দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) ৩৭তম সম্মেলন হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে নামে-বেনামে দুটি, কানাডার টরন্টোতে বিবদমান দুই গ্রুপের দুটি এবং আরেক শহর মন্ট্রিয়ালে বিভক্ত একটি গ্রুপের পৃথক সম্মেলন হয়েছে। ৩৭তম ফোবানা ৩৭ টুকরো না হলেও যেভাবে বিভক্তি বাড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে একসময়ের ‘ঐক্যের ফোবানা’ সম্মেলনকে ঘিরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিভক্তির রেশ ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত।
গেল লেবার ডে উইকেন্ডে (১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ৫টি ফোবানা সম্মেলন হয়েছে। বিভক্ত অংশগুলো ঐক্য প্রক্রিয়ায় না গিয়ে বরং বিভক্ত রেখাকে টেনে নিয়ে গেছেন। ফলে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ফোবানা সম্মেলন হবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান ও টেক্সাসে।
প্রবাসে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রসারে প্রায় চার দশক আগে গঠিত ঐক্যবদ্ধ ফোবানা নেতৃত্বের কোন্দলে এখন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন দুই ভাগে বিভক্ত থাকলেও ফোবানা এখন ৫-৬ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সদ্য অনুষ্ঠিত ফোবানা থেকে নতুন কোনো ফোবানার জন্মের খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে পরে যে তা ভাঙবে না, এ কথা এখন হলফ করে কেউ বলতে পারবেন না। কিন্তু শুধুই কী নেতৃত্বের বিরোধে ফোবানা ভাঙছে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে, সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। নেতৃত্বের বিরোধ হলে কখনো কখনো তা মিটে যায়। কিন্তু ফোবানার বিরোধ যেন কোনোভাবেই মেটানো যাচ্ছে না। কী কারণ থাকতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অসমর্থিত সূত্র থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। এরমধ্যে অন্যতম কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে দুটি। একটি ইগোইস্টিক প্রবলেম, অন্যটি আর্থিক। যাদের অর্থবিত্ত আছে, যারা নাম কামাতে ফোবানার নেতৃত্বের বিরোধের আগুনে ঘি ঢালেন। বাগিয়ে নেন নেতৃত্ব। আবার অনেকে আছেন, যারা আর্থিক সুবিধাদি নিতে ফোবানার নেতৃত্ব পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। একসময় যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য ফোবানার একটি আমন্ত্রণপত্রই যথেষ্ট ছিল। এই আমন্ত্রণপত্র পেতে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হতো। আর এসব কারণেই গত ৩৭ বছরে ফোবানা ভেঙেছে বহুবার। কিন্তু বিভক্ত ফোবানা কখনো জোড়া লাগেনি, বরং যারা জোড়া লাগাতে গেছেন, তাদের ভুলেও ফোবানা ভেঙে আরো টুকরো টুকরো হয়েছে।
গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বিভক্তির ফোবানা সম্মেলনের কোথাও ঐক্য প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মুখে কোথাও কোথাও ঐক্যের আহ্বান জানানো হলেও কর্মকাণ্ডে ছিল দারুণ বিরোধিতা। ছিল একে অন্যকে নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনা। এসব সম্মেলনে ঘোষিত হয়েছে নতুন নতুন কমিটি ও নতুন নতুন ভেন্যু।
কানাডার টরন্টোর ড্যানফোর্থের খোলা প্রান্তরে নিউইয়র্কে মূলধারার রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস আহমেদের নেতৃত্বাধীন ফোবানা সম্মেলন শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে পরবর্তী সম্মেলন, অর্থাৎ তাদের ৩৮তম সম্মেলন হবে নিউইয়র্কে।
টরন্টোর শেরাটন হোটেলে নিউইয়র্কের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজের নেতৃত্বাধীন ফোবানা সম্মেলন শেষে পরবর্তী ৩৮তম সম্মেলন ম্যারিল্যান্ডে হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
কানাডার মন্ট্রিয়ালে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে ঘোষণা এসেছে পরবর্তী সম্মেলন হবে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডালাসে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে আয়োজকরা ঘোষণা দিয়েছেন তাদের ৩৮তম সম্মেলন হবে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে।
ডালাসে ফোবানার আদলে অনুষ্ঠিত এনএবিসি সম্মেলনের পরবর্তী সম্মেলনের স্থান অপরিবর্তিত থাকবে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, তাদের পরবর্তী সম্মেলন ক্যানসাসে হওয়ার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু সর্বস্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটা ডালাসেই হবে।