দীপ্তি শর্মার করা লো ফুলটস এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারলেন ডি ক্লার্ক। শটে অতটা জোর ছিল না। পেছন দিক থেকে দৌড়ে গিয়ে ক্যাচটি লুফে নিতে অসুবিধা হয়নি হারমানপ্রীত কৌরের। ভারতজুড়ে এর পর থেকে বইতে শুরু করল উৎসবের ঢেউ। নামের পাশে জুড়ে গেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তকমা। রোববার (২ নভেম্বর) দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁদিয়ে প্রথমবারের মতো মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপার স্বাদ নিল তারা।
গোটা ভারতকে নীরবতার সমুদ্রে ভাসানোর জন্য কী আপ্রাণ চেষ্টাই না করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা ভলভার্ট। প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও এখন তার দখলে। ওই শিরোপার সামনে সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে যায়। বরং তা তুচ্ছ করে দিয়েছেন দীপ্তি শর্মা। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে পুরো ভারতের দীপ্তি হয়ে উঠলেন তিনি।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে এর আগে ১৬৭ রানের বেশি লক্ষ্য পাড়ি দিতে পারেনি কোনো দল। নাভি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ২৯৯ রানের। চ্যালেঞ্জ ছিল, তেমনি ভলভার্ট যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন আশাও ছিল। উদ্বোধনী জুটিতে তাজমিন ব্রিটসের সঙ্গে গড়েন ৫১ রান। তৃতীয় উইকেটে সুন লিউসকে নিয়ে ৫২, এরপর ষষ্ঠ উইকেটে আনেরি ডেরেকসনের সঙ্গে ৬১ রান। তিনটি পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটির পরও ভলভার্ট তার কথা রাখতে পারেননি। ৯৮ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১০১ রানে তিনি আউট হওয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার হার ছিল অবশ্যম্ভাবী। ২৭ বল আগেই তারা গুটিয়ে যায় ২৪৬ রানে। ৫২ রানে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এর পেছনে কৃতিত্বটা দীপ্তি ও শেফালি ভার্মার। ফাইনালের মতো মঞ্চে ৫ উইকেট পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ৩৯ রানের বিনিময় দীপ্তি সেটাই করে দেখিয়েছেন। শেফালি নেন ২ উইকেট। অথচ টুর্নামেন্টে প্রথমে দলেই ছিলেন না তিনি। প্রতীকা রাওয়ালের চোট সুযোগ এনে দেয় তাকে। তা কীভাবে কাজে লাগাতে হয় দেখিয়েছেন ফাইনাল সেরা হয়ে।
টস হেরে আগে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান করা ভারতের ব্যাটিংয়ের গল্পও শেফালি-দীপ্তিকে ঘিরে। শেফালি ১০৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন স্মৃতি মান্ধানার (৪৫) সঙ্গে। এরপর তিনে নামা জেমিমা রদ্রিগেজের সঙ্গে যোগ করেন ৬২ বলে ৬২ রান। এই জুটি অবশ্য অনেক আগেই ভাঙতে পারত। ২১তম ওভারে তার সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন অ্যানেকে বশ। ৫৬ রানে বেঁচে যাওয়া শেফালি আউট হয়েছেন ৭৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৮৭ রানে। শেষ দিকে ঝড় তোলেন দীপ্তি ও রিচা ঘোষ। ৫৮ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫৮ রানে রান আউটের শিকার হন দীপ্তি। ক্যামিও খেলা রিচা ২৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৩৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন খাকা।
২০০৫ ও ২০১৭ ফাইনাল হারের বেদনা ভুলিয়ে ভারতীয় বোলাররা এরপর লিখলেন বিশ্বজয়ের কাব্য।
ম্যাচের পর আবেগাপ্লুত হয়ে অধিনায়ক হারমনপ্রীত কৌর বলেন, 'এই মুহূর্তের জন্য আমরা বহু বছর অপেক্ষা করেছি। দলের প্রত্যেকেই অবদান রেখেছে। আজ ভারতের মেয়েরা সত্যিই ইতিহাস লিখেছে।’
ঠিকানা/এনআই
                           
                           
                            
                       
    
 
 


 ঠিকানা অনলাইন 
                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
