বহুল প্রতীক্ষার অবসান। যানজট কমাতে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হচ্ছে আজ ২ সেপ্টেম্বর (শনিবার)। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন থেকেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে এই অংশ। কাওলা থেকে যানজট এড়িয়ে প্রাথমিকভাবে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে যানবাহন চলবে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে। এতে এই অংশের ১১ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দেয়া যাবে মাত্র ১০ মিনিটে। যার ফরে যানজট আর ভোগান্তি থেকে ঢাকাবাসীর স্বস্তি মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত পুরো প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমবে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের দেশব্যাপী নানা উন্নয়ন কর্মসূচির কারণে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন আগের চেয়ে বেড়েছে। শিগগিরই মেট্রোরেলের মতিঝিল পর্যন্ত অংশটি চালু হবে।
উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেল-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ উন্নয়নের সুবিধা পাবে ঢাকাবাসী।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ইতিমধ্যেই তা প্রমাণ করেছে। দেশের মানুষ এখন কথা শুনতে অভ্যস্ত নয়, কাজ দেখতে অভ্যস্ত। আওয়ামী লীগ কথা দিয়ে কথা রাখে সেটা সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রমাণিত। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট এখন ১০ মিনিটের ব্যাপার উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট-তেজগাঁও রেল স্টেশন পর্যন্ত ১০-১১ মিনিটে কভার করবে। এখানে অনেক যাত্রী আসা-যাওয়া করবেন। এর সুফল অবশ্যই পাবে রাজধানীবাসী। এরসঙ্গে যখন মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত উদ্বোধন হয়ে যাবে, তখন সুফল অনেক বেড়ে যাবে এবং ঢাকা আরও আধুনিক শহরে রূপ নেবে। যান চলাচল আরও সহজ হবে।
আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাওলা অংশে প্রকল্পটির উদ্বোধন ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে শেরে-ই-বাংলা নগর পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। বিকাল ৪টায় সেখানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন ও মোনাজাত হবে। মোনাজাতের পর সেখানে ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প’ সম্পর্কিত ভিডিও প্রদর্শন করা হবে। এরপর অতিথিরা তাদের বক্তব্য দেবেন। বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মধ্যদিয়ে এদিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে।
কাওল থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১.৫ কিমি মেইন লাইন এবং ১১ কিমি র্যাম্পসহ অংশটির দৈর্ঘ্য হবে ২২.৫ কি.মি। প্রাথমিকভাবে এই অংশের ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প খোলা হবে। বনানী ও মহাখালীর র্যাম্প নির্মাণ শেষ হলেই খুলে দেয়া হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮,৯৪০ কোটি টাকা, এতে ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ) তহবিল ২,৪১৩ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশ সরকার প্রদান করবে। ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড বিনিয়োগকারী কোম্পানি। এতে ইতালীয় থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার রয়েছে ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) শেয়ার ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রকল্প অনুযায়ী, প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯শে জানুয়ারি ২০১১ এবং পর্যালোচনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৫ই ডিসেম্বর, ২০১৩ এবং প্রকল্প সমাপ্তির সময়কাল ছিল জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০২৪। বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। 
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বেশকিছু অবকাঠামো প্রকল্প শুরু হয়েছে। আকার, বাজেট এবং অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে এই প্রকল্পগুলোর অনেকগুলোকে মেগা-প্রকল্প বলা হয়েছে। সরকার তাদের কয়েকটিকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি লাইন-৬ এবং চন্দ্রা-এলেঙ্গা চার লেন মহাসড়ক সম্পন্ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এবং দীর্ঘতম আন্ডারওয়াটার রোড টানেল, শিগগিরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পথচারী চলাচল করতে পারবে না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট পর্যন্ত চার ক্যাটাগরিতে বাহনগুলো থেকে নেয়া হবে টোল। গাড়ি, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) ও হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) জন্য টোল ৮০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের জন্য (৬ চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা। ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা। আর সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) জন্য টোল ১৬০ টাকা।
ঠিকানা/এসআর
                           
                           
                            
                       
     
  
 


 ঠিকানা অনলাইন
 ঠিকানা অনলাইন  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                