Thikana News
১৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতীয় গেম ভণ্ডুল ► নেপথ্যে মিউচ্যুয়েল আন্ডারস্ট্যান্ডিং

ডিপস্টেটের আশীর্বাদে বাংলাদেশ

ডিপস্টেটের আশীর্বাদে বাংলাদেশ



 
ক্যান্টনমেন্টে ছোটখাটো ক্যু কয়েকটা হয়ে গেছে, বড়টা হবে সামনে। মার্কিন বিশাল যুদ্ধজাহাজ কুতুবদিয়ায় পজিশন নিয়ে বসে আছে। বাংলাদেশের তিনটি বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া ফাইনাল। ড. ইউনূস এবার আর ফিরে আসছেন না-এ ধরনের নানা     গুজবে গত কয়েক রাত পার করে সকাল শুরু হচ্ছে বাংলাদেশে। বাজেট বিশাল। তিলকে তাল বানিয়ে গুজবের বাজারও বেশ জম্পেশ।
কোনো ঘটনা বা ইস্যুকেই হাতছাড়া করা হচ্ছে না। যা ছাড়া হচ্ছে, তা-ই চলছে। স্ক্রিপ্টসহ এগুলোর ম্যাকিং এবং প্রচারণা উচ্চমার্গের। কোনো কোনোটিতে এআই প্রযুক্তির আচ্ছা রকমের ব্যবহার। ঘটনা সত্যের ধারেকাছেও নয়। বাস্তব ঘটনা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন এখনো সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। একজন অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে পিএলআরে। ১৬ জনের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি সবাই এখন সেনা হেফাজতে। কবীর আহাম্মদ আত্মগোপনে। নানা জনের নানা ন্যারেটিভের মাঝে খাঁটি কথাটি জানিয়ে দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। খুব ট্যালেন্সির সঙ্গে বলেছেন, দোষ শুধু গুম-খুনে জড়িতদের, কোনো বাহিনীর নয়। কয়েক শব্দে খাস তথ্য। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, সরকার আর কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দেবে না।
অন্যদিকে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার আগেই অভিযুক্তদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মানে সেনাবাহিনী বিচারে সহযোগিতা করছে। পুরো সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। ফল আসার লক্ষণ নেই। সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে-সেনানিবাসের ইট খুলে নেওয়ার ঘোষণা, সেনানিবাস উড়িয়ে দেওয়ার হুংকার দেওয়া হয়েছে। পঁচাত্তরের আগস্টের পরও সেনাবাহিনীর ভেতর বিশৃঙ্খলার পরিণতি ভালো হয়নি। সেই ধরনের পরিস্থিতি তৈরিতে দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন থাকলেও কাজে দিচ্ছে না। এর পরও বাকিটা যার যার মতো ন্যারেট করার বিষয়।
ভূ-রাজনীতি ও বিশ্ব বাস্তবতায় ধীরে ধীরে বাংলাদেশেও ডিপস্টেট গড়ে ওঠার বিষয়ে এখন আর কারও সন্দেহ নেই। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে এই ডিপস্টেটের ভূমিকা ছিল দুর্দান্ত। এর মাঝেও শুভ লক্ষণ দেখছেন কেউ কেউ। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক আমলা, নন-পলিটিক্যাল ন্যাশনালিটি, নন-পলিটিক্যাল ইসলামিস্ট, নন-পলিটিক্যাল প্রবাসী বাংলাদেশি, নন-পলিটিক্যাল জার্নালিস্ট, সমাজবাদী, আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিবর্গ, ফিরে না-আসা ব্যক্তিবর্গের পরিবারবর্গ ও রাষ্ট্রচিন্তকদের একটি অঘোষিত ধারা গড়ে উঠেছে। এ ধারার সবার বক্তব্যে একই সুর।
জুলাই বিপ্লবের ছাত্র সমন্বয়ক, সাধারণ ছাত্রসমাজ, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি দল ও মাদ্রাসার ছাত্ররা মাঠে ছিল এ ডিপস্টেটের দূরবর্তী টোকায়। ওই শক্তির কারণেই সেনাবাহিনী বন্দুক ঘুরিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনাও পালিয়েছেন একই ছকে। কেউ কারোটা বুঝে উঠতে পারেননি। ভেতরে ভেতরে ডিপস্টেট জুলাই আন্দোলনকে আন্তর্জাতিকীকরণ করে ছেড়েছে। পেরেছে ডমেস্টিক প্রেশার তৈরি করতেও। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর ২৫ জন কর্মকর্তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার নেপথ্যেও ছিল ডিপস্টেটের কাজ। এই অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যুর আগে কোনো পলিটিক্যাল দল জানত না, কিংবা সেই অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য কোনো রাজনৈতিক দল জোরালো দাবি তুলেছে, এ রকমও নয়। সেখানে কাজ করেছে একটি মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং। প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্যারালাল এ হিডেন ডিপস্টেট সামনে আরও এগোনোর পথপরিক্রমা তৈরি হচ্ছে।
এখানে ভারতের গেম এবারও চরম মার খেয়েছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রচুর লোক ও তাদের বিচরণ থাকলেও সুবিধা করতে পারছে না। মার খেয়েই চলছে। তা কিছুটা দেশ স্বাধীনের পর যুবনেতাদের বিভক্ত করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিয়ে, রোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টির চেষ্টার মতো। ভারতের ওই চালে পড়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিপরীতে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে এনেছিলেন। ভারতের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল আওয়ামী লীগকে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ‘আমি তুমি ডামি’ ফর্মুলা দিয়ে দলের মধ্যে চরম বিভক্তি এনে আওয়ামী লীগের ধ্বংস অনিবার্য করেছে। যেমনভাবে ১৯৭১ সালে গঠিত মুজিববাহিনীর যুবনেতাদের বিভক্ত করে শেখ মুজিবের পতন নিশ্চিত করেছিল। এবারের নতুন প্রজন্ম ভারতকে ভালোভাবে বুঝেছে। নিজেদের মধ্যে কলহ থাকলেও আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, আবার ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের ঘোষণাও জারি রেখেছে। সরকারের অবস্থানও অন্তত ভারতের ব্যাপারে স্পষ্ট।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘ভারতীয়রা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কিছু বিষয় পছন্দ করেনি। এর ফলে সম্পর্কের মধ্যে টান পড়েছে।’ পাশাপাশি তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন। ইউনূসের অভিযোগ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তরুণদের মৃত্যুর জন্য দায়ী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। এ বিষয়টি সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে ছড়ানো মিথ্যা খবরও পরিস্থিতি খারাপ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তিনি ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ইসলামি আন্দোলন নিয়ে অনেক ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে, যেখানে তালেবানের প্রশিক্ষণের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ দেখানো হয়েছে। এমনকি তাকেও তালেবান বলে অপপ্রচার করা হয়েছে। তিনি হেসে বলেন, ‘আমার দাড়ি নেই, বাড়িতে রেখে এসেছি।’ এসবের মধ্য দিয়ে ভারতের ব্যাপারে সরকার, ছাত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ মহলের মেসেজ ভারতের কাছেও পরিষ্কার। তাদের দেওয়া টোপ, ছক, গুজবের হাট শেষ পর্যন্ত ভেঙে যাওয়ার ফের এখানেই। 
 

কমেন্ট বক্স