Thikana News
৩০ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫


থমকেই গেল পাকিস্তান–আফগানিস্তান শান্তি আলোচনা

থমকেই গেল পাকিস্তান–আফগানিস্তান শান্তি আলোচনা



 
তিন দিনের বৈঠকের পর ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে হওয়া আলোচনা কার্যত ভেস্তে গেছে। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই আলোচনার লক্ষ্য ছিল সীমান্তে সহিংসতা ও সংঘর্ষের অবসান ঘটানো।

দোহায় প্রথম দফার আলোচনার পর গত ১৯ অক্টোবর দুই দেশের মধ্যে এক সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, সেই চুক্তিকে স্থায়ী শান্তিতে রূপ দিতে দুই পক্ষের গভীর অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর আল জাজিরার। 

পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, সোমবারের (২৭ অক্টোবর) বৈঠক প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে চলে। কিন্তু আফগান প্রতিনিধি দল ইসলামাবাদের মূল দাবি — আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি) দমন থেকে সরে আসে। কর্মকর্তাদের দাবি, ‘কাবুলের নির্দেশেই’ আফগান দল বারবার অবস্থান পরিবর্তন করে।

অন্যদিকে কাবুলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয় যে, পাকিস্তানি প্রতিনিধিরা স্পষ্ট যুক্তি না দিয়ে বারবার বৈঠক ত্যাগ করেছেন, ফলে ‘সমন্বয়ের অভাব’ দেখা দেয়।

আফগান দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক উপমন্ত্রী হাজি নাজিব। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কারা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তা প্রকাশ করা হয়নি।

টানাপোড়েনের মূল কারণ : টিটিপি ও সীমান্ত সন্ত্রাস
দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সীমান্ত হামলায় বহু সেনা ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে টিটিপি, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি ও আইএস–খোরাসান (আইএসকেপি)-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে কাবুল। তবে আফগানিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব বলেছেন— ‘সন্ত্রাসবাদের কোনো সার্বজনীন সংজ্ঞা নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রগুলো নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে প্রতিপক্ষকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে।’

‘বন্ধুত্ব’ থেকে শত্রুতা
একসময় আফগান তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পাকিস্তানকে দেখা হতো। ২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনে ইসলামাবাদ প্রকাশ্যে সন্তোষ জানিয়েছিল। কিন্তু টিটিপি ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে।

২০০৭ সালে গঠিত টিটিপি পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চালিয়ে আসছে। সংগঠনটি পাকিস্তানে বন্দি তাদের সদস্যদের মুক্তি ও সীমান্তবর্তী উপজাতীয় অঞ্চলগুলোর পুরনো মর্যাদা ফেরানোর দাবি জানিয়ে আসছে।

পাকিস্তানি বিশ্লেষক ইহসানুল্লাহ টিপু মেহসুদ বলেন, ‘আফগান তালেবান ও টিটিপির সম্পর্ক আদর্শগত, তাই কাবুলের পক্ষে টিটিপিকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন।’

আরেক সাংবাদিক সামি ইউসুফজাই বলেন, ‘আফগান তালেবান অতীতে যেমন আল–কায়েদার পাশে থেকেছে, এবারও তারা তাদের মিত্রদের ছেড়ে যাবে না। এমনকি সামরিক চাপেও তারা পিছু হটে না।’

সম্ভাব্য সামরিক সংঘাত
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ‘ওপেন ওয়ার’ বা উন্মুক্ত যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। বিশ্লেষক বাকির সাজ্জাদ সাঈদ বলেন, ‘এই বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে টিটিপি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালাতে পারে।’

তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, কাতার ও তুরস্ক শেষবারের মতো মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাবে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সংকট প্রশমনে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে
সামরিক শক্তিতে পাকিস্তান এগিয়ে থাকলেও বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ক্ষতির কারণ হতে পারে। ইউসুফজাই বলেন, ‘আফগান তালেবানের পাল্টা হামলাকে আফগান জনগণ শক্ত প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছে, যা তাদের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে।’

ইউসুফজাই সতর্ক করেন, ‘যদি তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনজাদা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান জানান, বহু তরুণ আফগান এতে যোগ দিতে পারে। এতে পাকিস্তানের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে।’

সাজ্জাদের মতে, ‘যে কোনো সংঘাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে টিটিপি, যারা নতুন করে পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্যবস্তু বানাবে।’

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স