দেশের রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে। তরুণদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। গত কয়েক সপ্তাহে দুই দলের শীর্ষ নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন যে আলোচনা ইতিবাচক এবং ফলপ্রসূ হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি উভয় দলেরই জন্ম হয়েছে ছাত্র আন্দোলন থেকে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল, আর ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত হয় এনসিপি। এই দুই দলের নেতাদেরই দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের মাঠে একসঙ্গে দেখা গেছে, যা তাদের একীভূত হওয়ার পথ তৈরি করেছে।
সম্প্রতি ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে এই দুই দলের সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবি হয়। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মনে করেন, তরুণদের মধ্যে বিভাজনই এর প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, তরুণরা যখন বিভাজিত থাকবে তখন তারা সফল হতে পারবে না। গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়েছে কারণ আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করেছি। এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই তারা এখন এক হয়ে কাজ করতে আগ্রহী। এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ নিবন্ধিত দল হলেও এনসিপি এখনও নিবন্ধন পায়নি। কীভাবে একটি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে একটি অনিবন্ধিত দল এক হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, গণঅধিকার পরিষদ তাদের দলে যোগ দেবে এবং এনসিপির নামই বহাল থাকবে। তবে তিনি এও বলেছেন যে, দলটির নেতৃত্ব ‘কালেক্টিভ লিডারশিপ’-এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যেখানে নুরুল হক নুর ও নাহিদ ইসলাম-এর মতো নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, এই দুই দলের চিন্তাধারা একই রকম এবং তাদের এক হওয়া স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এনসিপি হয়তো বুঝতে পারছে যে তাদের নিজেদের মাটি শক্ত করা খুব জরুরি, বিশেষ করে যখন অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হতে পারে। একইসাথে, নুরুল হক নুরের জনপ্রিয়তা এনসিপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হতে পারে।
এই একীভূতকরণের মাধ্যমে দুই দলই আগামী নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।
অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, এককভাবে উল্লেখযোগ্য আসন না পেলেও, কোনো বড় দলের সঙ্গে জোট হলে তারা কিছু আসন নিশ্চিত করতে পারবে। নতুন দলটি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মীয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করতে চায়। সূত্র: বিবিসি বাংলা
ঠিকানা/এএস