Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

লাঙ্গল মার্কা দখলের যুদ্ধে দেবর-ভাবি

লাঙ্গল মার্কা দখলের যুদ্ধে দেবর-ভাবি
এরশাদের জাতীয় পার্টিতে দেবর-ভাবির লড়াই মূলত ক্ষমতার, নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব, দখলের।  নির্বাচন সামনে রেখে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ছোট ভাই জি এম কাদেরের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দলীয় প্রতীক লাঙ্গলের মালিকানা নেওয়া এবং নেতৃত্ব নিরঙ্কুশভাবে প্রতিষ্ঠার জন্যই এ লড়াই।
এরশাদের জীবদ্দশায়ও এরশাদ ও স্ত্রী রওশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ দেখা দেয়। রওশন তখন ছিলেন দলের কো-চেয়ারম্যান। তিনি দলের নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব পাওয়ার জন্যই এরশাদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। এখন সেই রওশনই একই উদ্দেশ্যে সক্রিয় হয়েছেন। দলের চেয়ারপারসনের পদ থেকে সরে গিয়ে এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেন, রওশন হবেন সংসদে বিরোধী দলের প্রধান এবং দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। জি এম কাদের হবেন সংসদে বিরোধী দলের উপপ্রধান এবং পার্টির চেয়ারম্যান। দলের নেতৃত্ব কাদের দখল করে নেন। দলীয় ব্যাপারে রওশনকে মাইনাস করেই কাদের সকল সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন। বিরোধ বাধে এখান থেকেই। জি এম কাদের স্ত্রী ও এক আত্মীয়কে প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রওশনের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা ও সমান্তরাল কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেন কাদের। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কাদেরের দুই দফা বৈঠক হয়। পার্টির এমপিদের সংসদ থেকে বিএনপির এমপিদের সঙ্গে একযোগে পদত্যাগ করার পরিকল্পনাও নেন জি এম কাদের। পার্টির কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা ও সংসদ সদস্য বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদকে অবহিত করেন। সরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জি এম কাদেরের বিভিন্নমুখী যোগাযোগ ও তৎপরতা সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত হয়ে আসছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জি এম কাদেরের মোবাইলে দীর্ঘ আলাপ সম্পর্কেও জানতেন প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের সংসদ থেকে পদত্যাগ এবং ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের নিশ্চিত আশ্বাস দেওয়া হয় কাদেরকে। মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ পার্টির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্যও ভবিষতে মন্ত্রিত্ব ও ক্ষমতার লোভে সরকারের বিপক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত রওশন এরশাদের অনুপস্থিতিতে তারা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের বিপক্ষে কঠোর ভূমিকা নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই রওশনকে দেশে আনা হয় এবং জি এম কাদেরের সঙ্গে একটা সম্মানজনক সমঝোতা করা হয়।
বাহ্যিক এই সমঝোতা হলেও জি এম কাদের তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অধীনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে জি এম কাদের সমঝোতায় আসেন মর্মে বিশ্বাসযোগ্য খবর আছে সরকারের কাছে। পার্টির নির্বাচনী প্রতীক তার হাতে রয়েছে বলে কাদেরের রাজনৈতিক শক্তিও বেড়ে যায়। সম্ভাব্য বিপৎসংকুল অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে রওশন এরশাদকে মানসিক-রাজনৈতিক ও অন্যবিধ শক্তি জোগানোর যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়। গত ২০ আগস্ট রওশন এরশাদ গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর রওশন এরশাদ নবশক্তিতে বলীয়ান হয়ে নবোদ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি নিজেকে দলের চেয়ারপারসন ঘোষণা করেন।
এদিকে জাপার মহাসচিব ও আরও কিছু নেতা ক্ষোভ করেন, এভাবে চেয়ারম্যান হওয়ার গণতান্ত্রিক এখতিয়ার কারও নেই। এভাবে চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে নেই। মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ বিপক্ষ নেতারা এর বিরুদ্ধে হলেও জোরালোভাবে কোনো অবস্থান নিচ্ছেন না। গঠনতন্ত্রবিরোধী হওয়ায় রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কোনো নেতাই সেই সাহসও দেখাচ্ছেন না। কারণ প্রধানত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন ও প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে রওশনের প্রতি। দলের এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্যরা ভালোভাবেই জানেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে রওশন এরশাদের সমর্থন লাগবে। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেই কেবল সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব। আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া এককভাবে জাতীয় পার্টির কোনো নেতার পক্ষেই নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয় বলেও তারা মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টিকে ওইসব আসনেই ছাড় দেবেন, রওশন এরশাদ যাদের নাম প্রস্তাব করবেন। রওশনের দেওয়া তালিকার বাইরে কাউকে সরকারি দল সমর্থন দেবে না। এই তালিকায় জি এম কাদের স্থান না-ও পেতে পারেন। দলীয় মনোনয়ন এবং সরকার ও সরকারি দলের সমর্থন পাওয়ার জন্য রওশন এরশাদের সমর্থন জরুরি বলেই তারা মনে করেন। রওশন তাদের নাম তালিকাভুক্ত না-ও করতে পারেন এই শঙ্কায় কাদের পক্ষে অবস্থানকারীদের অনেকেই রওশনের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছেন। কাজী ফিরোজ রশীদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম রওশনের ঘনিষ্ঠ বলে তাদের মাধ্যমে রওশনের পক্ষে অবস্থান ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই।
সাংগঠনিক প্রক্রিয়া বৈধভাবে সম্পন্ন করার জন্য রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির বিশেষ কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই তা করা হবে। বিশেষ কাউন্সিলে রওশন এরশাদকে চেয়ারপারসন করা হবে। মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব পদে না-ও রাখা হতে পারে। আবার শেষ পর্যন্ত তাকে বহাল রাখা হতে পারে। রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করার বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে। জি এম কাদের পৃথক জাতীয় পার্টি গঠনের উদ্যোগ যদি না নেন, তাহলে তাকে নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান করে সমঝোতার পরিকল্পনা রয়েছে।

কমেন্ট বক্স