভে। মারামারি হলে বা সেখানে মার খেলে আলোচনায় থাকার জন্যই একশ্রেণির কর্মী হট্টগোলে লিপ্ত হয়।
জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা জানান, গভীর রাত পর্যন্ত সভা-সমাবেশের কারণে এলাকার লোকজন খুবই বিরক্ত। যারা বাংলাদেশি তারা বুঝতে পারেন যে কী কারণে বাইরে সমাবেশ হচ্ছে। কিন্তু যারা অন্য ভাষাভাষি মানুষ, তারা শুধু জানেন বাংলাদেশিরা বাইরে হট্টগোল করছে। কী জন্য তারা এটা করছে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। এতে বাংলাদেশেরই বদনাম হয়। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।
বাসিন্দারা আরো জানান, এ ঘটনায় পুলিশ ডাকলেও তারা নীরবেই দাঁড়িয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, যতক্ষণ মারামারি না করবে ততক্ষণ তারা কাউকে কিছু বলতে পারে না।