আজকের ব্যস্ত ও চাপপূর্ণ জীবনে অনেক দম্পতি সন্তান ধারণে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। কেউ দেরিতে গর্ভধারণ করছেন, কেউবা দীর্ঘ সময় চেষ্টার পরও ব্যর্থ হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু ভাগ্যের বিষয় নয় খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন ও মানসিক চাপও এর বড় কারণ।
তবে আশার কথা, প্রকৃতিতেই আছে এমন অনেক খাবার যা নারী ও পুরুষ উভয়েরই উর্বরতা বা ফার্টিলিটি বাড়াতে সহায়তা করে। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে, পাশাপাশি ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর গুণগত মানও উন্নত করে।
ফার্টিলিটি বাড়ায় এমন ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান
. ভিটামিন ডি: যৌন হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
. উৎস: ডিম, চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, টুনা), দুধজাত খাবার, কড লিভার তেল, রোদ।
. ভিটামিন ই: শুক্রাণুর গুণমান ও গতিশীলতা উন্নত করে, ডিএনএ রক্ষা করে।
. উৎস: সূর্যমুখী বীজ, বাদাম, জলপাই তেল, পালং শাক, পেঁপে।
. ভিটামিন সি: হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে, ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর স্বাস্থ্য উন্নত করে, গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়।
. উৎস: আমলকী, পেয়ারা, লেবু জাতীয় ফল, ব্রোকলি, টমেটো।
. লাইপোইক অ্যাসিড: ডিম্বাশয় ও শুক্রাণু রক্ষা করে।
. উৎস: আলু, পালং শাক, লাল মাংস।
. ভিটামিন বি৬: হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে।
. উৎস: কলা, টুনা, লিভার, স্যামন, পালং শাক, ব্রোকলি।
. ভিটামিন বি১২: জরায়ুর আস্তরণ মজবুত করে, শুক্রাণু উন্নত করে, গর্ভপাতের সম্ভাবনা হ্রাস করে।
. উৎস: ঝিনুক, লিভার, মাছ, ডিম, পনির।
. ফলিক অ্যাসিড: ভ্রূণের সঠিক গঠন নিশ্চিত করে ও জন্মগত ত্রুটি রোধ করে।
. উৎস: শাকসবজি, ডাল, তিল, তিসি ও সূর্যমুখী বীজ।
. সেলেনিয়াম: ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে।
. উৎস: মাছ, চিংড়ি, ব্রাজিল নাট, মাশরুম, টার্কি।
. জিঙ্ক: হরমোন ভারসাম্য বজায় রেখে প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়।
. উৎস: কলিজা, ঝিনুক, কুমড়োর বীজ, তিল, দই।
. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: জরায়ুর রক্তপ্রবাহ বাড়ায় ও হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
. উৎস: চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, সার্ডিন)।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবার
. সঠিক খাদ্য পরিকল্পনায় রাখতে পারেন—
. প্রোটিন: ডিম, মাছ, ডাল, মাংস
. কার্বোহাইড্রেট: ব্রাউন রাইস, ওটস, আলু
. ফাইবার: শাকসবজি, ফল, বাদাম
. হেলদি ফ্যাট: অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, বাদামের তেল
কিছু জরুরি পরামর্শ
. খাদ্য শুধু শরীর নয়, মন ও হরমোনের ভারসাম্যও নিয়ন্ত্রণ করে।
. দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও ফল না এলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
. ধূমপান, অতিরিক্ত চিনি ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।
সন্তান ধারণ কোনো একদিনের বিষয় নয় এটি একটি ধীর ও সচেতন প্রস্তুতির অংশ। আর সেই প্রস্তুতির ভিত্তি তৈরি হয় সঠিক খাবার থেকেই। প্রতিদিনের ছোট পরিবর্তন একদিন আপনাকে বড় সুখবর দিতে পারে।
ঠিকানা/এএস