Thikana News
০১ নভেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫





 

মার্কিন আগ্রাসন ঠেকাতে রাশিয়া–চীন–ইরানের দ্বারে মাদুরো

মার্কিন আগ্রাসন ঠেকাতে রাশিয়া–চীন–ইরানের দ্বারে মাদুরো





 
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে রাশিয়া, চীন ও ইরানের সহায়তা চেয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। এমন তথ্যই জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কয়েকটি নথিতে।

প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
 
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদুরো রাডার ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান মেরামত এবং সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে ওই দেশগুলোর সহায়তা চেয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে এসব অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই চিঠিটি মাদুরোর এক সিনিয়র সহকারী মস্কো সফরের সময় হস্তান্তর করেন।

এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছেও মাদুরো একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র–ভেনেজুয়েলা উত্তেজনার প্রেক্ষিতে “বিস্তৃত সামরিক সহযোগিতা” চেয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদুরো চীনা কোম্পানিগুলোর তৈরি রাডার শনাক্তকরণ ব্যবস্থার উৎপাদন দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই নথিতে আরও বলা হয়েছে, মাদুরো তার চিঠিতে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের “আগ্রাসন” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এটিকে কেবল ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নয়, বরং “চীনের মতো মতাদর্শ রয়েছে এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ” হিসেবে চিত্রিত করেন।

নথিগুলোতে উল্লেখ করা হয়, ভেনেজুয়েলার পরিবহনমন্ত্রী রামন সেলেস্তিনো ভেলাসকেজ সম্প্রতি ইরান থেকে সামরিক সরঞ্জাম ও ড্রোনের একটি চালান এনেছেন এবং শিগগিরই দেশটিতে তিনি সফর করবেন।

এছাড়া এক ইরানি কর্মকর্তাকে তিনি জানান, ভেনেজুয়েলা “প্যাসিভ ডিটেকশন ইকুইপমেন্ট”, “জিপিএস স্ক্র্যাম্বলার” এবং “কমপক্ষে এক হাজার কিলোমিটার পরিসরের ড্রোন” চায়।

মাদুরো ২০১৩ সালে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি তার জন্য ক্ষমতা গ্রহণের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মাদক পাচারবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলা উপকূল থেকে যাত্রা অন্তত এক ডজন নৌযানে হামলা চালিয়েছে এবং এতে অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছে। তবে এই মাদক পাচারের অভিযোগের কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা এবং মাদুরোও অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।

এর আগে অক্টোবরের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক ফোনালাপে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি সামরিক কার্যক্রম নিয়ে মস্কো “গুরুতর উদ্বেগে” রয়েছে।

এরপর গত বুধবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়া ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্বকে “সম্মান করে” এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যেই সমাধান হওয়া উচিত।

বছোড়া অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ভেনেজুয়েলার পরিবহনমন্ত্রী ভেলাসকেজ রাশিয়া সফর করেন এবং সেখানে রুশ পরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। রুশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মাদুরোর চিঠি পুতিনের হাতে তুলে দেন।

চিঠিতে মাদুরো রাশিয়ার সহায়তায় ভেনেজুয়েলার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানান। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে কেনা সুখোই এসইউ-২০এমকে২ যুদ্ধবিমানের পুনর্গঠন, আটটি ইঞ্জিন ও পাঁচটি রাডার মেরামত, ১৪ সেট রুশ ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ এবং “লজিস্টিক সহায়তা” প্রদানের মতো বিষয়ও রয়েছে।

মার্কিন নথি অনুসারে, মাদুরো জোর দিয়ে বলেন, রুশ সুখোই যুদ্ধবিমানগুলো ভেনেজুয়েলার “সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধক শক্তি”। তিনি তিন বছরের জন্য রোস্তেকের মাধ্যমে একটি মধ্যম মেয়াদি অর্থায়ন পরিকল্পনাও প্রস্তাব করেন, যদিও নির্দিষ্ট অর্থের পরিমাণ সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেনেজুয়েলার অস্ত্রভান্ডারের বড় অংশই পুরোনো ও অচল। সাবেক এক ভেনেজুয়েলান সেনা কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সাল নাগাদ রাশিয়ার তৈরি সুখোই বিমানের মধ্যে পাঁচটিরও কম সচল ছিল।

তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের সময় রুশ হেলিকপ্টার ও ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলোর বেশিরভাগই এখন অকার্যকর। তার ভাষায়, “শ্যাভেজ কিনেছিলেন, কিংবা রাশিয়া বিক্রি করেছিল, কিন্তু সেগুলো আসলে ছিল পুরোপুরি স্ক্র্যাপ।”

তবু চলতি মাসে মাদুরো দাবি করেছেন, দেশজুড়ে রাশিয়ার তৈরি ৫ হাজার ইগলা-এস পোর্টেবল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স