Thikana News
২৩ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

হারদিপ সিং হত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান ভারতের

হারদিপ সিং হত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান ভারতের
শিখ নেতা হারদিপ সিং নিজ্জার হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। মঙ্গলবার তার এই দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। এমনকি এই অভিযোগটি ‘অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যমূলক’ বলেও মন্তব্য করেছে দিল্লি।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার অটোয়ার হাউস অব কমন্সে বলেছিলেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জুন মাসে কানাডার মাটিতে হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টদের ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কানাডায় সহিংসতায় জড়িত থাকার ট্রুডোর অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান’ করেছেন।

ঘটনার পর একে অপরের দেশ থেকে কূটনীতিকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শুরুতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি তার দেশ থেকে ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে চলে যেতে বলার পর কানাডিয়ান কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, ‘এই সিদ্ধান্তটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কানাডিয়ান কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ এবং ভারত বিরোধী কার্যকলাপে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে ভারত সরকারের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।’

এই বিরোধটি ভারত এবং কানাডার মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলমান ফাটলকে আরও গভীর করেছে। জি৭ সদস্য ভারতকে অন্যান্য পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো সক্রিয়ভাবে চীনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো ভূ-রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে। এমন সময় কানাডার সঙ্গে এই ধরণের বিরোধকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

শিখদের জন্য স্বাধীন খালিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন নিজ্জার। তিনি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

কানাডায় শিখ আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে দুই সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের বিবৃতি অনুসারে, নয়াদিল্লিতে সাম্প্রতিক জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে মোদি ট্রুডোর কাছে দৃঢ় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তারা (শিখরা) বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রচার করছে এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে, কূটনৈতিক চত্বরের ক্ষতি করছে এবং কানাডায় ভারতীয় সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয়কে হুমকি দিচ্ছে।’

এদিকে, ট্রুডো সোমবার হাউস অব কমন্সে বলেছেন, তিনি জি২০-তে মোদির সঙ্গে ‘ব্যক্তিগতভাবে এবং সরাসরি’ নিজ্জারের শুটিংয়ের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। ট্রুডো বলেছেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের যেকোন সম্পৃক্ততা আমাদের সার্বভৌমত্বের একটি অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’

র‌্যান্ড কর্পোরেশনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যানের মতে, ‘যদি এই পরিস্থিতি অটোয়ার পক্ষে থাকে তাহলে নয়া দিল্লি অস্ত্রের মুখে পড়বে এবং আবারও ওয়াশিংটনের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যদি পরিস্থিতি নয়া দিল্লির পক্ষে থাকে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার ন্যাটো মিত্রের বিরুদ্ধে যেতে হবে।’

মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডাকে তাদের মাটি থেকে পরিচালিত সমস্ত ভারত-বিরোধী উপাদানের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান পুনরুক্ত করেছে।

হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর উল্লেখ করা অভিযোগের বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা আমাদের কানাডিয়ান অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। কানাডার তদন্ত এগিয়ে যাওয়া এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

র‌্যান্ড কর্পোরেশনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান এক্স-এ লিখেছেন ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ভারত-কানাডার খবরের এই সর্বশেষ ঘটনার সঙ্গে নো-উইন পরিস্থিতে রয়েছেন। যদি এই পরিস্থিতি অটোয়ার পক্ষে থাকে তাহলে নয়া দিল্লি অস্ত্রের মুখে পড়বে এবং আবারও ওয়াশিংটনের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যদি পরিস্থিতি নয়া দিল্লির পক্ষে থাকে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার ন্যাটো মিত্রের বিরুদ্ধে যেতে হবে।’

ট্রুডোর বিস্ফোরক বক্তব্য ভারত-কানাডা বাণিজ্য সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। ইতোমধ্যে, উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

ভারত-কানাডা পণ্যের বাণিজ্য ২০২২ সালে প্রায় ৮.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের থেকে ২৫ শতাংশ বেশি৷ কিন্তু সরকারি সূত্রগুলো গত সপ্তাহে বলেছে, কানাডায় ‘নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক অগ্রগতি’ ছিল যা ভারত অটোয়ার সঙ্গে উত্থাপন করেছিল।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স