নির্বাচন হবে তো?- এরকম একটি অনিশ্চয়তার প্রশ্ন সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিসংঘ থেকে শুরু করে যেখানেই কথা বলছেন, তিনি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হচ্ছে এ কথাই বলে যাচ্ছেন। তার মুখের কথায় সবাই আস্থা রাখছেন। আন্তর্জাতিক মহল থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সুশীল ভদ্র ও শিক্ষিত সমাজের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা আস্থা রাখছেন। তারা বলছেন, ড. ইউনূস আসলেই নির্বাচন দিতে চান। নির্বাচন দিয়ে তিনি বিশ্বমণ্ডলে তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বে তার অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব তাকে এখন চাইছে।
স্বদেশের ক্রান্তিকালে তিনি দেশবাসীর ডাকে সাড়া দিয়ে এক বছর দেশের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দেশের যে কঠিন সময় ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর সৃষ্টি হয়েছিল, তিনি দায়িত্ব নিয়ে সেই জটিল সময় পার করে দিয়েছেন অনেক। এতে তিনি ব্যক্তিগত এবং বিশ্বপরিমণ্ডলে নিজের দায়িত্ব পালনে সময় দিতে পারেননি। অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ। এতদিন তিনি ছিলেন দেশের, এবার তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের। আসলে অনেক মানুষের কর্মক্ষেত্র সব জায়গায় নয়। কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন স্বল্প পরিসরে কাজ করতে। কারো আনন্দ বৃহত্তর পরিবেশ। একথাও ঠিক যে, যিনি ‘রাঁধেন তিনি চুলও বাঁধেন’। ড. ইউনূস এতটা বয়সেও যে কঠোর পরিশ্রম করার দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন, তিনি আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের সেবা দিতে পারবেন। আমাদের বিশ্বাস, তিনি তা দেবেনও। কেননা সবার আগে তো দেশপ্রেম। দেশের স্বার্থ তাই তিনি আন্তরিকভাবেই দেখবেন। এ বিশ্বাস সবার।
ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতির প্রতি নির্বাচনের প্রধান যারা স্টোক হোল্ডার, সেই রাজনৈতিক দলগুলোও গভীর আস্থা রাখছে। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ইস্যুতে কিছু মতোপার্থক্য থাকলেও প্রধান প্রধান দলগুলো এ মুহূর্তে মনে করছেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রয়োজন এ কারণে যে, নির্বাচন না হলে সংকট আরও জটিল হবে। তা কারও জন্যই ভালো হবে না দেশের জন্যও না। তাই তারাও নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জোর কদমে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া নতুন রাজনৈতিক শক্তি যে দল এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টিও প্রস্তুতি নিতে পিছিয়ে থাকছেন না। তারাও নিজস্ব শক্তিতে বা কাছাকাছি আদর্শের দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ড. ইউনূসে নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পূরণের আন্তরিকতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে জাতিসংঘের ৮৩তম সাধারণ অধিবেশনে দেশে তিনটি দল বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির ছয়জন প্রতিনিধিকে নিয়ে অংশগ্রহণ, অনেকেই নির্বাচন আয়োজনে তার গভীর আন্তরিকতার প্রকাশ বলে বিশ্বাস করছে। তিনি নির্বাচনে বিজয়ী দলের হাতে শাসন ভার বুঝিয়ে দিয়ে মুক্তি পেতে চান।
তবে সাধারণ মানুষ অসাধারণ মানুষদের মতো চিন্তা করতে জানে না। কোনো বিষয় যুক্তি দিয়ে বুঝতেও পারে না।
৫৪ বছরের বঞ্চনা হতাশা আর শাসককুলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বেদনা নিয়ে মানুষকে সরলভাবে বিশ্বাস করার কথা তারা প্রায় ভুলেই গেছে। সিঁদুরে মেঘ দেখে যেমন ঘর পোড়া গরু ভয় পায়, তেমনি বাংলাদেশের বঞ্চিত মানুষেরাও শাসককুলের কথায় আস্থা রাখতে ভয় পায়। প্রথমেই তাদের মনে প্রশ্ন দেখা দেয় সত্যি বলছেন তো শাসককুল? আসলেই নির্বাচন হবে তো? নাকি কোনো গোলমালের স্রোতে সব প্রতিশ্রুতি ভেসে যাবে? সাধারণ মানুষের মনের এই প্রশ্ন এবার অন্তত অমূলক হোক। নির্বাচন সময়মতো এবং অবাধ, নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হোক এবং দেশ ও বিদেশের সবার অমূলক সংশয়কে মিথ্যা প্রমাণিত করুন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে প্রশ্নহীন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে।