সাবধান! জ্যামাইকায় জেএমসির কাছাকাছি ও আশপাশের এলাকা থেকে মানুষের মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। সহযোগিতা চাওয়ার নাম করে প্রতারকেরা পথচারীকে আটকে দামি গহনা, অর্থ, ওয়ালেট, ভ্যানিটি ব্যাগ, ঘড়ি, ব্রেসলেটসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। চক্রটি মানুষের মোবাইল ফোন নেয় না। তারা জানে, মোবাইল ফোন নিলে পুলিশ লোকেশন শনাক্ত করে তাদের ধরে ফেলবে। যেসব জিনিসের বাজারে নগদমূল্য রয়েছে, সেগুলোই তারা নেয়।
জানা গেছে, শিকার ধরার উদ্দেশ্যে প্রথমে গাড়িতে বসে থাকে চক্রের তিন-চারজন সদস্য। তাদের মধ্যে দু-একজন নারীও থাকে। কোনো কোনো গাড়িতে আবার নারী, পুরুষ এবং বাচ্চাও থাকে। তারা এমন ভাব করে, দেখলে মনে হবে সবাই একই পরিবারের সদস্য। এলাকায় নতুন এসেছে। অনেকক্ষণ ধরে তারা ওত পেতে থাকে। তারা পথচারীদের পর্যবেক্ষণ করে। কার হাতে কী আছে অথবা পোশাক-আশাক দেখলেই তারা বুঝতে পারে কাকে ডাক দিলে মূল্যবান জিনিসপত্র পাওয়া যাবে। এরপর তারা কাক্সিক্ষত পথচারীকে ডেকে তার সাহায্য চায়। তাকে বলে, তারা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা মসজিদ খুঁজছে। জানতে চায় কোন দিকে ওই মসজিদে যেতে হবে। অনেকেই তাদের বিশ্বাস করে ওই গাড়ির কাছে যান। তখন চক্রের সদস্যরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠে। তাদেরকে মসজিদের রাস্তা বলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দেয়। কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য ওই ব্যক্তির কাছে থাকা ঘড়ি, গহনা অথবা ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া। এ জন্য তারা নানাভাবে তাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। যাদের কাছে মূল্যবান ঘড়ি, চেইন, ব্রেসলেট কিংবা অন্য কোনো গহনা থাকে; তাদের সঙ্গে বেশি সময় ধরে কথা বলে। না থাকলে অল্প কথা বলেই বলে ঠিক আছে। যাদের গায়ে গহনা থাকে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বলে, আপনার গহনাটি খুব সুন্দর। কোথা থেকে কিনেছেন। কেমন দাম। এ রকম নানা প্রশংসা করতে থাকে। ফলে ওই ব্যক্তি প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যান। সুযোগ বুঝে তারা সাহায্য করতে আসা ব্যক্তিকে স্প্রে দিয়ে অবচেতন করে ফেলে অথবা হিপনোটাইস করে। কেউ কেউ জ্ঞান হারান, আবার কেউ জ্ঞান না হারালেও তাদের কথামতো কাজ করেন। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় নিজেদের গা থেকে সব গহনা খুলে দেন। আবার কারও কারও গা থেকে চক্রটি গহনা খুলে নেয়। একপর্যায়ে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে তারা নিরাপদ স্থানে চলে যায়। ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তি কিছুই টের পান না। পরে যখন টের পান, ততক্ষণে ওই ব্যক্তির আর কিছুই করার থাকে না।
গত ২৫ আগস্ট জুমার নামাজের আগে ১৬৮ প্লেসে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। মিঠু জাইয়ান মিজান নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আজ (২৫ আগস্ট) বেলা তখন ১২টা ৫০ মিনিট। জুমার নামাজের সময়। এই সময়ে একজন হিন্দু মানুষ হাইল্যান্ড অ্যাভিনিউ এবং ১৬৮ প্লেসের ওখানে দাঁড়ানো ছিলেন। এটি জেএমসি মসজিদের কাছেই। একজন অ্যারাবিয়ান পুরুষ ও নারী তার কাছে আসেন এবং জানতে চান মসজিদ কোথায়? ওই লোক মসজিদের অবস্থান বলে দেন। এ সময় একজন মহিলা তার হাত ধরে এবং কিছু একটা স্প্রে করে। তখন ওই মহিলা ওই ব্যক্তির হাত থেকে ব্রেসলেট ও গলায় যেসব গহনা ছিল, সব নিয়ে নেয়। ওই লোকের ঠিক মনে নেই, ওই সময়ে কী ঘটনা তার সাথে ঘটেছিল। তিনি পরে বুঝতে পারেন, তার সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। ততক্ষণে ওই নারী ও পুরুষ সেখান থেকে চলে গেছে। এরপর সেখানে পুলিশ আসে।’
জেএমসি মসজিদ পরিচালনা কমিটির সূত্র জানায়, প্রতারক চক্র মসজিদের আশপাশের এলাকায় ওত পেতে থাকে। কেউ থাকে রাস্তায়, কেউবা গড়িতে। গত রমজানের আগে থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। মসজিদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কমিউনিটির মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য বারবার বলা হচ্ছে। তাদের এটাও বলা হয়েছে, কাউকে সাহায্য করতে হলে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে যেন সহায়তা করা হয়। কিন্তু অপেক্ষমাণ কোনো গাড়ি থেকে কেউ ডাকলে কোনোভাবেই গাড়ির কাছে যাওয়া যাবে না। তবে কেউ এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে অবশ্যই গাড়ির নম্বরটি মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। পারলে গাড়ির কাছে যাওয়ার আগেই গাড়ির নম্বর প্লেটের ছবি তুলে রাখা যেতে পারে। গাড়ির নম্বর থাকলে পুলিশ অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারবে।
এ ব্যাপারে জেএমসির পরিচালনা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ জন্য আমরা বেশ কয়েকবার মসজিদ থেকে মানুষকে সতর্ক করেছি। ফেসবুকেও আমরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার যাতে কেউ না হন, সে জন্য সতর্ক থাকতে বলেছি। মানুষকে সতর্ক করার পরও অনেকে সরল বিশ্বাসে গাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের সাহায্য করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ আমাদেরকে ছবিও দেখিয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের চিনতে পারিনি। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারি আফতাবুল ইসলাম বলেন, জ্যামাইকার একাধিক স্ট্রিটে গত রমজানের পর থেকে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। ফলে বারবার মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে আমরা মানুষকে চলাচলের সময় সতর্ক থাকতে বলেছি। এ-ও বলা হয়েছে, ফজর ও এশার নামাজের সময় একা না আসতে। আরও সতর্ক করা হয়েছে, কেউ যাতে পথের মধ্যে দাঁড়ানো কোনো গাড়ি দেখলে সেখানে না থামেন এবং কেউ ডাকলে গাড়ির কাছে না যান। কারণ যারা দামি গাড়িতে চড়েন, তাদের অবশ্যই মোবাইলে ইন্টারনেট আছে এবং গাড়িতেও জিপিএস সুবিধা আছে। সুতরাং তিনি যেতে চাইলে জিপিএস দিয়েই যেতে পারেন। কাউকে জিজ্ঞাসা করে রাস্তা চেনার কোনো প্রয়োজন নেই।