ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও এর সহযোগী দলগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— গাজার শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ করা ‘শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের নিজেদের বিষয়’।
শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) হামাসের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার প্রশাসনিক কাঠামো কেমন হবে, সেটা নির্ধারণের অধিকার ফিলিস্তিনিদেরই। তারা নিজেদের সম্মিলিত প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেবে।
সংগঠন দুটি গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে বলেও দাবি করেছে। তারা জানিয়েছে, শত্রু রাষ্ট্রগুলোর যেকোনো ‘বিদেশি শাসনের’ বিরুদ্ধেই ফিলিস্তিনিরা ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান নেবে।
যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নির্ধারণে একটি ‘জরুরি জাতীয় বৈঠক’ আহ্বানের প্রস্তুতির কথাও জানায় সংগঠন দুটি। তাদের ভাষায়, এই বৈঠক ফিলিস্তিনিদের অবস্থানকে ঐক্যবদ্ধ করবে এবং অংশীদারত্ব, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে জাতীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবে। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী দল ফাতাহ এই বৈঠকে যোগ দেবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার শাসন তত্ত্বাবধানের জন্য ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠিত হবে, যা ‘অন্তর্বর্তী টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষ’-এর কাজ দেখবে। ট্রাম্প নিজেই বোর্ড অব পিসের চেয়ারম্যান থাকবেন, যেখানে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরও কয়েকজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব থাকবেন।
যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যকর হলেও গাজার ভবিষ্যৎ শাসনভার কার হাতে যাবে, তা এখনও অনির্ধারিত। আল–জাজিরার হাতে আসা চুক্তির একটি অনুলিপি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে প্রকাশ্য উদ্যাপন না করে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।
চুক্তির শর্তে আরও বলা হয়েছে, প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, সুপেয় পানির সরবরাহ পুনরায় চালু করতে হবে এবং গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজা নগরীর রাস্তা থেকে ৬৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু আহত ও নিখোঁজ মানুষ রয়েছে, যাদের উদ্ধার কাজ এখনও শেষ হয়নি। ইসরায়েলি বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পর হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষ ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভাঙা ঘরে ফেরার যাত্রা শুরু করেছে।
আল–জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানান, কয়েক সপ্তাহের ব্যাপক বোমাবর্ষণে গাজা নগরীর প্রায় পুরো অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন উপকূলীয় সড়কের প্রবেশমুখে পৌঁছালাম, তখন জায়গাটা চিনতে পারছিলাম না— পুরোটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পরপরই পুনর্গঠন পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য সরঞ্জাম পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী, বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফকে পাশ কাটিয়ে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকবে। তবুও জিএইচএফ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও তারা গাজায় কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
ঠিকানা/এসআর