কুমিল্লায় আকবর হোসেন বাবুল (৫২) নামে এক আমেরিকা প্রবাসীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ ৬ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক নাসরিন জাহান এ রায় ঘোষণা করেন। নিহত প্রবাসী আকবর হোসেন বাবুল নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার উলুপাড়া গ্রামের আলী আহমেদ পাটোয়ারীর ছেলে। দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন হলেন- নিহতের ছোট ভাই বেলালের স্ত্রী লিপি আক্তার কাজল, একই গ্রামের কামাল হোসেন, তাজুল ইসলাম প্রকাশ সজিব, রহমত উল্লাহ প্রকাশ রনি ও মো. রুবেল।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট সকালে জেলার লাকসামের মুদাফ্ফরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশের জলাশয়ে চটের বস্তাভর্তি এক ব্যক্তির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় লাকসাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মিল্টন রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত বাবুলের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লিপি আক্তার কাজল, একই গ্রামের কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। এর পরদিন তাজুল ইসলাম প্রকাশ সজিব ও ২৪ সেপ্টেম্বর রহমত উল্লাহ প্রকাশ রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যার বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২০১৮ সালের ৪ জুলাই লাকসাম থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ ওই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বর্তমানে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় নোয়াখালীতে। কিন্তু মরদেহ ফেলা হয় লাকসামে। তাই শুরুতে মামলার রহস্য নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করা হয়। নিহতের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াছমিন বলেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, স্বামীর শেষ বিদায়ে তার বিকৃত ও প্রায় গলিত মরদেহ আমি ও আমার তিন সন্তান দেখতে পারিনি। অবিলম্বে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে পাঁচজনের ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট জাহিদ হোসেন বলেন, পুলিশের চার্জশিট ও ২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।
তিনি বলেন, রায়ের সময় তিন আসামি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মামলার প্রধান আসামি লিপি আক্তার কাজল ও তাজুল ইসলাম প্রকাশ সজিব পলাতক রয়েছেন। এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান অ্যাডভোকেট জাহিদ হোসেন।
ঠিকানা/এম