Thikana News
২০ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

৭ লাখ বছর পর জেগে উঠছে ইরানের একটি আগ্নেয়গিরি

৭ লাখ বছর পর জেগে উঠছে ইরানের একটি আগ্নেয়গিরি ছবি সংগৃহীত



 
দক্ষিণ ইরানে অবস্থিত একটি আগ্নেয়গিরিকে প্রায় ৭ লাখ ১০ হাজার বছর ধরে বিলুপ্ত বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে আগ্নেয়গিরিটি নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেননা লাখ লাখ বছর পর এটি আবারও জেগে উঠছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

গত ৭ অক্টোবর জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে ১০ মাসে তাফতান আগ্নেয়গিরির চূড়ার কাছাকাছি ভূমির একটি অংশ ৩.৫ ইঞ্চি (৯ সেন্টিমিটার) বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উত্থান এখনো কমেনি, যা আগ্নেয়গিরির পৃষ্ঠের নিচে গ্যাসের চাপ তৈরির ইঙ্গিত দেয়।

স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের (IPNA-CSIC) গবেষণা কেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল প্রোডাক্টস অ্যান্ড অ্যাগ্রোবায়োলজির আগ্নেয়গিরিবিদ এবং গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক পাবলো গঞ্জালেজ বলেছেন, নতুন অনুসন্ধানগুলো আগ্নেয়গিরির নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। কেননা এটি আগে মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়নি।

১১ হাজার ৭০০ বছর আগে শুরু হওয়া হলোকোন যুগে যদি কোনো আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত না করে থাকে, তবে সেটিকে বিলুপ্ত বলে মনে করা হয়।

আগ্নেয়গিরির সাম্প্রতিক কার্যকলাপ বিবেচনা করে পাবলো গঞ্জালেজ বলেন, তাফতান আগ্নেয়গিরিটিকে এখন সঠিকভাবে বলতে গেলে ‘সুপ্ত’ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।

তিনি লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ভবিষ্যতে এটি যেকোনোভাবে মুক্তি পাবে - হয় হিংস্রভাবে অথবা আরও নীরবে।

তার মতে, অগ্ন্যুৎপাত যে খুব তাড়াতাড়ি হবে, এমন আশঙ্কা করার কোনো কারণ নেই। তবে আগ্নেয়গিরিটি আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

তাফতান আগ্নেয়গিরি দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে অবস্থিত ১২ হাজার ৯২৭ ফুট উচ্চতার একটি স্ট্র্যাটোভলকানো। ইউরেশিয়ান মহাদেশের অধীনে আরব মহাসাগরের ভূত্বকের অধঃপতনের ফলে তৈরি পাহাড় এবং আগ্নেয়গিরির মধ্যে এটি অবস্থিত।

বর্তমানে আগ্নেয়গিরিটিতে একটি সক্রিয় হাইড্রোথার্মাল সিস্টেম এবং দুর্গন্ধযুক্ত সালফার-নিঃসরণকারী ভেন্ট রয়েছে, যাকে ফিউমারোল বলা হয়। তবে মানব ইতিহাসে এটির অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায় না।

২০২০ সালে গবেষণার লেখক পাবলো গঞ্জালেজের অধীনে কর্মরত ডক্টরেট ছাত্র মোহাম্মদহোসেইন মোহাম্মদনিয়া প্রথম আগ্নেয়গিরির স্যাটেলাইট চিত্র পরীক্ষা করেন। তখন তিনি এমন কোনো প্রমাণ পাননি, এটিতে খুব বেশি কিছু ঘটছে।

কিন্তু ২০২৩ সালে লোকেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আগ্নেয়গিরি থেকে গ্যাসীয় নির্গমনের খবর দিতে শুরু করে। প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে খাশ শহর থেকে এই গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেত।

মোহাম্মাদ্দিয়া ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ‘সেন্টিনেল-১’ মিশনের স্যাটেলাইট চিত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন। স্যাটেলাইটটি পৃথিবীপৃষ্ঠের সার্বক্ষণিক চিত্র প্রদান করে। স্যাটেলাইট চিত্রে শিখরের কাছে ভূমির সামান্য উচ্চতা দেখা গেছে, যা নিচের চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

মোহাম্মদনিয়া হিসাব করে দেখেছেন, এই উত্থানের কারণ লুকিয়ে আছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬০৮ থেকে ২০৬৭ ফুট নিচে। ঠিক কী ঘটছে তা জানা অসম্ভব, তবে কাছাকাছি ভূমিকম্প বা বৃষ্টিপাতের মতো বাহ্যিক কারণগুলোকে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ বলতে নারাজ গবেষকরা।

মোহাম্মদনিয়া লাইভ সায়েন্সকে জানিয়েছেন, আগ্নেয়গিরির নিচের হাইড্রোথার্মাল প্লাম্বিংয়ের পরিবর্তনের কারণে এই উত্থান ঘটতে পারে, যা গ্যাস জমার ইঙ্গিত দেয়। অথবা আরেকটি বিষয় হতে পারে, আগ্নেয়গিরির নিচে অল্প পরিমাণে ম্যাগমা স্থানান্তরিত হতে পারে, যার ফলে গ্যাসগুলো ওপরের শিলাগুলোতে বুদবুদ হয়ে উঠতে পারে - যা শিলা ছিদ্র ও ফাটলগুলোতে চাপ বৃদ্ধি করে এবং ভূমিকে কিছুটা উঁচু করে তোলে।

গবেষণার লেখক পাবলো গঞ্জালেজের মতে, এই গবেষণার লক্ষ্য মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা নয়। এটি কেবল ইরানের এই অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের কাছে একটি সতর্কবার্তা, যাতে তারা বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথ খুলে দেয়।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স